আব্দুল খালেক
রৌমারী কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
অভ্যন্তরিন খাদ্যশস্য সংগ্রহ পাক্ষিক ছাটাই ক্ষমতা অনুযায়ী কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলায় খাদ্যগুদামে ২০২৩ চলতি ইরি বোরো মৌসুমে চাল ক্রয়ের লক্ষমাত্রা ১০৭০ মেট্রিক টন। ধান ক্রয়ের লক্ষমাত্রা ৮ শত ৩২ মে.টন। চাল সংগ্রহে মিলারদের অচল,পরিত্যাক্ত চালকলে কার্যক্রম না থাকলেও সরকারের বরাদ্দের চাল খাদ্য গুদামে দিতে সক্ষম হয়েছে। ধান চাল সংগ্রহে লক্ষমাত্রা পূরণ হয়নি। ১০৭০ মেঃটঃ চাল সংগ্রহের স্থলে সাড়ে ৯শত চাল সংগ্রহ হয়েছে এবং ৮শত ৩২ মেঃটঃ ধান সংগ্রহের স্থলে ৪১২ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ হয়েছে। তবে জানা গেছে সরকার ধান সংগ্রহ স্থগিত করেছেন। এ ধান চালকল মিলারদের ছাটাইয়ের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে এবং মিলারদের নামে বিল প্রদান করাও হবে। মিলারদের সাথে যোগ-সাজোসে অনিয়মে ধান ও চাল সংগ্রহ করা হচ্ছে। এমনই অভিযোগ উঠেছে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারঃ) এর বিরুদ্ধে। রৌমারী খাদ্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, ৩০ টি চালকলের মাঝে ১০৭০ মে.টন চাল আনুপাতিক হারে বিভাজন করে দিয়েছেন। এতে ৬টি মিনি অটো রাইস মিল এবং ২৪টি হাসকিং চালকল রয়েছে। হাসকিং চালকল অচল অবস্থায় থাকলেও চালকল মালিকদেরকে সচলের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। অপরদিকে ছয়টি চালকলে ছাটাইয়ের জন্য প্রায় ২শত মেট্রিক টন ধান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দের তারিখ হতে ১৫ দিনের মধ্যে মিলারদের কাছ থেকে এ চাল সরবরাহ করার কথা রয়েছে।
শনিবার (০৯ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে অধিকাংশ চালকল অচল অবস্থায় পরে আছে। চাল সংগ্রহের বরাদ্দ পেয়েছেন রৌমারী উপজেলায় মেসার্স রবিউল চালকল, ইসলাম চালকল, ফারুক এন্ড সিদ্দিক চালকল, তিন ভাই চালকল, ভাই ভাই চালকল, ভাই বোন চালকল, সুজন চালকল, মাসুদ চালকল, সুলতানা চালকল, হাসনাত চালকল, বিউটি চালকল, খাঁন চালকল, কেয়া চালকল ও নাছিম চালকল চাক্তাবাড়ি, মিনা চালকল, শান্ত চালকল, এসএস চালকল, জাবেদ চাল, ভাই ভাই চালকলসহ পরিত্যাক্ত অবস্থায় রয়েছে বয়লার, হাউজ, চাতাল ও গুদামঘর রয়েছে। এদিকে আরিফ নামের চালকল নটান পাড়া ঠিকানায় কাগজ কলমে থাকলেও তা খুঁজে পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অচল ও পরিত্যাক্ত চালকল জানিয়েও আনুপাতিক হারে চাল বরাদ্দ দিয়ে রহস্যজনক কারনে বিল পাশ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে মিলাররা বাহির থেকে চাল ক্রয় করে সরবরাহ করছে সরকারী খাদ্যগুদামে। অনিয়ম দুনর্তিতে অচল চালকলে চাল বরাদ্দ দিয়ে চাল সংগ্রহ করছেন খাদ্যগুদাম সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক চালকল মিলার জানান, যে মিল গুলোতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সেগুলো চালু নাই। অবকাঠামো ঠিক নাই। কয়েকটাতে বিদ্যুৎ সংযোগও নাই। যে যার মত, যেনতেনো চাল সরকারী খাদ্যগুদামে সরবরাহ করছে। বিনিময়ে প্রতিটন চাল গুদামে দিলেই পাচ্ছে উৎকোচ। অপরদিকে হাসকিং চালকল মিলের চাল খাদ্য গুদামের চাল শোটার ছাড়া সংগ্রহের অযোগ্য হয়ে থাকলে, কেনইবা বরাদ্দ দেয়া হয়।
চাতাল মালিক আবুল কাশেম জানান, আমার তিনটা চালকল এর মধ্যে ২টি চালকলের সমস্যার কারনে মালিহা মিনি অটো চালকল ৩টির বরাদ্দের চাল ১ মিল থেকে দেয়া হয়। বিউটি চালকল প্রোঃ মোঃ আবুল হোসেন বলেন, রৌমারী প্রত্যন্ত এলাকা এখানে বড়ধরনের মিল না থাকায় সরকারী বরাদ্দ চালগুলি শোটার চাল ছাড়া নেয়া হয় না। হাসকিং মিলে শোটার চাল তৈরী সম্ভব নয়। তাই লাইসেন্স ঠিক রাখার জন্য বাহিরের মিল থেকে শোটার করা চাল গুদামে দেয়া হয়।
এবিষয়ে চালকল (চাতাল) মালিক সমিতির সভাপতি নাসির উদ্দিন লাল মিয়া বলেন, রৌমারীতে বড় মিলার নাই। অল্প চালের বরাদ্দ নিয়ে বাহিরে থেকে শোটার করা চাল সংগ্রহ করে গুদামে দিতে হয়। অল্প চালে চাতালে সিদ্ধ শুকনা এবং ছাটাই করতে শ্রমিক পাওয়া যায় না। তাতে সরকারী ভাবে চালের দরের চেয়ে বাহিরে চালের দাম বেশী। শ্রমিক খরচ করে চাতালে লাভবান হতে পারবেনা কেহই। বরং অনেক ক্ষতি সাধিত হবে চালকল মালিক। লাইসেন্স ঠিক রাখার জন্য ক্ষতি খেয়েও বেশী দামে শোটার করা চাল এনে গুদামে দিতে হয়।
অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে রৌমারী উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) শহিদুল্যাহ জানান, রৌমারীতে সবগুলি চালকলই হাসকিং। তবে চালকল মালিকদেরকে চালের বিভাজন করে দেওয়ার বরাদ্দ গুলি জেলা ডিসি পোর্ট ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের মাধ্যমে দেয়া হয়। আমার দায়িত্ব শুধু চালগুলি শোটিং করা আছে কি না। সঠিক যাছাই বাছাই করে নেওয়া হয়। তবে নিজেদের চাতালে চাল তৈরী না করে, অন্য স্থান থেকে চাল এনে দেয়া অনিয়ম।
এ বিষয়ে রৌমারী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (অতিঃ) আলাউদ্দিন বসুনিয়া জানান, চালকল মালিকদের খাদ্যগুদামে চাল সংগ্রহের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়। হাসকিং মিলের চাল নেয়া হয় না। শোটার করা চাল সংগ্রহ করা হয়। সে কারনে তারা বাহিরের চালকল থেকে শোটার করা চাল সংগ্রহ করে গুদামে দেয়া হচ্ছে। এটা নিয়ম রয়েছে। এব্যাপারে কুড়িগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মাহমুদুল হাসান বলেন, শোটার করা চাল ছাড়া খাদ্য গুদামে চাল সংগ্রহ করা হয় না। হাসকিং মিলের চাল শোটার হয় না। একারনে সোটার করা চাল যেখান থেকে এনে দেয়, সেটা নেয়ার নিয়ম রয়েছে।