আব্দুল গাফফার
শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি
বগুড়ার শেরপুরে গ্রাম্য মাতবরদের বাধা ডিঙিয়ে অবশেষে থানায় ধর্ষণ মামলা করেছেন নির্যাতনের শিকার এক গৃহবধু। সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাতে শাকিলুর রহমান রয়েল (৩০) নামের যুবকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন ওই গৃহবধূ। পরে পুলিশ রাতেই অভিযোগটি ধর্ষণ মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করেন। সেইসঙ্গে অভিযুক্ত শাকিলকে ধরতে অভিযান চালানো হয়। কিন্তু মামলা ও অভিযানের বিষয়টি আঁচ করতে পেরে গা-ঢাকা দেওয়ায় তাকে ধরতে পারেনি পুলিশ। তবে তাকে ধরতে পুলিশি তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবু কুমার সাহা। এছাড়া আইনের আশ্রয় নিতে বাধা দেওয়াসহ ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার বিষয়ে কোনো গ্রাম্য মাতবর জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও দাবি করেন তিনি। মামলা সূত্রে জানা যায়, উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের ঘারতাপাড়া গ্রামের শহিদুর রহমান ওরফে শহিদ মেম্বারের ছেলে শাকিলুর রহমান রয়েলের সঙ্গে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পরিচয় ঘটে পাশ্ববর্তী পালাশন গ্রামের ওই গৃহবধূর। এরই সূত্রধরে বিগত ১৫ সেপ্টেম্বর রাত বারোটার দিকে জরুরি কথা আছে-মর্মে ডেকে দরজা খুলতে বলেন। একপর্যায়ে দরজা খোলার সঙ্গেই তার মুখ চেপে ধরেন। এমনকি শয়নকক্ষের পাশে খড়ি রাখার ঘরের মধ্যে নিয়ে জোরপূর্বক ওই গৃহবধূকে ধর্ষণ করা হয়। পরবর্তীতে তার চিৎকারে প্রতিবেশি লোকজন এগিয়ে এলে শাকিলুর দৌঁড়ে পালিয়ে বলে এজাহারে দাবি করা হয়েছে।
এদিকে ঘটনার পরদিন ভুক্তভোগী পরিবারটি আইনী আশ্রয় নিতে চাইলে গ্রাম্য মাতবর নজরুল ও তার অনুসারীরা বাধা দেন বলে অভিযোগ করেন তারা। তাদের দাবি, ধর্ষকের পরিবারের নিকট থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছিল গ্রাম্য মাতবর খ্যাত ওই চক্রটি। পাশাপাশি মামলা না করার জন্য বিভিন্ন হুমকি-ধামকিও দেওয়া হয়। একপর্যায়ে গণমাধ্যমকর্মী ও সুশীল সমাজের সহযোগিতায় গ্রাম্য মাতবরদের সব বাধা ডিঙিয়ে নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধু থানায় এসে মামলা দায়ের করেন বলে ভুক্তভোগী পরিবারটি জানান। তবে গ্রাম্য মাতবর নজরুল ইসলামের দাবি, আমি কোনো টাকা-পয়সা গ্রহন বা বিচার-সালিস করিনি। কেবল ধর্ষণের শিকার ওই নারীকে তার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। এছাড়া আমার কোনো কিছু জানা নেই। কিন্তু স্থানীয় ইউপি সদস্য (মেম্বার) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঘটনাটি ধামাচাপা দিতেই ওই নারীকে জোরপূর্বক তার বাবার বাড়ি শাজাহানপুর উপজেলায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। যাতে আইনের আশ্রয় না নিতে পারে সেজন্য বিগত সাতদিন সেখানেই রাখা হয়েছিল বলে জানান তিনি।
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা শেরপুর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাঈফ হোসেন জানান, ধর্ষণের শিকার ওই গৃহবধূর ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বগুড়ায় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি মামলায় অভিযুক্তকে ধরতে পুলিশ তৎপর রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।