জুলহাস উদ্দীন,তেঁতুলিয়া পঞ্চগড় প্রতিনিধি:
তেঁতুলিয়া উপজেলায় সামসুন নাহার নূরানী ও হাফেজিয়া মহিলা মাদ্রাসায় হামলা ও ভাংচুর করাসহ প্রতিষ্ঠাতদের প্রাণনাশের হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে আবু হানিফ নামে এক আওয়ামীলীগ নেতার বিরুদ্ধে।
এদিকে এঘটনায় ওই নেতার শাস্তির দাবীতে বুধবার সকালে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে ভুক্তভোগী মাদ্রাসার শিক্ষক,শিক্ষার্থী ও অবিভাবকরা।
জানা গেছে, অভিযুক্ত আবু হানিফ তেঁতুলিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের মুল্লুকচান গছ এলাকার মৃত মোহাম্মদের ছেলে। তিনি কাজী শাহাবুদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের প্রভাষক ও তেঁতুলিয়া উপজেলা আ’লীগেরের নেতা।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, তেঁতুলিয়া উপজেলার মুল্লুকচান এলাকায় নিজ বসতবাড়িতে ওয়াজেদ আলীর চার মেয়ে রেহানা, নাসিমা আক্তার, শামীমা নাসরিনসহ তার চার বোন মিলে গত ২০২১ সালে সামসুন নাহার নূরানী ও হাফেজিয়া মহিলা মাদ্রাসা নামে একটি মহিলা মাদ্রাসা গড়ে তুলেন। তবে মাদ্রাসা চালুর পর কয়েক বছর আগে তাদের সাথে জমি নিয়ে বিরোধ থাকায় ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বিভিন্ন হুমকি দিয়ে আসছিল তাদেরই প্রতিবেশী আওয়ামীলীগের নেতা আবু হানিফ। এবিষয়ে বেশ কয়েক বার মিমাংসাও হয়। অন্যদিকে গত ৫ আগষ্ট রাতে আবু হানিফসহ তার স্বজন ও লোকজন সেই মাদ্রাসায় বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করে ওই মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাদের উপর বিভিন্ন প্রকার হুমকি,অশ্লিল ভাষায় গালিগালাজসহ মাদ্রাসা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করার হুমকি দেয় আবু হানিফ। এক পর্যায়ে ওই আ’লীগ নেতা ওই নারীদের কাদিয়ানী বলেও আখ্যা দেন। ঘটনার পর থেকেই নিরাপত্তার হীনতায় ভুগছে মাদ্রাসার থাকা অধ্যক্ষ,শিক্ষক,শিক্ষার্থীসহ ওই নারীরা।তবে স্থানীয় অবিভাবকদের পাহারায় চলছে মাদ্রাসার কার্যক্রম।
এদিকে ভুক্তভোগীরা গত বুধবার রাতে আবু হানিফসহ তার লোকজনের বিরুদ্ধে তেঁতুলিয়া মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
এবিষয়ে সামসুন নাহার নূরানী ও হাফেজিয়া মহিলা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ নাসিমা আক্তার বলেন, মাদ্রাসাটি আমি ২০২১ সাল থেকে পরিচালনা করে আসছি। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করার পর থেকে আমার পেছনে লেগে আছে । উনি আমার পেছনে এই মাদ্রাসাটি কি ভাবে করলাম, আমি একজন মহিলা, মহিলা হয়ে কিভাবে মাদ্রাসা করে, খালি উনার প্রশ্ন? আমার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন। গত ৫ আগষ্ট আবু হানিফের দুধর্ষ বাহিনী আমার বাড়িঘর ভাঙার জন্য আসছে।আমরা চিৎকার করলে আমার গ্রামের লোকজন ও চাচাতো ভাই এগিয়ে এসে উদ্ধার করে।আমার চাচাতো ভাইকে অনেক মারে আহত করেছে।এটার আমরা বিচার চাই।
একই কথা বলেন মাদ্রাসার আরেক সাদস্য রেহেনা বেগম,তিনি বলেন,আবু হানিফ আ’লীগ নেতার দাপট দেখিয়ে আমাদের উপর অনেক অত্যাচার করেছে। এলাকার লোকের উপরও এমন করেছন তিনি। আমদের বাবার ছেলে সন্তান নেই। তাই বাবার ভিটায় আমরা সব বোনরা মিলে এই মহিলা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করি।তবে শুরু থেকে হানিফ নামে ওই নেতা আমাদের পিছনে লেগে থাকতো। তবে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রায় হুমকি দিতো৷ সর্বশেষ গত ৫ আগষ্ট হানিফসহ তার লোকজন আমাদের মাদ্রাসায় ভিতরে এসে মাদ্রাসা ভেঙে ও পুড়েসহ আমাদের মেরে ফেলার হুমকি দেয়। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমরা তার বিচার চাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রী জানান, সামসুন নাহার মহিলা মাদ্রাসায় আমি পড়ি। হানিফ প্রভাষক আগুন ধরায় দিতে আসছিল।আমরা ভয়ে মাদ্রাসায় আসতে পারি নি। আমাদের মাদ্রাসা ভেঙে দিতে আসছিলো।
কয়েকজন অভিভাবক জানান, আমাদের বাচ্চারা এখানে পড়ে। যারা ছোট ছোট বাচ্চারা এখন মাদ্রাসায় আসার জন্য ভয় পায়।
এবিষয়ে অভিযুক্ত আ’লীগের নেতা ও কাজী শাহাবুদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের প্রভাষক আবু হানিফ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট দাবী করে বলেন, আমি একজন প্রভাষক। আমি একটি দলের সাথে জড়িত ছিলাম। তারা আমাকে ফাসাতে এমন অভিযোগ দায়ের করেছে। তাদের সাথে আমার জমি নিয়ে বিরোধ ছিল অনেক আগে,তারা আমার উপর মামলাও করে ছিল। আমি তাদের হুমকি ধুমকি দেইনি। তারা মাদ্রাসা চালাচ্ছে এটা খারাপ কাজ নয়। আর তারা বলছে আমি নাকি তাদের কাদিয়ানী বলেছি, যেটা পুরোপুরি মিথ্যা ও বানোয়াট আমার বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তিতে তেতুলিয়া মডেল থানা পুলিশ এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
এবিষয়ে তেঁতুলিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুজয় কুমার রায় বলেন,আমরা ওই মহিলা মাদ্রাসার কতৃপক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিনে তদন্ত অব্যাহত রেখেছি।