বিপ্লব সাহা, খুলনা ব্যুরো:
প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিইসির সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে যথারীতি ভাবে আজ ১৫ নভেম্বর বুধবার বিকাল ৫ টায় রাজধানীর আগারগাও সিইসির প্রধান কার্যালয়ে নির্বাচন কমিশনারের প্রধান কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে আগামী ৭ জানুয়ারি ২০২৪ রবিবার দিন ধার্য করে সিইসির অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সহ বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতিতে জাতীয় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন।
এতে উল্লেখ থাকে যে ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর বাছাইয়ের তারিখ ১ থেকে ৭ ডিসেম্বর ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১২৩ দফা ৩ উপদফা( ক) এর বরাতে এবং নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা করেন সিইসি। জাতির উদ্দেস্যে ভাষণ দেওয়ার আগে বিকেল পাঁচটায় নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল এক বৈঠকে সেখানে নির্বাচন তফসিলের চূড়ান্ত ঘোষণা দেন।
সংবিধান অনুযায়ী ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এবং তা নিয়ম অনুযায়ী সংসদের মেয়াদ পূর্তির আগের ৯০ দিনের মধ্য পরবর্তী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা বাধ্যতামূলক। চলতি সংসদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছরের ২৯ জানুয়ারি। এর আগের ৯০ দিনের মধ্য দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
এ সময় তিনি দেশের মোট ভোটার সংখ্যার তথ্য তুলে ধরে বলেন আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারাদেশে মোট ভোটার এর লেখা রয়েছে ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। ২ নভেম্বর সংসদ নির্বাচনের চূড়ান্ত ভোটার সংখ্যা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন( ইসি)। ইসির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মোট ভোটারের মধ্যো পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ জন। এবং নারী ভোটার ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২ জন। আর হিজড়া ভোটারের সংখ্যা ৮৫২।
নির্বাচন কমিশনারের পক্ষ থেকে তফসিল ঘোষণা করলেও এদিকে নির্বাচনবিরোধীমুখী আন্দোলনের প্রস্তুুতিতে প্রধান বিরোধীদল বিএনপি ও জামাত। ইতোমধ্যো দল দুটির সূত্রে জানিয়েছে আজ তফসিল ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে আগামী ১৯ ও ২০ নভেম্বর সারা দেশব্যাপী সর্বাত্মক টানা ৪৮ ঘন্টা হরতাল পালন করার ঘোষণা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি সমগ্র দেশের মানুষের মধ্যে তফসিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে রয়েছে চরম উদ্বেগ উৎকণ্ঠা।
পাশাপাশি সারা দেশব্যাপী আনন্দ মিছিল করেছে ক্ষমতাশীল দলের উচ্ছ্বাসিত নেতাকর্মীরা।
অপরদিকে নির্বাচন ও তফসিল ঘোষণা ঠেকাতে রাজপথে নেমেছে সরকারবিরোধী সকল রাজনৈতিক দলগুলো।
তবে আজ তফসিল ঘোষণার আগে প্রশাসনের কঠোর নিরাপত্তার বলায়ের চাদরে ঘিরে রেখেছিল আগারগাঁও এলাকার আশপাশ।
এবং সর্বসাধারণদের সিইসি প্রধানের কার্যালয় এলাকা থেকে বের করে দেওয়া সহ অত্র এলাকার দোকানপাট বন্ধ করে দিতে বাধ্য করে পুলিশ।
উল্লেখ্য বাংলাদেশের ইতিহাসে
এই সর্বপ্রথম নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাত্তর দেশের নির্বাচন কমিশনারের প্রধান জাতীর উদ্দেশ্য ভাষণ দেন।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সন্ধ্যা ৭ টায় দেশের অন্যতম জাতীয় সরকারি গণমাধ্যম বিটিভিতে যথাসময়ে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন কাজী হাবিবুল আউয়াল।
