বিপ্লব সাহা, খুলনা ব্যুরো:
পুলিশ ও যৌথ বাহিনী খুলনার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গতকাল ঝটিকা মিছিলে অংশগ্রহণকারী ও মদদদাতা আওয়ামী লীগের ৩৫ নেতাকর্মীকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে ।
উল্লেখ্য আওয়ামী লীগের দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা সহ দলের হাইব্রিড নেতারা ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর সারাদেশে তৃণমূল পর্যায়ের নেতা কর্মীরা আতঙ্কে আত্মগোপনে থাকার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে মাঝেমধ্যে ঝটিকা মিছিল করতে দেখা গেলেও খুলনা ছিল একেবারেই নিরুত্তাপ।
তবে হঠাৎ করে গতকাল ২০ এপ্রিল সারা দেশের সাথে খুলনায় সকাল সাতটা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে কয়েক দফায় ঝটিকা মিছিল বের করে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তারপরপরই বিষয়টি গণমাধ্যম ও নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে।
ফলে খুলনার প্রশাসন মহলকে পরতে হয় সমালোচনা ও চাপের মুখে।
তবে ঝটিকা মিছিলে অংশগ্রহণকারী নেতা কর্মীরা পুলিশ প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিলে ও ফাঁকি দিতে পারেনি সাংবাদিকদের ক্যামেরা আর সেই সকল নিউজের ফুটেজ থেকে সনাক্ত করে গতকাল বিকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নগরী বিভিন্ন স্থান থেকে ঝটিকা মিছিলে থাকা প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ জন বিভিন্ন বয়সের পতীত আওয়ামী লীগ কর্মীদের আটক করতে সক্ষম হয় প্রশাসন।
ঝটিকা মিছিল হওয়ার পরেই খুলনা জেলা বিএনপির সহ অন্যান্য রাজনৈতিক সংগঠন সাংবাদিক সম্মেলন করে সরাসরি প্রশাসনকে দায়ী করেছে বিধায় গতকাল বিকাল থেকেই মহানগরীর পাশাপাশি খুলনা জেলার বিভিন্ন উপজেলায়ও অভিযান চালিয়েছে পুলিশ বাহিনী এবং ২৪ ঘন্টার মধ্যে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ এবং যুবলীগ ও আওয়ামীলীগের অনেক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে। সোমবার সকাল ১০টা পর্যন্ত খুলনা শহরসহ আশপাশ এলাকা থেকে ৩৫ জনকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিয়েছে পুলিশ।এ সময় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জিরোপয়েন্ট এলাকা মিছিলের ঘটনায় ডুমুরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী আলমগীর হোসেনকে গ্রেপ্তার করে হরিণটানা থানা পুলিশ। ফুলতলা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আশরাফুল আলমকে গ্রেপ্তার করেছে ফুলতলা থানা পুলিশ । শিরোমনিতে মিছিলের প্রস্তুতিকালে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী জাকারিয়া রিপনকে আটক করা হয়। এছাড়া সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ নুর ইসলাম, ১৭ নং ওয়ার্ড কৃষক লীগের সভাপতি মোঃ আসিফ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান , ১৬নং ওয়ার্ড গাবতলা ইউনিট আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ আবুজার অনিক, যুবলীগের সদস্য মোঃ রকিবুল ইসলাম , ১৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ মেহেদী হাসান এবং যুবলীগ সদস্য রুহুল আমিনকে আটক করেছে।
সোনাডাঙ্গা থানার এস আই আব্দুল হাই বলেন, রোববার বিকেল ঝটিকা মিছিলের চেষ্টাকালে বিকেলে নগরীর বয়রা মহিলা কলেজের সামনে থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মী মো. ওয়ালিদ হাসান ইমনকে আটক করে পুলিশ। পরে সন্ধ্যার পর সোনাডাঙ্গা মডেল থানা এলাকার বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের আরও কয়েকজনকে আটক করা হয়।
খুলনা সদর থানার এস আই নান্নু মন্ডল বলেন, সদর থানা এলাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আ. রশিদের হাওলাদারের ছেলে মহারাজ হাওলাদার (৫৭), মোজাম্মেল মীরের ছেলে মো. মিলন মীর (৪২) এবং টুটপাড়া মেইন রোড এলাকার মোহাম্মদ হানেফের ছেলে মো. ফরিদ আহম্মেদ (৬৩)কে আটক করা হয়েছে। হরিণটানা থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ খায়রুল বাসার জানান, সকালে হরিণটানা থানা এলাকায় ঝটিকা মিছিল বের হয়। এলাকার সিসি টিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যহত রেখে । তারই ধারাবাহিকতায় বিকেলে ডুমুরিয়া আওয়ামীলীগ নেতা কাজি আলমগীরকে জিরো পয়েন্ট এলাকা থেকে আটক করে পুলিশ।
খালিশপুর থানার অফিসার ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম জানান, খালিশপুর থানায় এলাকায় আওয়ামীলীগ এবং তার সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ মিছিল বের করার চেষ্টা করেন। এ সময়ে ৪ জনকে আটক করা হয়।
রোববার রাতে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া এন্ড সিপি) মোহাঃ আহসান হাবীব জানান, ঝটিকা মিছিলে অংশগ্রহণকারী নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ এবং যুবলীগ ও আওয়ামীলীগের ২৫ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অন্যান্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ সময় তিনি আরো বলেন আওয়ামী লীগ সরকার দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের অন্যান্য জেলায় মাঝেমধ্যে ঝটিকা মিছিল বের হলেও খুলনায় ছিল নিরুত্তাপ তবে হঠাৎ করে গতকাল নগরীর বিভিন্ন স্থানে জটিকা মিছিল বের হয় ফলে খুলনার সাধারণ জনগণ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হঠাৎ করে মিছিল দিয়ে করতে দেখে হতভম্ব হয়ে যায় এবং তারপরই আমরা কঠিন তৎপরতার সাথে অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু কর্মীদের আটক করতে সক্ষম হয়েছে এবং এই চলমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য যা যা করণীয় তা আমরা কঠোর অবস্থানে থেকে করব।