নবীগঞ্জ প্রতিনিধি :
নবীগঞ্জে নিজ নিজ ঘরে মোস্তাকিম মিয়া নামে এক কিশোরের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ।
পরক্রিয়া সম্পর্কের জের ধরে এ হত্যাকান্ড হতে পারে বলে ধারণা করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সহ অনেকেই। তবে, পুলিশ বলছে তদন্ত শেষে দ্রুত হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদঘাটন করা হবে।
সূত্রে জানাযায়, গতকাল রবিবার রাত অনুমান ৯টার দিকে নবীগঞ্জ উপজেলার কালিয়ারভাঙ্গা ইউনিয়নের পুরানগাঁও গ্রামের বসতঘর থেকে নবীগঞ্জ থানার একদল পুলিশ মোস্তাকিম মিয়া নামের এক কিশোরের লাশ উদ্ধার করা হয়। সে উপজেলার কালিয়ারভাঙ্গা ইউনিয়নের পুরানগাঁও গ্রামের মৃত জফর মিয়ার পুত্র নিহত মোস্তাকিন মিয়া (১৭)। সে পেশায় এক রাজমিস্ত্রী ছিল।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়- নবীগঞ্জ উপজেলার কালিয়ারভাঙ্গা ইউনিয়নের পুরানগাঁও গ্রামের মৃত জফর মিয়ার ৫ পুত্রের মধ্যে নিহত মোস্তাকিস ৪ নাম্বার পুত্র। এর মধ্যে দুই পুত্র প্রবাসে থাকে ও অপর দুই পুত্র অন্যত্র কাজ করে। নিজ বাড়িতে মোস্তাকিম ও তার মা প্রবাসী দুই ভাইয়ের স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করে আসছিলো। রবিবার সন্ধ্যায় মৃত জফর মিয়ার শ্বাশুড়ি অসুস্থ হওয়ায় জফর মিয়ার স্ত্রী বসত ঘরে প্রবাসী দুই ছেলের স্ত্রী ও ছেলে মোস্তাকিম মিয়াকে রেখে পিত্রালয়ে চলে যান। সন্ধ্যার দিকে নিজ বসতঘরের খাটে মোস্তাকিম মিয়া ঘুমিয়ে পড়েন। রাত ১০টার দিকে বাথরুমে যান মোস্তাকিম পরে বাথরুম থেকে নিজ বসতঘরে প্রবেশের পর মোস্তাকিম মিয়ার চিৎকার-চেঁচামেচী শুনে দৌঁড়ে আসেন দুই ভাইয়ের স্ত্রী। পরে খাটের ওপর মোস্তাকিম মিয়ার গলাকাটা লাশ দেখতে পেয়ে তারা চিৎকার শুরু করেন। এ সময় আশপাশের স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে যায়।
এ ঘটনার খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: কামাল হোসেন একদল পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মোস্তাকিম মিয়ার গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে।
এদিকে, বসতঘরে গলাকেটে কিশোর মোস্তাকিমকে হত্যার ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
এ ব্যাপারে কালিয়ারভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নুরুল আমীন জানান, আমরা একটি পাঞ্চায়েতে ছিলাম, খবর পেয়ে আমরা সবাই ঘটনাস্থলে ছুটে আসি। ঘটনার সময় বসতঘরে মোস্তাকিম ও তার দুই ভাইয়ের দুই স্ত্রীই ছিল। এ ব্যাপারে পুলিশ নিহত মোস্তাকিমের দুই ভাইয়ের দুই স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
এ ব্যাপারে কালিয়ারভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমদাদুল হক চৌধুরী মুকুলের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, নিজ বসতঘরে মোস্তাকিম নামে এক কিশোরকে গলা কেটে হত্যার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।
তাদের ঘরে তখন শুধুমাত্র তার দুই ভাইয়ের দুই স্ত্রীই ছিল। তিনি আরো বলেন, নারী সংক্রান্ত কোনো ঘটনাকে কেন্দ্রে করে এ হত্যাকান্ড হতে পারে।
এদিকে অপর আরেকটি সুত্রে জানাযায়,একই গ্রামের জনৈক রায়হান মিয়ার সাথে মোস্তাকিমের ভাইয়ের বউয়ের দীর্ঘদিন ধরে পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। তাদের এই সম্পর্ক থাকা অবস্থায় রায়হান প্রায় সময়ই সুযোগ পেলেই তাদের বাড়িতে আসতো। এবং তাদের প্রক্রিয়া সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পারে মোস্তাকিম। এতে মান সম্মান ও ইজ্জত রক্ষার্থে মোস্তাকিম রায়হানকে তাদের বাড়িতে আসতে নিষেধ করে। এর কিছু দিন পূর্বে উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে রায়হান মোস্তাকিমকে আটকও করে।
তাই প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা যাচ্ছে তাদের পরকীয়ায় নিষেধ দেয়ার কারনেই পরিকল্পিত ভাবে মোস্তাকিমকে হত্যা করতে পারে তারা। তবে, ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটনে পুলিশ তৎপর রয়েছেন। স্থানীয়রা ধারনা করছেন, এ হত্যাকান্ডের মূল রহস্য নিহত মোস্তাকিমের দুই প্রবাসী ভাইয়ের স্ত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেই আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন নিহতের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, খবর পেয়ে সাথে সাথে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করেছি। তদন্তের স্বার্থে এখন বিস্তারিত বলা যাচ্ছেনা। হত্যাকাণ্ডের আগে-পরে যারা ঘটনাস্থলে বা আশপাশে ছিলেন তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হবে।
এ ঘটনার দেশ-বিদেশে চলছে নানান আলোচনার পাশাপাশি সমালোচনা। এবং তদন্ত পূর্বক প্রকৃত আসামীদের সনাক্ত করে গ্রেফতারের জের দাবী জানান সচেতন মহলের লোকজন।