বিপ্লব সাহা, খুলনা ব্যুরো:
৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার পতনের সাথে সাথে আত্মগোপনে চলে যাওয়া নিষিদ্ধ সংগঠন খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রণবীর বাড়ৈ সজলকে একটি বিশ্বস্ত সূত্রে খুলনা ডিবি ও গোয়েন্দা পুলিশের যৌথ অভিযানে ২৭ ডিসেম্বর শুক্রবার মোংলা খাসেরডাঙ্গা থেকে গ্রেপ্তার করার পর তাকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালায় পুলিশ। গতকাল রাতে সজলকে মোংলা থেকে গ্রেফতার করে ডিবি হেফাজতে রাখার পর আজ ২৮ ডিসেম্বর সকালে ডিবি কার্যালয় সাংবাদিকদের সাথে প্রেস ব্রিফিং এর পর পুলিশের কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্য দিয়ে আদালত প্রাঙ্গনে হাজির করলে বিক্ষিপ্ত জনতা সহ ছাত্র দলের কর্মীরা উত্তপ্ত হয়ে পুলিশের বেষ্টনী ভেদ করে তাকে বেধড়ক মারপিট এবং ডিম ছুড়ে মারতে থাকে। এক পর্যায়ে সজলকে রক্ষা করতে আরো পুলিশ মোতায়ন করা হলেও পরিস্থিতি বেসামাল হয়ে ওঠে, ফলে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে পুলিশ প্রিজন ভ্যানে সজলকে নিয়ে যাওয়ার সময়ও পিছু পিছু ধাওয়া করে ছাত্র-জনতা সহ সাধারণ মানুষ সাথে অকত্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে ইট পাটকেল ডিম নিক্ষেপ করতে থাকে পুলিশের গাড়িতে থাকা সজল কে উদ্দেশ্য করে। সজল সাবেক ছাত্রলীগের সভাপতি দেবদুলাল বাড়ৈর আপন ছোট ভাই। সে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন ক্ষমতার দাপটে এমন কোন অপকর্ম নাই যা সজল করে নাই ধর্ষণ, চাঁদাবাজি,ভূমি দখলদারি মাদক কারবারি, চাকরি দেওয়ার প্রলোভনে টাকা আত্মসাৎ, এলাকা দখল আধিপত্য বিস্তার, দল চালানোর নামে মোটা অংকের চাঁদাবাজি, বাস স্ট্যান্ড লঞ্চঘাট মার্কেট ফুটপাত থেকে শুরু করে পাবলিক টয়লেট পর্যন্ত ছিল তার ভোগ দখল লালসার থাবা। এমনও অভিযোগ রয়েছে কোথাও বিয়ে জন্মদিন মৃত্যুবার্ষিকী শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে তার সাঙ্গোপাঙ্গ সহ সকলকে দাওয়াত না দিলে সে ক্ষিপ্ত হতো।
তাছাড়া ময়মুরুব্বীদের সাথে অকথ্য ব্যবহার করত নাম ধরে ডাকতো গালিগালাজ করত। সজলের বিরুদ্ধে খুলনার বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষদের আরো অভিযোগ রয়েছে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পৃথক পৃথকভাবে ৮ থেকে ১০ টি কিশোর গ্যাং পরিচালনা করত আর এই কিশোর মাস্তান গ্রুপের কাছে সজল দাদা বলে পরিচিত ছিল এক কথায় নগর জুড়ে সে মাফিয়া ডন হিসেবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। শহরে জায়গা কিনতে গেলেও তাকে হিস্যা দিতে হতো বিক্রি করতে গেলেও দিতে হতো। পাশাপাশি নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বাড়িঘর তৈরি করতে গেলেও সজলকে মোটা অংকের চাঁদা দেওয়া লাগতো। উল্লেখযোগ্য ভাবে আরো অভিযোগ রয়েছে শহরের নামিদামি গাড়ি মোটরসাইকেল ছিনতাই ও চুরির ঘটনার সাথেও সে সম্পৃক্ত ছিল, তাছাড়া শহরের বেশ কিছু আবাসিক হোটেলে অবৈধ নারী ঘঠিত ব্যবসা ও মাদক ব্যবসার সাথে তার সম্পৃক্ততা ছিল ।
সজলের প্রতি শহরের সাধারণ মানুষ এতটাই অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল ক্ষিপ্ত ভাষায় আদালত প্রাঙ্গনে তার নির্মমতার বর্ণনা দিয়েছে ধর্মসভার বাসিন্দা আরিফুল, সে খুলনা ব্রজলাল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আরিফুলের অভিযোগ সজল খুলনা জেলখানা নদীর উপর আঘাতী গ্রামের রসময় বাড়ৈর ছেলে। রসময় বাড়ৈ সাদাসিদে একজন মানুষ হলেও তার ছেলে সজল রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে হয়ে উঠেছে লাগাম ছাড়া কথিত ডন, এতদিন যেমন তেমন গত দুই বছর ধরে সজলের নামে শহর জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে আতঙ্ক। সজলের বিক্ষিপ্ত আচরণ দলের অনেক ঊর্ধ্বতন নেতারাও পছন্দ করত না, তারপরেও তার একক আধিপত্য বিস্তারে গড়ে তুলেছিল ছাত্রলীগ নামের সন্ত্রাসের রাজত্ব। সজলের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ রয়েছে তার দলের ছেলেরা ছিনতাই ও চাঁদাবাজি করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়লেও প্রশাসন তার নাম শুনে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। তার আচরণের শহরের মানুষ এতটাই বীতৃষ্ণা ও ক্ষিপ্ত তার বাস্তব চিত্র আপনারা আদালত চত্বরেই দেখতে পেলেন তার বিষয়ে আর ঘটা করে বেশি কিছু বলার অপেক্ষা রাখে না আপনারাই তার প্রমান পেয়ে গেলেন। পাশে থাকা আরও একজন ছাত্রদলের কর্মী বলে এই সজল কোন আইনের ফাকফোক দিয়ে হয়তোবা আবারও বেরিয়ে আসবে। তবে আইন তাকে ছাড় দিলেও সাধারণ জনগণ কিছুতেও ছাড়বে না, গণপিটুনিতে তাকে মরতে হবে।