বিপ্লব সাহা, খুলনা ব্যুরো:
কোন প্রকারে হুশিয়ারি সংকেত ছাড়া ভারতের শিষ্টাচার বৈষম্য নীতিতে ফারাক্কার বাঁধ খুলে দেওয়ায় বাংলাদেশের ১৩ জেলার লাখ লাখ গৃহবাড়ি পানির নিচে সাথে বাদ পড়েনি খুলনা জেলার দক্ষিণ অঞ্চলের নদী বন্দর সমূহ পশুর নদীসহ খুলনা জেলার বেষ্টনী ভৈরব আঠারোবেকি নদীতে পানি বেড়েছে তিন থেকে চার ফিট প্লাবিত হয়েছে বেশ কয়েকটি উপজেলা । তার মধ্যে সবথেকে বেশি ভয়াবহ কুমিল্লা নোয়াখালী ফেনী কক্সবাজার সহ ওই অঞ্চলের প্রায় ১১ টি জেলা। আজকের দিনের শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আকস্মিক এই বন্যার কারণে মৃত্যু হয়েছে অসংখ্য মানুষ ও গবাদি পশুর। কচুরিপানার মত ভেসে বেড়াচ্ছে পানিতে অসহায় প্রাণ।পানির স্রোতে ভেঙে গেছে নদী অঞ্চলের অসংখ্য বেড়ীবাঁধ ফলে প্লাবিত গ্রামের পর গ্রাম জীবন বাঁচানোর আত্মচিৎকার ভারী হচ্ছে আকাশ বাতাস পানিতে ভাসছে লাশ তবে এরই মধ্য বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিজ্ঞ কর্তাগণ সুখবর দিয়ে জানিয়েছেন বৃষ্টি কমলে বন্যার পানিও ধীরে ধীরে কমতে শুরু করবে তবে সাত আট দিনের মধ্যে কিছুটা হলেও স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরবে।
তবে স্মরণকালের ভয়ার্ত বন্যার কবলে নিমজ্জিত দেশ মুহূর্তের মধ্য বিলুপ্ত হয়ে গেছে লাখ লাখ ঘরবাড়ি পানির স্রোতে ভেসে যাচ্ছে গবাদি পশু অসংখ্য মানব জীবন কোথাও মাথা গোজার অবশিষ্ট একটুও উঁচু ভূমি নাই। নাই কোথাও আশ্রয় কেন্দ্র ক্ষুধার্ত মানুষ সাথে খাবার নাই, শুধু বাঁচার আর্তনাদ অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন সাথে সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ, আনসার ভিডিপি সহ সকল শ্রেণীর মানুষ বন্যা কবলিত অসহায় মানুষদের উদ্ধারকাজে এগিয়ে এসেছে। যতদূর চোখ যায় শুধু পানি আর পানির আগ্রাসনে ইতিমধ্য গ্রাস করেছে ফেনী কুমিল্লা কক্সবাজার নোয়াখালী দক্ষিণবঙ্গের বরিশাল কুয়াকাটা সাথে খুলনার উপকূলীয় উপজেলা পাইকগাছায় বেরিবাদ ভেঙে প্রায় ১৩ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে শুক্রবার দুপুরে উপজেলা বেলুটি ইউনিয়নের কালিনগর গ্রামের রেখামারি খালের গোড়ার দিকে বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়।
স্থানীয় লোকজন জনপ্রতিনিধি ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায় কালিনগর গ্রামের পাশেই রয়েছে ভদ্রা নদী। দুপুরের দিকে সেখানে পাউবোর ২২ নম্বর ফোল্ডারের উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধের প্রায় ৯০ ফুটের মতো অংশ ভেঙে যায়। এ সময় ওই ফোল্ডারের ভেতরে থাকা ১৩ টি গ্রামের মধ্যে পানি প্রবেশ শুরু করে। প্লাবিত গ্রামগুলো হল কালিনগর, দারুনখালি, খেজুরতলা, সেনেরবেড়, হাটবাড়ি, ফুলবাড়ি, বাঘের দানা, দুর্গাপুর, হরিনখোলা ও নোয়াই। এদিকে চার নম্বর দেলুটি ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য পলাশ রায় শুক্রবার সন্ধ্যায় বলেন ইতিমধ্য বেড়িবাঁধের একটি অংশে ফাটল ছিল বলে শুনেছিলাম। তবে শুক্রবার সকালে লোকজন নিয়ে সেটি দেখতে গেলে আমার চোখের সামনেই বাঁধ ভেঙে যায়। এরপর এলাকার জনপ্রতিনিধিদের জানালাম। এই পোল্ডারের আওতায় থাকা পাঁচটি ওয়ার্ডের মন্দির মসজিদ যত মাইক আছে সেগুলো দিয়ে খবরটা প্রচারের ব্যবস্থা করি। এরপর আমরা স্থানীয় লোকজন নিয়ে বাঁধগুলো সংস্কারের চেষ্টা করি। সাথে সাথে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানালে তাদের প্রতিনিধিরাও আসেন ২০০ বাঁশ আনা হয়েছে দুটি মাটি কাটার যন্ত্র (ভেকু) দিয়ে কাজ চলমান আছে। এ সময় তিনি আরো বলেন ১৩ টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়ায় এখানকার গ্রামের সব চিংড়িঘেরও ফসলি জমি তলিয়ে গেছে বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবাই খুব আতঙ্কে রয়েছে। এর আগে চলতি বছরের ২৭ মে ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসের কারণে ২২ নম্বর পোল্ডারের গোপী পাগলা গ্রামের বাঁধ ভেঙ্গে এই ১৩ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ২২ নম্বর ফোল্ডারের মধ্য পড়েছে। এদিকে দেলুটি ইউনিয়নটি পড়েছে খুলনা পাউবো সংরক্ষণ ও পরিচালনা বিভাগ- ২- এর আওতায়। ওই বিভাগের দায়িত্বরত নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আশরাফুল আলম বলেন ২২ নম্বর পোল্ডারের আয়তন প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর। তবে ভদ্রা নদীর ৩০ মিটারের মতো ভেঙ্গে ওই এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পাউবোর কর্মকর্তারা বলেছেন চেষ্টা করে পানি আটকানোর জন্য সকল ধরনের বন্দোবস্ত করে পুরোদমে কাজ চালানো হচ্ছে।