বিপ্লব সাহা, খুলনা ব্যুরো:
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তোপের মুখে সরকার পতনের মধ্য দিয়ে নতুন দিনের শুভ সূচনার লক্ষ্যে গতকাল বঙ্গভবনে নোবেল বিজয়ী ডক্টর ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী কালীন সরকার গঠন করতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুইজন সমন্বয় এবং দেশের বিশিষ্ট সর্ব গ্রহণযোগ্য ১৬ জন গুণী ব্যক্তিদের নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ শপথ গ্রহণ করলেও দেশজুড়ে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে সংখ্যালঘুরা। যদিও নবগঠিত অন্তর্বর্তীকালীন উপদেষ্টা পরিষদের সকল উপদেষ্টাগণ সকল আলোচনার শীর্ষে দেশের সংখ্যালঘুদের জীবনের নিরাপত্তার বিষয়ে বারবার আলোকপাত করে সকল ধরনের নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বলেছেন। তবুও তাদের অভিযোগ সংখ্যালঘুরা কোন আশ্বাসেই মানসিকভাবে শান্তি পাচ্ছে না। কারণ এদেশের সংখ্যালঘুরা কখনো নিরাপত্তায় ছিল না আজও নাই। সংখ্যালঘুদের সুস্থ নিরাপদ ভবিষ্যৎ বলে কিছুই নাই। জীবনভর পরিশ্রম করে যেমন তেমন একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কোনরকম মাথা গোজার ঠাই তৈরী করলেই ক্ষমতাশীল সংখ্যাগরিষ্ঠদের কুনজরের লালসায় কষ্টার্জিত সর্বস্ব হারায়ে চোখের জলে দেশ ছাড়তে হয়। তবে মাঝে কিছুদিন শান্তিতে থাকলেও হঠাৎ করে গত ৫ আগস্ট সোমবার মধ্য দুপুরে হাসিনা সরকার পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পলায়ন করার সাথে সাথে দেশের সর্বসাধারণ বিজয় উল্লাসে মেতে উঠলেও একই সাথে সারা দেশ জুড়ে সৃষ্টি হয় বিশৃঙ্খলা। শুরু হয় সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্মম নির্যাতন। দেশের ৬৪ জেলার কোথাও বাকি নাই হিন্দুদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ প্রতিমা ভাঙচুর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লুটপাট নারী ধর্ষণ এমনকি গ্রামাঞ্চলের অনেক অসহায় হিন্দু পরিবারদের ভিটেবাড়ি ছাড়া করেও ক্ষান্ত হয়নি হামলাকারীরা।
ফলে ভয়ে দুশ্চিন্তা সংকট আতঙ্কে চোখের ঘুম হারাম করে দিন কাটাচ্ছে। আবার অনেক পরিবার ইতোমধ্য দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অপরদিকে দেশের বিভিন্ন সীমান্তের জিরো পয়েন্টে জড়ো হয়েছে হাজার হাজার নারী-পুরুষ। মায়া মমতা ত্যাগ করে ছেড়ে যাচ্ছে কয়েক পুরুষের বসতভিটা। ঘৃণা ক্ষোভে দেশের সকল হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের কথা সর্বক্ষেত্রে কেন আমাদের প্রতি এত নির্মম অত্যাচার নির্যাতন আমরা কি এদেশের নাগরিক না আমরা তো এদেশের কারোর ধন-সম্পত্তি লুটপাট করে ঘাটি গেরে বসে আছি এমন কোন নজির নাই।
১৯৭১ সালের দেশ স্বাধীনের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অনেক হিন্দু পরিবার হিন্দু সন্তানরা অংশগ্রহণ করে স্বাধীনতা অর্জনের ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। এবার ২৪ সালেও অসংখ্য হিন্দু ছাত্র সাংবাদিক ব্যবসায়ী সহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষেরা শত স্ফূর্তভাবে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছে। তাহলে আমাদের অপরাধ কোথায় আমরা কেন এত নির্যাতন সহ্য করব।
