মোঃ আমিরুল ইসলাম পঞ্চগড় প্রতিনিধি।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে বাড়িতে হামলা, সীমানা বেড়া ভেঙে ফেলা, ভূক্তভোগীকে মারধর এবং দা-বটি দিয়ে বাড়ির গাছপালা কেটে ফেলার অভিযোগ উঠেছে আমিনুর রহমান ফালান নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। সোমবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে ইউনিয়নের খালাপাড়া এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে।
এ ঘটনায় দুইজন আহত হয়ে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে জানা গেছে। পরে ভূক্তভোগী কুলসুম বেগম বাদী হয়ে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের খালাপাড়া এলাকার ফাতেমাগঞ্জ মৌজার ২৪৬ দাগে সাড়ে ৮ শতক জমিতে বসতবাড়ি করে বসবাস করছিলেন নিঃসন্তান কুলসুম বেগম। সম্প্রতি তিনি তার বাড়ির পাশের আরও সাড়ে ৮ শতক জমি বিক্রি করেন তার ভাগিনা আমিনুর রহমান ফালানের কাছে।
তবে ফালানের বাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তা না থাকায় তারা কুলসুমের ভিটের ওপর দিয়ে চলাচল করতেন। কুলসুমের দাবি, তিনি তার বাড়ির দক্ষিণাংশের জমি বিক্রি করেছেন, কিন্তু ফালান বাড়ির পশ্চিম দিকের অংশসহ তার রান্নাঘরের জায়গাও দলিলভুক্ত করে নেন। বিষয়টি নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হলে সোমবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে ফালান ও তার লোকজন দা-বটি নিয়ে কুলসুমের বাড়িতে হামলা চালায়। তারা বাড়ির গাছপালা কেটে ফেলে এবং কয়েকজনকে মারধর করে।
এ সময় স্থানীয়রা এগিয়ে এলে কয়েকজন আহত হন। পরে রান্নাঘরের বেড়ার কিছু অংশে আগুন ধরলে ফায়ার সার্ভিসে খবর দেওয়া হয়, তবে কর্মীরা পৌঁছানোর আগেই স্থানীয়রা বালতির পানি দিয়ে আগুন নেভান।
ঘটনার খবর পেয়ে সদর থানা পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিদর্শন করেন এবং ভূক্তভোগীকে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন।
কুলসুম বেগম আরও অভিযোগ করে বলেন, আমিনুর রহমান ফালান জামায়াতের সমর্থক। তিনি সবার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন এবং জমি নিয়ে একাধিকবার শালিস হলেও কোনো সিদ্ধান্ত মানেননি। ফালানের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেন তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা আসাদ আলী বলেন, “কুলসুম বেগম একজন নিরীহ নারী। তার ওপর অন্যায় করা হয়েছে। ঘটনার সময় আমরা ভিডিও ধারণ করতে গেলে ফালান ও তার ভাই মোবাইল ছিনিয়ে নেয় এবং আমাকে ঘাড়ে কামড়ে দেয়। আমরা এর বিচার চাই।”
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে আমিনুর রহমান ফালান বলেন, “আমার নিজ বাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তা নেই। খালার বাড়ির পাশে চিকন গলি দিয়েই যাতায়াত করতাম। পরে স্থানীয়রা ইন্ধন দিয়ে ওই রাস্তা বন্ধ করে দেয়। আমি বেড়া ভেঙেছি ও গাছ কেটেছি এটা সত্য, তবে তাদের বাড়িতে আগুন দেইনি। আমি আমার বৈধ জমির দখল চাই।”
হাঁড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জামায়াত নেতা সাইয়েদ নুর ই আলম বলেন, “জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে সালিস হয়েছে, উপজেলা পর্যায়েও শালিস হয়েছে। তবে স্থানীয় কিছু ব্যক্তির ইন্ধনের কারণেই বিরোধের সমাধান সম্ভব হয়নি, যার ফলে সমস্যা আরও বেড়েছে। এখানে রাজনৈতিক পরিচয়ের ভিত্তিতে কেউ কিছু করেনি। ব্যক্তিগত অপরাধের সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা চাই, আইন অনুযায়ী এ বিরোধের সুষ্ঠু সমাধান হোক।”
পঞ্চগড় সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আশীষ কুমার শীল বলেন, “হাঁড়িভাসার ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমরা তদন্ত চালিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”

