বিপ্লব সাহা, খুলনা ব্যুরো:
আজ রমজানের দ্বিতীয় দিন অতিবাহিত হতে চলেছে অথচ খুলনার মার্কেট শপিংমল গুলো শুনশান নিরবতা কোথাও কোনো ক্রেতা সমাগম নাই।
তবে রোজা শুরুর আগে থেকে অল্পস্বল্প কিছু ক্রেতাদের আনাগোনা দেখা গেলেও বর্তমান দুই তিন দিন যাবৎ খুলনার বিলাসবহুল মার্কেট শপিংমল গুলোয় একেবারেই বেচাবিক্রি নাই
এক্ষেত্রে বেশি হুমকির মুখে তৈরি পোশাক টেলারিংসপ ও থান কাপড়ের ব্যবসায়ীরা।
একদিকে রমজান আসলে যেমন শ্রমিকদের দ্বিগুণ বেতন ইফতারির খরচ সহ আনুষঙ্গিক অনেক চাপে থাকতে হয় সাথে নিজের সংসার সবকিছু মিলে সামাল দিতে গিয়ে হিমশিম খাওয়ার উপক্রম তারপর যদি আবার ব্যবসায় বিরাজ করে চরম মন্দা অবস্থা ফলে ব্যবসায়ীদের গুনতে হবে লোকসান।
গচ্ছিত চালান পুঁজি ভেঙে খেতে খেতে অবশেষে হুমকির মুখে ব্যবসা
এক্ষেত্রে দোকান ব্যবসায়ীরা বলছে সারা বছর যেমন তেমন রমজান মাস জুড়ে যদি ক্রেতা সমাগম না থাকে তাহলে আমাদের ভবিষ্যতে অন্ধকার কারণ রমজান মাসকে ব্যবসার প্রধান মৌসুম হিসেবে প্রতিটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যেকোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে চড়া সুদের অর্থ ঋণ কর্জ্য করে হলেও দোকানে মালের যোগান দিতে কার্পণ্যতা করে না ব্যবসায়ীরা।
তবে সেইলক্ষ্যমাত্রা অনুপাতে বেচা বিক্রি না হলে দৈনন্দিন খরচ খরচার চাঁপে ধরে রাখা সম্ভব হবে না মূলধনসহ লভ্যাংশ।
দেশের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য থেকে শুরু করে সকল কিছুর দাম উর্ধ্বমুখী এবং অর্থনৈতিক অবস্থা চরম বিপর্যায়ে থাকার প্রভাব পড়েছে সকল ধরনের বিলাসী পণ্য ব্যবসার ওপর।
অথচ লম্বা হচ্ছে প্রতিদিনের খরচের খাতা সেই অনুপাতে বাড়ছে না ব্যবসায়ীদের উপার্জন সাথে রয়েছে মাসিক ব্যাংকের কিস্তি বছর ঘুরতে না ঘুরতে রীতিমতন সরকারকে দিতে হচ্ছে ট্যাক্সসহ আনুষাঙ্গিক অনেক কিছু।
এসব কথা বলেছেন খুলনা আক্তার চেম্বার ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি ও সাবেক ২৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শমসের আলী মিন্টু।
এ সময় তিনি আরো বলেন একে তো দেশজুড়ে বেশ কিছুদিন যাবৎ রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ব্যবসা সহ সাধারণ মানুষের জনজীবনের ওপর প্রভাব বিরাজ করছে তারপর আবার আমাদের খুলনা শিল্পাঞ্চলের অধিকাংশ রাষ্ট্রায়ত্ব ও ব্যক্তি মালিকানা শিল্পকল কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে সিংহভাগ শ্রমিকরা বেকার হয়ে যাওয়ার ফলে ইদ ও রমজানের আমেজ হ্রাস পেয়েছে বেকার শ্রমিকদের মনে ।
এলক্ষ্যে খুলনার অধিকাংশ বিলাসবহুল মার্কেট ও শপিংমল এলাকায় সরজমিনে গিয়ে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের মালিকদের অভিযোগসূত্রে একই অভিযোগের তথ্য উঠে এসেছে। এবং সরজমিনের চিত্র বাস্তবতা পরিলক্ষিত হয়েছে।
খুলনার কেডিএ নিউমার্কেট, শপিং কমপ্লেক্স, জলিল টাওয়ার, রেলওয়ে বিপনী বিতান আক্তার চেম্বার, মালেক চেম্বার, খাজা খানজাহান আলী হকার্স মার্কেট, নিক্সন মার্কেট হ্যানিওম্যান সুপারমার্কেটসহ শিববাড়ি থেকে সোনাডাঙ্গা পর্যন্ত শত শত দোকান ঘুরে হাতেগোনা কয়েকটি ক্রেতাদের আনাগোনা দেখা গেলেও তার মধ্যে অধিকাংশ ক্রেতারাই পণ্য দেখে দামে দরে বনিবনা না হওয়ার কারণে পণ্য না কিনে ফিরে যাচ্ছে।
এক্ষেত্রে ক্রেতাদের অভিযোগ সাধারণ নিত্য পণ্যের দাম তো ঊর্ধগতিতে রয়েছেই পাশাপাশি বিলাসবহুল মার্কেট গুলোতে