পাশাপাশি দেশে এত সয়-সম্পত্তি থাকতেও কেন আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের সম্পত্তির ওপর আপনাদের নজর। এ ধরনের হীনপ্রবৃতি মানসিকতা স্বাধীন দেশের সভ্য জাতিদের হতে পারে না। দেশ স্বাধীনের পর থেকে এমন অত্যাচার নির্মম নির্যাতনের কারণে অসংখ্য হিন্দু পরিবার দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। তাই বাকি হিন্দুরাও এদেশের হীনপ্রবৃতি পিচাস মানুষদের রোষানলে না থেকে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই দেশ ত্যাগ করে ভারত অথবা বিভিন্ন রাষ্ট্রে গন্তব্য খুঁজে নেবে। তখন আপনারা নিজেরাই হানাহানি কামড়াকামড়ি করেন আর আপনাদের এই নৈতিকতা দেখে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশ হাসবে ধিক্কার জানাবে ঘৃণা করবে।আর সেটাই আপনাদের প্রাপ্য হওয়া উচিত। আজ আপনারা বিশ্ববাসীকে দেখানোর জন্য মৌলবাদী মুসলমানরা মন্দির পাহারা দিবে কেনো আপনাদের এই কর্মকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে পাগলের সাঁকো নাড়ানো গল্প মনে করে দিচ্ছেন বিশ্ববাসীকে বুঝিয়ে দিচ্ছেন সংখ্যালঘুদের কত অসহায় কত আতঙ্কের মধ্য জীবন পার করতে হয়। অথচ আপনারা ঘটা করে সাংবাদিকদের সামনে সাক্ষাৎকার দিয়ে বলেন এদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের ওপর হামলা নির্যাতন সম্পত্তি লুটপাট থেকে বিরত থাকুন এবং পাশে থেকে তাদের রক্ষা করবেন। আর যখনই আপনারা এ ধরনের বক্তব্য গুলো জুড়ালো কন্ঠে আওড়ান ঠিক তারপর মুহুর্তেই সংখ্যালঘুরা আরো বেশি নির্যাতনের শিকার হয়। এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষরা সংখ্যালুদের কখনো এ দেশের নাগরিক হিসেবে মানতে পারেনি মানছে না ভবিষ্যতেও মানবে না। কারণ দেশের শিক্ষিত অশিক্ষিত ছোট-বড় বয়স্ক সবার মুখে মালাউন শব্দটা অতি প্রচলিতভাবে চলে আসছে অথচ এ শব্দটির প্রকৃত অর্থ তারা বোঝেনা। আপনারা যে যতই সত্য কথা বলুন না কেন আপনাদের ভিতরেই লুকিয়ে থাকা কিছু কুৎসিত মানুষেরা দেশে কোন কারনে কোন ক্ষেত্রে হানাহানি হলেই সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি দখল করার নেশায় মত্ত হয়ে ওঠে।আর এগুলো আপনারা জানতে পারেন বুঝতে পারেন তারপরেও তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রতিকার ব্যবস্থা নেন না। দেশের ইতিহাসে এমন কোন নজির নাই যারা হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের সম্পত্তি লুট করছে নির্যাতন করছে তাদের শাস্তি হয়েছে। জেল হয়েছে, ফাঁসি হয়েছে আপনাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষদের। যদিও লোক দেখানোর স্বার্থে সাময়িক সময়ের জন্য তাদের আটক করা হয়েছে কিন্তু সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতে আইনের ফাক ফোঁকর দিয়ে মুক্ত করে দেন পেছন দরজা দিয়ে।
ফলে পরবর্তীতে তারাই বেরিয়ে এসে আরো অকথ্য নিষ্ঠুর নির্যাতন শুরু করে। তখন আর কোন উপায়ান্তর সংখ্যালঘুদের থাকেনা ফলে রাতের আঁধারে সয় সম্পত্তি রেখে জীবন বাঁচানোর তাগিদ ও মান সম্মান রক্ষা করতে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়। আর এই অকথ্য নিষ্ঠুর নির্মমতা এ দেশ থেকে কখনো বিলুপ্ত হবে না।