মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধি:
বিল্ডিং নির্মাণ করার সময়ে পরিকল্পনা থেকে শুরু করে ফিনিশিং পর্যন্ত অনেক কিছু ভাবতে হয়। তবে যখন আপনি নির্মাণ প্রক্রিয়ায় থাকবেন, তখন সুরক্ষার সঙ্গে কোনও সমঝোতা করতে পারবেন না। সেটি কাঠামোর, নির্মাণ টিমের, তত্ত্বাবধায়কের, বা সেই স্থানে উপস্থিত কোনও ব্যক্তির সুরক্ষা–যেটিই হোক। নির্মাণের স্থানটি স্বয়ং একটি উচ্চ-ঝুঁকির পরিবেশ হয়, যেখানে শ্রমিকেরা বৈদ্যুতিক সামগ্রী, ইট, খোয়া, বালি, পাথর, নির্মাণের যন্ত্রপাতির বিপদ ও অন্য কোনও উদ্ভূত সমস্যার সম্মুখীন থাকেন। সেইজন্য বাড়ি নির্মাণের সময় কোনও দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য কাজের স্থানটি সুরক্ষিত ও নিরাপদ রাখা গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে এমন দুর্ঘটনার অনেক নজির রয়েছে। সবগুলি ঘটনা খুবই মর্মান্তিক। এসব ঘটনা বহুবার আলোচনায় এসেছে এ দেশে কর্মক্ষেত্রে শ্রমিক নিরাপত্তা, বিশেষ করে নির্মাণকর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টি। অতীতেও উন্মুক্ত স্থানে নির্মাণাধীন বহুতল ভবন থেকে ইট পড়ে, নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের গার্ডার ভেঙে অনেকের প্রাণনাশ ঘটেছে।শুধু শ্রমিকরাই নয়, পথচারীও হয়েছে এর অসহায় শিকার।
একটি জাতীয় দৈনিকের গবেষণা থেকে জানা যায়, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ২০২৩ সালে ১৪৩২ শ্রমিক নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরো পাঁচ শত দুইজন। কর্মক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না থাকার কারণে এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে, এর পুনরাবৃত্তি রোধ করা জরুরি। বাংলাদেশে নির্মাণাধীন ফ্লাইওভার ভেঙে পড়ে একসঙ্গে ১৫ জনের প্রাণহানির দৃষ্টান্তও রয়েছে। ২০১০ সালে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে ফ্লাইওভারের গার্ডার ভেঙে পড়ার মর্মান্তিক ঘটনার স্মৃতিও কি আমাদের সাবধান করতে পারেনি! উন্নত বিশ্বের দিকে তাকালে দেখা যায়, কর্মক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয় নিরাপত্তার ওপর। আমাদের দেশের প্রচলিত শ্রম আইনে শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিধান রয়েছে। তা ছাড়া ‘সেফটি ফার্স্ট’ বা ‘সবার আগে নিরাপত্তা’ কথাটি সুপরিচিত শুধু নয়, ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েও আসছে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে।কিন্তু বাস্তবে তার প্রয়োগ ততটা দৃশ্যমান নয়।
ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে সাফদারপুর দারুল উলুম আলিম মাদ্রাসার নতুন ভবনে নিরাপত্তাবেষ্টনী না দিয়ে কাজ করছে শ্রমিকরা। মাদ্রাসার বহুতল ভবনের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নিরাপত্তা বেষ্টনী আইন মানছে না। সরকারি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে ইমারত নির্মাণস্থলে যেকোনো দুর্ঘটনা ও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়ানো, কর্মরত নির্মাণ শ্রমিকদের নিরাপত্তা বিধান, আশপাশের ভবন, অবকাঠামো ও পথচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দ্বায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ভবন নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের। বাংলাদেশ জাতীয় ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৬, ইমারত নির্মাণ আইন ১৯৫২-এ এসব দায়দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট করা আছে।
কাগজে-কলমে থাকা বিধানগুলোর প্রয়োগ নিশ্চিত করবে কে? মাদ্রাসার সকাল থেকে ক্লাস চলছে বিকাল পর্যন্ত। সরকারের ইমারত নির্মাণের সকল আইন অপেক্ষা করে বিল্ডিং এর কাজ করছেন শ্রমিকরা। তাদেরকে বারবার সতর্ক করলেও তারা কোন কথাই শুনছেন না, অভিযোগ মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের। মাদ্রাসা ভবনের ইট গাথুনির কাজ চলছে। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রয়োজন তাগিদে চলাচল করতে হচ্ছে কাজ চলা বিল্ডিং এর নিচ অথবা পাশ দিয়ে। এমতঅবস্থায় উপর থেকে নির্মাণ সামগ্রী পড়ে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে এর দায় নিবে কে? এ ব্যাপারে দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত কোটচাঁদপুর ফায়ার সার্ভিসে যোগাযোগ করা হলে একজন কর্মকর্তা জানান, বিষয়টি আমাদেরকে না বলে আপনি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে যোগাযোগ করুন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার উছেন মে এর সাথে যোগাযোগ করতে মুঠোফোন কল দেয়া হলে ফোনটি রিসিভ হয় নাই। তাই এ নির্মাণকাজে সব ধরনের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে এ-সংক্রান্ত আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করবেন বলে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও এলাকার অভিভাবক মহলের প্রত্যাশা।