জিয়া চৌধুরী (খুলনা প্রতিনিধি)
কোটা প্রথা সংষ্কারের দাবীতে সারা বাংলাদেশ জুড়ে শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন করে আসছিলো তার প্রেক্ষিতে রবিবার (২১ জুলাই) দুপুরে হাইকোট ডিবিশন বেঞ্চের ১৮ সালের দেওয়া কোটার রায় বাতিল করে আপিল বিভাগ সরকারি চাকুরীতে নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার ভিত্তিতে ৯৩% মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৫% ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় ১% প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গ কোটায় ১% রায় ঘোষণা করেন। এই রায় নিয়ে শিক্ষার্থী সহ সর্বসাধারণের মধ্য মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
সরকারি বিএল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রাকিব মোড়ল জানান দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে ও সকল শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে আপিল বিভাগ সন্তষজনক রায় ঘোষণা করেছে। এই রায়ে বাংলাদেশর সকল শিক্ষার্থীরা খুশি। এই জন্য ছাত্রলীগ বিএল কলেজ শাখার পক্ষ থেকে আনন্দ মিছিল করবো। আমরা আমাদের নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে নির্ধারিত সময় সকলকে জানিয়ে দিবো।
বিএল কলেজের দর্শন মাষ্টার্সের শিক্ষার্থী আলামিন জানান কোটা সংস্কারের পক্ষে আপিল বিভাগের দেওয়া রায় শিক্ষার্থীদের একটা বড় অর্জন। আমরা আমাদের দাবী আদায় করতে পেরেছি। এই দায়ী আদায়ের জন্য আমাদের অনেক ভাই বোনদের জীবন দিতে হয়েছে ও রক্ত ঝড়াতে হয়েছে। যারা আমাদের ভাইবোনদের জীবন কেড়ে নিয়েছে ও রক্ত ঝড়িয়েছে তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে। তাছাড়া কোটা সংস্কারের আন্দোলনে যারা জীবন দিয়েছে তাদের পরিবারের সদস্যদের চাকরি দিতে হবে ও আর্থিক সহযোগীতা করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের রাজাকারের যে ট্যাগ লাগিয়ে দিয়েছেন সেটা তুলে নিতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে বলে জানান। তিনি আরো বলেন আমাদের ৮ দফা দাবির শুধু মাত্র ১ টা দাবি মানা হয়েছে আরো ৭ টা দাবি রয়েছে। সেগুলোর বিষয়ে সুষ্পষ্ট কিছু বলা হয় নি।
ইবাদ মোড়ল জানান দেশ ও জনগনের কল্যানে আপিল বিভাগ যে রায় ঘোষণা করেছে তাতে আমরা খুশি। এখন শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়া উচিত।
বিএল কলেজের ইংরেজি মাষ্টার্সের শিক্ষার্থী মাহমুদ জানান আপিল বিভাগের এই রায় অর্থহীন। শতশত শিক্ষার্থীদের জীবন ও রক্তের বিনিময়ে এই রায় কিনতে হয়েছে। যারা কোটা প্রথা সংষ্কার আন্দোলনে শহীদ হয়েছে সেই সকল শহীদ পরিবারকে ২০ লক্ষ টাকা করে সহায়তা প্রদান করা উচিত। তাছাড়া আন্দোলনের প্রথম দিকে শিক্ষার্থীদের দাবী মেনে নিয়ে এই রায় ঘোষণা করা উচিত ছিলো। তাহলে এত পরিমান শিক্ষার্থীদের জীবন দিতে হতো না। এতো মায়ের কোল খালি হতো না। আপিল বিভাগের দেওয়া রায় সংসদে পাশ করে, সংবিধান সংশোধন করে পুনরায় সংবিধানে এই রায় লিপিবদ্ধ করতে হবে। যাতে করে আর কেউ যেন আপিল করে এই রায় পরিবর্তন করতে না পারে।
মহানগর ছাত্রলীগের যুগ্ম সাঃ সম্পাদক রেজোয়ান মোড়ল জানান আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা তাদের কাংখিত রায় পেয়েছে। এতে সকল শিক্ষার্থীরা আনন্দিত। তাদের কাংখিত রায়ের কারণে তারা সরকার ও আপিল বিভাগ কে ধন্যবাদ জানিয়েছে।শিক্ষার্থীদের দাবী মেনেই আপিল বিভাগ এই রায় ঘোষণা করে।
এদিকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে আপিল বিভাগ যে রায় ঘোষণা করেছে এটার যেন আর কোন রদবল না হয়। এই রায় যেন স্থায়ী হয়। এই রায় অনুযায়ী যেন চাকুরীতে নিয়োগ দেওয়া হয়। তাহলে আমরা খুশি।
আপিল বিভাগের রায়ে খুশি হয়ে শিক্ষার্থীরা আনন্দ মিছিল বের করার আগ্রহ প্রকাশ করে কিন্তু দেশে কারফিউ জারী থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা আনন্দ মিছিল করতে পারে নি। তবে কারফিউ জারী উঠে গেলে আপিল বিভাগের রায় কে স্বাগত জানিয়ে আনন্দ মিছিল বের করবেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
অভিভাবক, পথচারী, সাধারণ মানুষ ও উৎসুক জনতা বলছে দেশের যে অবস্থা তাতে প্রতিটি মানুষের খুবই কষ্ট হচ্ছে। হাতে গোনা কিছু মানুষ বাদে প্রায় সকল মানুষ আছে মাহা বিপদে। দিন দিন দ্রব্যমুল্যর যে পরিমান দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে সাংসার চালিয়ে, ছেলে মেয়েদের পড়ালেখা শেখানো যাচ্ছে না।
হাজারো কষ্ট উপেক্ষা করে যে সব ছেলে মেয়ে পড়া লেখা শিখেছে তাদের আবার কোটা প্রথার কারণে তেমন একটা চাকরি হচ্ছে না। মুক্তিযোদ্ধা কোটা,পোষ্য কোটা, উপজাতি কোটা, নারী কোটা, জেলা কোটা, প্রতিবন্ধী কোটা সহ রয়েছে হরেক রকম কোটা। সাধারন শিক্ষার্থীরা এই কোটার জালে আটকা পড়ে ছটপট করছে।
এই কোটা প্রথার কারণে সহজে গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের চাকরি হচ্ছে না। সে কারনে তাদের বেকার জীবন পার করতে হয়। এতে করে গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীরা হতাশায় ভোগেন। এই সকল হতাশা থেকে মুক্তির জন্য বাধ্য হয়ে তারা মৃত্যুর পড়োয়া না করে শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমেছে। সরকারের পক্ষ থেকে আপিল বিভাগ কোটা প্রথা সংস্কার করে মেধার ভিত্তিতে ৯৩% তাছাড়া মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৫% ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় ১% ও প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গ কোটায় ১% রায় ঘোষণা করে চাকরির সুযোগ করে দিয়েছে। এটা একটা ভাল ও বাস্তব মুখি উদ্যোগ। এই উদ্যোগের জন্য আমরা আপিল বিভাগ কে ধন্যবাদ জানাই। এই রায়ের কারণে খুব সহজে গরীব পিতা মাতার মেধাবী শিক্ষার্থী সহ সকল মেধাবীরা চাকুরির পাবে এতে দেশ ও জাতীর উন্নতি হবে।
উল্লেখ্য কোটা প্রথা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা খুলনার রাজপথ অচল করে দিয়েছিলো। প্রতিদিন
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা দৌলতপুর নতুন রাস্তা মোড়, খুলনার শিববাড়ী মোড়, জিরো পয়েন্ট, সাচিবুনি সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় অবস্থান করে এবং খুব কম সময়ের মধ্যেই তাদের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে নেয়। তারা ভুয়া, ভুয়া সহ নানা শ্লোগান দিতে থাকে, সকল ভয় ভীতি উপেক্ষা করে ও মৃত্যুকে জলাঞ্জলি দিয়ে, হাতে লাঠি, রড়, জি আই পাইব, প্লাকার্ড, পতাকা হাতে নিয়ে তাদের এই আন্দোলন করতে দেখা যায়।
এতে করে আন্দোলনরত সকল জায়গা ও তার আশ পাশ এলাকা প্রকম্পিত হয়ে উঠে। পথচারী সহ সাধারণ মানুষের মধ্য অতংক দেখা দেয়। খুলনার প্রায় সকল রাস্তা গুলো ছিলো যানবাহন শুন্য।
শহরের প্রায় প্রতিটি জনগুরুত্বপূর্ণ স্থান গুলোতে পুলিশ মোতায়ন করা হয় । আন্দোলনের কারণে
সাধারন পথচারিরা ভুগান্তির মধ্য পড়েন।
এই আন্দোলনের কারণে ব্যবসায়ীদের মধ্য হতাশা দেখা দিয়ে ছিলো। তারা দোকানপাট খুলতে পারছিলো না। বেচাবিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে।