জাহাঙ্গীর আলম, ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধি:
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের আন্দোলনের তোপে ছুটি নিয়ে কার্যালয় ত্যাগ করেছেন ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক এসএম রফিকুল ইসলাম। এছাড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর আবিদুর রহমান ও সদর থানার এসআই ফরিদকে ছাত্রদের দাবির মুখে অপসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা পুলিশ। রবিবার (১৮ আগস্ট) দুপুরে জেলা প্রশাসকের দুর্নীতি, দলীয়করণ, ঘুষ বাণিজ্য ও অন্তরবর্তীকালীন সরকারের তথ্য পাচারের অভিযোগ এনে ছাত্ররা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করেন। এ সময় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা কর্মীরা জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরেন। ছাত্রদের কঠোর মনোভাবের কারণে জেলা প্রশাসক এসএম রফিকুল ইসলাম ৩ দিনের ছুটি নিয়ে এক রকম কর্মস্থল থেকে পালিয়ে যান।
২৫ ব্যাচের এই বিসিএস কর্মকর্তা ২০২৩ সালের ৩ এপ্রিল ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাদের সঙ্গে যোগসাজসে জেলা প্রশাসক দপ্তর, চক্ষু হাসপাতাল, কালেক্টরেট স্কুলসহ বিভিন্ন দপ্তরে নিয়োগ বানিজ্য করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। তার দুর্ব্যবহারে প্রশাসনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ছিলেন অতিষ্ঠ। জেলা প্রশাসকের চেয়ারে বসে তিনি দলীয় নেতার মতো আচার আচরণ করতেন বলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা অভিযোগ করেন। এক পর্যায়ে জেলা প্রশাসক এসএম রফিকুল ইসলাম বিক্ষোভের মুখে অফিস ছাড়তে বাধ্য হন। জেলা প্রশাসক অফিসের পর বিক্ষুদ্ধ ছাত্রজনতা ঝিনাইদহ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে যান এবং সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর আবিদুর রহমান ও পুলিশের এসআই ফরিদকে অপসারণে দাবী জানাতে থাকেন। এ সময় পুলিশ সুপার আজিম উল আহসানের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উপদেষ্টা সার্বিক মোহাম্মদ আল হাসান, সমন্বয়ক আবু হুরাইরা ও সাইদুর রহমানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সাক্ষাত করে ছাত্র আন্দোলনের সময় সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর আবিদুর রহমান ও পুলিশের এসআই ফরিদের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ছাত্রনেতারা বৃন্দ দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে ঝিনাইদহ ছাড়ার আল্টিমেটাম দিলে পুলিশ সুপার ছাত্রদের দাবীর মুখে সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর আবিদুর রহমান ও পুলিশের এসআই ফরিদকে ছুটি দিয়ে কর্মস্থল ছাড়ার কথা জানান। এ সময় বিপুল সংখ্যক ছাত্রজনতা ভুয়া ভুয়া বলে শ্লোগান দিতে দিতে পুলিশ সুপারের কার্যালয় ত্যাগ করেন। এসময় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উপদেষ্টা সাকিব মোহাম্মদ আল হাসান, সমন্বয়ক আবু হুরায়রা, সাইদুর রহমান, এলমা খাতুন, রত্না খাতুন, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি এসএম সোমেনুজ্জামান সোমেন, সাধারণ সম্পাদক মুশফিকুর রহমান মানিক, ইবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক শাহেদ আহমেদ, ছাত্রদল নেতা ইমরান হোসেন, বখতিয়ার মাহমুদ, মাহবুব আলম মিলু ও আব্দুস সালামসহ বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। সমন্বয়ক আবু হুরায়রা গনমাধ্যমকর্মীদের জানান, প্রশাসনে ফ্যাসিষ্ট খুনি হাসিনার কোন দোসরকে রাখা হবে না। তারা প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থেকে আবারো আওয়ামীলীগকে সংগঠিত করার চেষ্টা করছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর আবিদুর রহমান ও পুলিশের এসআই ফরিদ নিজেদের ছাত্রলীগের টোকাই কর্মী বলে পরিচয় দিতেন। ছাত্র আন্দোলনের সময় এই দুই পুলিশ কর্মকর্তার ভুমিকা ছিল ছাত্রলীগের ক্যাডার বাহিনীর মতো। এর আগে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক এসএম রফিকুল ইসলাম ছুটি নিয়ে কর্মস্থল ত্যাগ করেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে দলীয়করণ, নিয়োগ বানিজ্য ও স্থানীয় আ’লীগ নেতাকর্মীদের সংগঠিত করার অভিযোগ তোলেন।