বিপ্লব সাহা, খুলনা ব্যুরো
বাংলার মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়া একজন অবিসংবাদিত নারী যিনি নারী সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও অজ্ঞান অন্ধকার থেকে পরিত্রাণের পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করে গেছেন অবিচলিতভাবে, রুখেছেন পুরুষ শাসিত নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে, প্রতিষ্ঠিত করেছেন নারীদের সামাজিকভাবে, সামাজিক সকল বৈষম্যতা উপেক্ষা করে গনজাগরণে জাগিয়েছেন নিপীড়িত নির্যাতিত সকল নারীদের, পাশে থেকেছেন মহীয়সী বেগম রোকেয়া। যিনি অজপাড়াগাঁও বাংলার প্রত্যন্তঅঞ্চল রংপুর মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ গ্রামে ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। যখন বেগম রোকেয়ার জ্ঞান সমৃদ্ধি বয়সে পদার্পণ করেন তখনই নারীদের অশিক্ষা তাকে ব্যথিত করে এবং তারই সূত্র ধরে মুসলিম সমাজের মেয়েদের লেখাপড়া শেখানোর কোন প্রচলন না থাকায় বেগম রোকেয়া অসংখ্য পরিবারের অগোচরে বেশ কিছু মুসলিম মেয়েদের তারই বড় ভাইয়ের কাছে আরবি ফারসি পড়তে এবং লিখতে শেখানোর জন্য সহযোগিতা করেন। একপর্যায়ে ওই সকল মুসলিম মেয়েদের লেখাপড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহ জেগে ওঠে ।
আর এই বাঙালি নারী জাগরণের পথিকৃত বেগম রোকেয়া বিবিসি বাংলার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি তালিকায় অন্যতম বীর যোদ্ধা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। তারই ধারাবাহিকতায় প্রতিবছর ৮ ডিসেম্বরে পালিত হয় বেগম রোকেয়া দিবস। একই সাথে এ দিবস টি সরকারিভাবে পালিত হয় একটি জাতীয় দিবস হিসেবে তারই ধারাবাহিকতায় খুলনায় বিভিন্ন আঙ্গিকে বেগম রোকেয়া স্মরণে বেগম রোকেয়া দিবস পালিত হচ্ছে।
ইতিহাসের স্মরণকালের নারী জাগরণ সমৃদ্ধির অন্যতম নেত্রী বেগম রোকেয়াকে শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করে খুলনা সুশীল সমাজের বিভিন্ন জ্ঞানী ব্যক্তিরা বলেন বেগম রোকেয়া নিজেকে অশিক্ষিত অজ্ঞানতার অন্ধকারে নিমজ্জিত না থেকে সুশিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়ে নিজেও অন্যান্য নারীদের জ্ঞানের আলোয় পথপ্রদর্শক হিসেবে জ্ঞানে ভূষিত করার লক্ষ্যে তিনি এবং তানার বড় ভাই গ্রামের অশিক্ষিত মুসলিম নারীদের আলোয় আলোকিত করতে শুরু করেন, এবং নারীদের জীবনে শিক্ষা লাভ ও মূল্যবোধ গঠনে বেগম রোকেয়ার বড় ভাই ও বড় বোন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছিলেন। পরবর্তীতে নারী শিক্ষার হাল ধরেন তার স্বামী সাখাওয়াত । উল্লেখ্য ১৮৯৮ সালে বিহারের ভাগলপুরে শহীদ সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে বিয়ে হয় রোকেয়ার। স্বামী সাখাওয়াত হোসেন ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন একজন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। তানার ও চিন্তাধারা ছিল সমাজ সচেতন কুসংস্কার মুক্ত এবং প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন, ফলে স্বামীর উৎসাহ ও নিজের আগ্রহ রোকেয়া উচ্চশিক্ষা শিক্ষিত হয়ে ওঠেন।বেগম রোকেয়া শুধু নিজেই জীবনে শিক্ষিত হতে চাননি রোকেয়া চেয়েছিলেন শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে পুরো নারী সমাজকে। তিনি তার লেখা সুলতানার স্বপ্নের মাধ্যমে স্বাগত জানিয়েছেন বাংলার অবরোধবাসিনী নারীদের জেগে ওঠার। একপর্যায়ে স্বামীর মৃত্যুর পর রোকেয়া তার সম্পত্তি দিয়ে নির্মাণ করেন বেশ কয়েকটি নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যা ১৯০৯ সালে যাত্রা শুরু করে রোকেয়া বেগম প্রথম নির্মিত স্কুল সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল। সে ক্ষেত্রেও নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে মাত্র পাঁচ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু হয় স্কুলটির।নারীদের জন্য নির্মিত রোকেয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই বাংলার পিছিয়ে পড়া নারীদের কাছে পৌঁছে যায় মুক্তির পয়গাম। তার হাত ধরে এই দেশে নারী সমাজ আজ যেমন দেশ পরিচালনার কাজে সফল তেমনি সফল অন্যান্য সেক্টরেও। কুসংস্কার আচ্ছন্ন নারীর সমাজ রোকেয়ার হাত ধরেই আজ বিশ্বের বুকে পুরুষের সঙ্গে সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছেন রাখছেন সফলতার চিহ্ন। জীবদ্দশায় বেগম রোকেয়া সব সময় লড়ে গেছেন নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একজন নারী ও যে মানুষ তাদেরও রয়েছে স্বাধীনতা বেঁচে থাকার অধিকার তিনি প্রথম বলেছেন বলিষ্ঠ কণ্ঠে। তিনি লিখেছেন একধারে প্রাবন্ধিক উপন্যাসিক সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারক অসংখ্য গ্রন্থ্য আপনার লেখা উল্লেখযোগ্য রচনাগুলো এর মধ্যে রয়েছে সুলতানার স্বপ্ন, পদ্মরাগ, অবরোধবাসিনী ইত্যাদি। তার লেখাতে ফুটে উঠেছে নারী জাগরণের গান। নারী সমাজের উন্নয়নে অসামান্য অবদান বেগম রোকেয়া ২০০৪ সালে বিবিসি বাংলার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি ষষ্ট নির্বাচিত হন। শিক্ষার আলোকবর্তিকায় মহীয়সী এই নারী ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর মারা যান। বিশেষভাবে উল্লেখ রয়েছে যে এই মহীয়সী ত্যাগী নারীর জন্ম ও মৃত সময় কাল ভেদে ডিসেম্বরের ৯ তারিখে।