যে পণ্যগুলো পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো আগের তুলনায় তিন থেকে চতুর্গুন দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ফলে সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে স্বাদ ও সাধ্যের সামঞ্জস্য না থাকায় বর্তমান প্রেক্ষাপটে মানুষের কাছে সবকিছুই দুর্লভ বস্তু হয়ে পড়েছে।
এদিকে বাংলাদেশের অন্যতম ব্রান্ড সপ ইজির খুলনা ব্রাঞ্চের ম্যানেজার তৌফিক বলেছেন বাংলাদেশের ৬৪ জেলার অধিকাংশ জেলা শহরগুলোতে আমাদের শাখা রয়েছে সেসব শাখা গুলোতে তুলনামূলক বেচাকেনা হলেও খুলনা শাখার বেচাকেনা বর্তমানে একেবারেই জিরোর কোঠায় এতে কর্মচারীর ঈদ বোনাস তো দূরের কথা তাদের মাসিক বেতন ও প্রতিদিনের বিদ্যুৎ বিল যা আসে সে পরিমাণে বিক্রিও করতে পারছিনা ফলে লোকসানের আশঙ্কায় প্রতিষ্ঠান ।
এদিকে খুলনা কেডিএ নিউমার্কেটের দোকান মালিক সমিতির সভাপতি গফফার বিশ্বাস বলেছেন আমাদের দক্ষিণ বাংলার খুলনা শহরটি ছিল একসময় শিল্পনগরীতে পরিণত এখন সেগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে রুগ্ননগরীতে পরিণত হয়েছে। তার সাথে দেশের অন্যতম মেঘা প্রকল্প পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে খুব অল্প সময়ে রাজধানীতে পৌঁছানোর স্বার্থে অনেক নামিদামি ক্রেতারা খুলনা থেকে শপিং না করে ঢাকার উদ্দেশ্যে চলে যাচ্ছেে।
এতে করে দেশের বৃহৎ স্বার্থ সিদ্ধি হলেও খুলনার বিলাসবহুল মার্কেট গুলো থেকে বেচা কেনার বৃহৎ একটি অংশ রাজধানী মুখি হয়েছে। ফলে টানা দের দুই বছর যাবৎ মার্কেট শপিং মলের ব্যবসায়ীরা কোটি কোটি টাকা পুঁজি খাটিয়ে ও তুলনামূলক ক্রেতা সমাগম না থাকায় ব্যবসায়ীরা চালান খেতে খেতে অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে ঋণগ্রস্ত হয়ে অবশেষে দেউলিয়া হয়ে ব্যবসা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে।
পাশাপাশি খুলনা ব্যবসায়ী ফেডারেশনের অন্যতম সদস্য মোঃ মফিদুল ইসলাম টুটুলও একই মন্তব্য করে বলেছেন অদৃশ্য বৈশ্বিক মহামারী করোনা সংক্রমণলগ্ন থেকে আজ অব্দি ব্যবসার অবস্থা একেবারেই সংকটাপন্য নাজুক অবস্তা বিরাজ করছে ব্যবসায়ীদের মাঝে।
এক কথায় কোটি কোটি টাকা চালান বুঝি খাটিয়ে ও মানসিক শান্তিতে নাই খুলনার ব্যবসায়ীরা তার মূল কারণ দক্ষিণাঞ্চলের মৎস্য ব্যবসা থেকে শুরু করে বিদেশের রপ্তানির যোগ্য বেশ কিছু ব্যবসায় ধ্বস নেমেছে সাথে অসংখ্য শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খুলনার উল্লেখযোগ্য একটি অংশ বেকার জীবনে পতিত হয়েছে।
তারপর আবার রয়েছে দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতির মৌলিক প্রভাব এতে করে সাধারণ মানুষের জীবন বাঁচানো হয়ে পড়েছে দায় সেক্ষেত্রে মানুষ এখন খেয়ে বাঁচার থেকে ও বিলাসিতাকে বড় মনে করছে না।
অতএব সবকিছু মিলেমিশে ব্যবসায়ীরা আছে কঠিন খারাপ অবস্থায়।
 
        
 
                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
								                                                                                     
                                     
                                 
                                 
                                 
                                 
                                