বিপ্লব সাহা, খুলনা ব্যুরো:
খুলনার পাটকল শ্রমিকদের বহু আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে সকল প্রতীক্ষার অবসান ও আশার আস্ফালন কিঞ্চিত হলেও হাতছানি দিয়ে খুলনার বন্ধ হয়ে যাওয়া নয়টি রাষ্ট্রয়াত্ব পাটকলের মধ্য মাত্র দুইটি পাটকল আগামী মাসে ইজারার মাধ্যমে চালু হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও শ্রমিকদের মাঝে বিরাজ করছে চরম অসন্তোষ থাকছে নানান উৎকণ্ঠায়।
কারন শ্রমিকদের কথা পাটকল গুলো যদি ইজারার মাধ্যমে চালু না হয়ে সরকারি ব্যবস্থাপনায় সরকার চালু করতো তাহলে আমরা নিশ্চিন্ত থাকতে পারতাম আমাদের কর্ম আবার ফিরে পাবো।
সম্ভাব্য চালু হওয়া পাটকল দুটির মধ্য রয়েছে জেজেআই ও দৌলতপুর জুটমিল।
ইতোমধ্য পাটকল দুটি হস্তান্তর করা হয়েছে ইজারা গ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের কাছে তারা আগামী মাসের মাঝামাঝি কারখানা দুটি চালু প্রক্রিয়া শুরু করছে বলে জানা গেছে। তবে নতুন ব্যবস্থাপনার ওপর আস্থা রাখতে পারছে না চাকরি-হারা পাটকল দুটির শ্রমিকরা।
এদিকে বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন ( বিজেএমসি) খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের সমন্বয়কারী গোলাম রব্বানী জানান খালিশপুর শিল্পাঞ্চলে অবস্থিত দৌলতপুর জুটমিল ফরচুন গ্রুপকে ইজারা দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো স্পষ্ট করেন গত চার সেপ্টেম্বর কারখানা টি হস্তান্তর করা হয় কারখানা চালুর জন্য এরই মধ্য কাজ শুরু করেছে। তাদের মাসিক ভরা সাড়ে নয় লাখ টাকা এরই মধ্যে ফরচুন গ্রুপ দুই বছরের ভাড়া অগ্রিম দিয়েছে বিজেএমসি কে।
এছাড়া প্রায় দেড় মাস আগে যশোরের রাজঘাট এলাকার জে জে আই জুট মিল ইজারাগ্রহিতা প্রতিষ্ঠান আকিজ গ্রুপেকে হস্তান্তর করা হয়। তারাও আগামী মাসে কারখানাটি চালু করতে পারে চুক্তি অনুযায়ী ৩০ মাসের মধ্যে পাটকল গুলো চালু করতে হবে।
বিজেএমসি সূত্রে জানা গেছে খুলনার ক্রিসেন্ট খালিশপুর ইস্টার্ন এবং যশোরের কার্পেটিং জুট মিল ও ইজারার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
মাসখানেকের মধ্য অনুমোদন মিলতে পারে স্টার ও প্লাটিনাম জুটমিল ইজারা দেওয়ার জন্য আবারো দরপত্র আহবানের প্রক্রিয়া চলছে। তবে আলিম জুট মিলের মালিকানা নিয়ে মামলা থাকায় ইজারার জন্য দরপত্র আহবান করা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে আঞ্চলিক সমন্বয়কারী গোলাম রব্বানী জানান আগে পাটকল গুলোতে যেসব পণ্য উৎপাদন হতো ইজারা গ্রহীতারা এখনো একই পণ্য উৎপাদন করবেন আগে যেসব শ্রমিক কারখানাগুলোতে কাজ করতেন তাদের মধ্য যারা কর্মক্ষম তাদের নিয়োগ দেওয়া হবে কারণ তাদের কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে যদিও নিয়োগের ক্ষেত্রে ইজারা গ্রহিতা প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা রয়েছে ।
তিনি আরো বলেন বন্ধ মিল চালু হলে শ্রমিক নিয়োগ বিষয়টি নিয়ে ফরচুন গ্রুপ ও আকিজ গ্রুপের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা এ বিষয়ে এখনই কিছু বলতে রাজি হননি । তবে দৌলতপুর জুটমিল কারখানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন বলেন মিল বন্ধের পর তিন বছর পেরিয়ে গেলেও শ্রমিকের বকেয়া টাকা এখনো পরিষদ করা হয়নি। আমাদের দাবি ছিল মিলগুলো আধুনিকায়ন করে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় চালু করা হোক কিন্তু আমাদের দাবি উপেক্ষা করে মিল ইজারা দেওয়া হয়েছে।
তবে পাটকল রক্ষায় গঠিত সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট কুদরত ই খুদা বলেন ইজারার মাধ্যমে নয় রাষ্ট্রীয় মালিকানায় রেখে মিলগুলো আবার চালু করা হোক। এ দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে গত চার সেপ্টেম্বর শ্রমিকরা সভাও করেন।
এদিকে প্লাটিনাম জুট মিল সিবিএর সাবেক সভাপতি খলিলুর রহমান বলেন ইজারার মাধ্যমে মিল চালুর পর আগের শ্রমিকদের নিয়োগ দেওয়া হবে কিনা এবং বেতন কাঠামো কি হবে তা আমরা জানিনা। আমাদের দাবি শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে যেন আগের কর্মকর্তাদের অগ্রধিকার দেওয়া হয়। এছাড়া রাষ্ট্রয়াত্ত থাকাকালে যে বেতন কাঠামো ছিল তা বহাল রাখার দাবি জানান তিনি।
বিজেএমসি সূত্রে জানা গেছে বন্ধ নয়টি মিলের কাছে ২১৪ জন শ্রমিক নগদ ৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা এবং ১৩১৫ জন শ্রমিকের ৭৭ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র পাওনা রয়েছে।
তার মধ্য কিছু সংখ্যক শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা নামের ভুল সহ বিভিন্ন প্রকার জটিলতা থাকায় তারা এখনো সব টাকা পায়নি।
প্রতিষ্ঠানের কর্তারা লোকশানের কারণ দেখিয়ে ২০২০ সালের ২ জুলাই রাষ্ট্রায়ত্ত নয়টি পাটকল বন্ধ করে দিয়েছিল এর ফলে বেকার হয়ে পড়েন প্রায় ৪১ হাজার শ্রমিক কর্মচারী।