এ সময় তিনি ১৯৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদ ও তিন লক্ষ মা-বোনদের সম্ভ্রম হানি ও আত্মত্যাগের বিনিময় ১৯৭১ এর ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল সেই সকল শহীদ ও বীরাঙ্গনাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে নির্বাচন কমিশনারের প্রধান জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ শুরু করে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থী ও সকল শ্রেণীর নির্বাচন পরিচালনা কার্যকরী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন নির্বাচন প্রশ্নে দেশের সার্বিক রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে মতভেদ পরিলক্ষিত হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিইসি কাজী হাবিব উল আউয়াল বলেছেন মতভেদ থেকে সংখ্যাত সহিংসতা হলে তা থেকে সৃষ্টিশীল নির্বাচন প্রক্রিয়া বিরূপ প্রভাব বিস্তার করতে পারে। মতৈক্য ও সমাধান প্রয়োজন। এ সময় চেয়েছি আরো বলেন আমি নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সকল রাজনৈতিক দলকে বিনীতভাবে অনুরোধ করবো সহিংসতা পরিহার করে সদয় হয়ে সমাধান অন্বেষণ করতে। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের সকল দলের স্পর্শ অংশগ্রহণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে সর্বদা স্বাগত জানাতে উল্লেখ করেছি এসি বলেন পারস্পরিক প্রতিহিংসা অবিশ্বাস ও অনাস্থা পরিহার করে সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতা ও সমাধান অসাধ্য নয়। হাবিবুল আউয়াল বলেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু আওয়ামী লীগ বিএনপি ও জাতীয় পাটিকে চিঠি দিয়ে শর্তহীন সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক মত নয়কর বিষয়টি উঠে আসে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এসির ভাষনেও তিনি বলেন অবাধ নিরপেক্ষ অংশগ্রহণমূলক উৎসবমুখর নির্বাচনের জন্য কাঙ্খিত অনুকূল রাজনৈতিক পরিবেশের প্রয়োজনীয়তা হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন প্রশ্ন বিশেষত নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক পদ্ধতির প্রশ্ন দীর্ঘ সময় ধরে দেশের সার্বিক রাজনৈতিক নেতৃত্ব মতভেদ পরিলক্ষিত হচ্ছে। সে এসে বলেন বহুদলীয় রাজনীতিতে মতাদর্শগত বিভাজন থাকতেই পারে ভেদ থেকে সংঘাত ও সহিংসতা হলে তা থেকে সৃষ্ট অস্তিত্বশীলতা নির্বাচন প্রক্রিয়ার বিরূপ প্রভাব বিস্তার করতে পারে। যা সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতা ও সমাধান অসাধ্য নয় উল্লেখ করে সিইসি বলেন তথ্য সহিষ্ণুতা পারস্পরিক আস্থা সহনশীলতা ও সহমর্মিতা টেকসই ও স্থিতিশীল গণতন্ত্রের জন্য আবশ্যকীয় নিয়ামক।
জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণ উল্লেখ করে বলেন সরকার আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ অংশগ্রহণমূলক এবং শান্তিপূর্ণ করার লক্ষ্যের সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি বারংবার ব্যক্ত করেছে। কমিশন ও তার আয়ত্তে থাকা সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে এবং সরকার থেকে আবশ্যক সকল সহায়তা নিয়ে নির্বাচনকে অবাধ নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ করার বিষয়ে সততা নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে।
সংবিধানের সংসদের মেয়াদ পূর্তির আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে উল্লেখ করে সিইসি বলেন এই নির্দেশনা নির্বাচন কমিশন বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারী ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সম্পন্ন করে থাকে।
কেন্দ্রের ভারসাম্য সিইসি উল্লেখ করেন নির্বাচন সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হতে পারে কেবল সংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট সকলের সমন্বিত সহযোগিতা অংশগ্রহণের মাধ্যমেই। রাজনৈতিক দলগুলো গণতান্ত্রিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনে কার্যকর ভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে কেন্দ্রে কেন্দ্র কেন্দ্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হয় নির্বাচন আরো পরিশুদ্ধ ও অর্থবহ হয়। আর তাতে জনমতের অ শুদ্ধতার প্রতিফলন ঘটে। সিইসি তার ভাষণের শেষ দিকে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সকল রাজনৈতিক দলপ্রার্থী ও জনগণের অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা কামনা করেন।