বিপ্লব সাহা, খুলনা ব্যুরো:
চার মাসের ব্যবধানে ১২ খুন খুলনার প্রশাসন সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় সন্ত্রাসীদের লাগাম টানতে ব্যর্থ।
প্রতিনিয়ত ঘটছে খুনখারাবি। চার মাসের ব্যবধানে খুলনা নগরীতে ১২ খুন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সন্ত্রাসীরা সাথে শহর জুড়ে তান্ডব চালাচ্ছে কিশোর মাস্তান দল। আধিপত্য বিস্তার মাদক দখলদারি চাঁদাবাজি সব মিলে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে নগরবাসী, যার ফলে প্রশাসনের দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তুলছে শহরের ভুক্তভোগী সুশীল সমাজ। দিন পেরিয়ে রাতের আঁধার নামতেনা নামতেই বোমাবাজি বন্দুকের গুলির শব্দে আতঙ্কিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। যার ফলে রাত পোহালেই শোনা যাচ্ছে কোথাও না কোথাও সংগঠিত হয়েছে সন্ত্রাসীদের ভাগ বাটোয়ারা আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘাতের তাণ্ডব। এতে প্রাণ হারাচ্ছে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। গেল তিন মাসে নয়টি খুন হওয়ার পর গত ২৪ জানুয়ারী রাতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অর্নব কুমার সরকার নিহত হয়েছে। রাতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গুলির শব্দ পাওয়া গেছে। এর আগে সোমবার ৯ ঘণ্টার ব্যবধানে পৃথক তিনটি স্থানে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। এতে একজন নিহত হন, একজনের আঙুল ও একজনের কবজি কেটে যায়। পুলিশের তথ্য বলছে, গত চার মাসে খুলনা জেলা ও মহানগরীতে ১১টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। গুরুতর জখম হয়েছে অনেক মানুষ। প্রতিটি ঘটনার পেছনে মাদক বিক্রেতা ও এলাকাভিত্তিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযানও চলছে। কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসছে না। বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ ও হতাশ সাধারণ মানুষ। সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পুরাতন রেলস্টেশন এলাকায় নগরীর ২১ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মানিক হাওলাদারকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে জখম করা হয়। বিকেলে তিনি মারা যান। সন্ধ্যা ৬টায় নগরীর আযমখান কমার্স কলেজের ভেতরে সন্ত্রাসীরা নওফেল নামে এক যুবককে কুপিয়ে তাঁর আঙুল বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে নগরীর বয়রা শশ্মানঘাট এলাকায় সজীব শিকদার নামে আরেক যুবককে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়।
এর আগের দিন রোববার রাতে ২৭ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহীনকে লক্ষ্য করে গুলি করে সন্ত্রাসীরা। গুলিটি তাঁর ফুসফুসে আটক গেছে। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক। এমন আহতের তালিকা দীর্ঘ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর পুলিশের মনোবল ভেঙে পড়ে। এ সুযোগে পুরোনো সন্ত্রাসী ও মাদক বিক্রেতারা এলাকায় ফিরে এসেছে। অনেকে কারাগার থেকে ছাড়া পেয়েছে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে তারা সংঘাতে জড়াচ্ছে। বেশির ভাগ থানায় পুলিশের নতুন কর্মকর্তা যোগ দিয়েছেন। স্থানীয় সন্ত্রাসীদের চিনতে তাদের সময় লাগছে। এছাড়া সন্ত্রাসী ও মাদক বিক্রেতাদের গ্রেপ্তারে তাদের আন্তরিকতাও প্রশ্নবিদ্ধ। পুলিশের বিশেষ অভিযানে কয়েকজন সন্ত্রাসী ধরা পড়লেও উঠতিরা গ্রেপ্তার হচ্ছে কম। এতে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আসছে না। নগরবাসীর অভিযোগ, পুলিশ অভিযানের কথা বললেও দৃশ্যমান তৎপরতা চোখে পড়ছে না। বেশির ভাগ এলাকাতেই প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি হচ্ছে। সন্ত্রাসীরা অস্ত্রসহ মহড়া দিচ্ছে। পুলিশকে জানালেও তারা আসছে দেরি করে। সূত্রটি জানায়, নগরীর প্রতিটি এলাকায় পুরাতন মাদক বিক্রেতারা ফিরে এসেছে। ওলি-গলি সয়লাব হয়ে পড়েছে মাদকে। মাদকের নিয়ন্ত্রণ এবং পুরাতন শত্রুতার জেরে অভ্যন্তরীণ সংঘাত বাড়ছে। ধারালো অস্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে এ-কারণেই। বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে সন্ত্রাসীরা। তাদের মধ্যে এখন আগের মতো ভয় নেই। এতে অস্ত্রের মহড়া ও হত্যাকাণ্ড বেড়েছে। মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। খুলনা মহানগর পুলিশের কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার বলেন, দেশে সার্বিক অস্থিরতা, পুলিশের স্বাভাবিক হতে সময় লাগাসহ নানা কারণে সন্ত্রাসীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তাদের নিয়ন্ত্রণে পুলিশের নানামুখী তৎপরতা চলছে। ১২ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা তৈরি করে গ্রেপ্তারের জন্য পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রতিনিয়ত অভিযান চলছে। বাকিদেরও শিগগির গ্রেপ্তার করা হবে। অপরদিকে প্রশাসনের মৌখিক সান্ত্বনায় ভরসা পাচ্ছে না খুলনা নগরীর ১৫ লক্ষ মানুষ।
কারণ বিভিন্ন এলাকায় প্রশাসন টহলে থাকলেও তাদের নাকের ডগা দিয়ে খুনখারাবি বোমাবাজি সন্ত্রাসীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন অথচ প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করছে প্রশাসনের এমন নিষ্ক্রিয় অবস্থার মধ্য দিয়ে আমাদের আতঙ্কের মধ্য থাকতে হচ্ছে প্রশাসনের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ খুলনার সকল শ্রেণী পেশার মানুষের।