মশিউর মিলন,(পটুয়াখালী) জেলা প্রতিনিধিঃ
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদ থেকে অব্যাহতির ৪১ মাস পর প্রধান শিক্ষকের যোগসাজগে পূনরায় অবৈধভাবে যোগদান করেছে এক শিক্ষিকা। উপজেলা জুড়ে তোলপাড় চললেও প্রভাবশালীদের ভয়ে মুখ খুলছে না কেউ। এ ঘটনায় অত্র প্রতিষ্ঠানের একজন সহকারী শিক্ষক জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর একটি অভিযোগ দাখিল করেছেন। ঠিক এমন ঘটনাই ঘটেছে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নাজিরপুর ছোট ডালিমা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পটুয়াখালীর বাউফলে নাজিরপুর ছোট ডালিমা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মোসা: মাসুমা বেগম ২০১১ সালের ৪ এপ্রিল অত্র প্রতিষ্ঠানে যোগদান করে এমপিও ভুক্ত হন ২০১২ সালের ১ নভেম্বর। এমপিও ভুক্তির পর থেকে প্রায়ই মাসের পর মাস বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থেকে বেতন ভাতা উত্তোলন করতেন। সর্বশেষ ২০১৮ সালের মার্চ মাস থেকে ২০১৯ সালের ২৬ মার্চ মাস পর্যন্ত ১ বছর বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থেকেও বেতন ভাতা উত্তোলন করেন। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরবর্তী সময়ে এরকম অনৈতিক সুবিধা না দেয়ায় ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ সে¦চ্চায় চাকরী থেকে অব্যাহতি নেয় মাছুমা বেগম। অব্যাহতির পর ম্যানেজিং কমিটি ৪ মে ২০১৯ তারিখের ৪/১৯ নং সভায় অব্যাহতি পত্র গ্রহণ করে এমপিও থেকে নাম কর্তনের সিদ্ধান্ত নিযে রেজুলেশন করা হয়। প্রায় ২ বছর সময়ক্ষেপন করে ওই শিক্ষিকা মাসুমা বেগমের এমপিও কপিতে নাম কর্তনের জন্য ২ মে ২০২১ তারিখ মহা পরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, ঢাকা বরাবর আবেদন করেন প্রধান শিক্ষক মাহবুব আলম। মহা পরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, ঢাকা থেকে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে তদন্ত করে প্রতিবেদন পাঠাতে বলা হয়। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার অদৃশ্য কারণে ঐ শিক্ষিকার পক্ষে তদন্ত প্রতিবেদন করে ঐ প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে দেয়। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কাটা লাইনে বেতন করিয়ে ১৩ আগষ্ট ২০২২ তারিখ ঐ শিক্ষিকাকে অবৈধভাবে যোগদান করান প্রতিষ্ঠান প্রধান মাহবুব আলম। এ বিষয়ে অত্র প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্যান্য শিক্ষক কর্মচারীগণ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই বিধি বহির্ভূত যোগদান কিভাবে সম্ভব? আমরা প্রধান শিক্ষকের ভয়ে মুখ খুলতে পারছি না।
এ বিষয়ে চাকরি থেকে অব্যাহতি নেয়া শিক্ষিকা মাসুমা বেগম মুঠো ফোনে বলেন, এটাতো বোঝার বাকি নাই যে, আমি কোথা থেকে কোথায় আসছি। এতদিন অনুপস্থিত থাকার পর সবাইতো এই লেভেলটা ঘুরে আসতে পারবে না। আমি কাঁটা লাইনে কাজ করে এসে যোগদান করেছি। আমি না-ই বলে দিছিলাম। পরে হেড স্যার আমাকে বলছে, তোমার কি চাকরির প্রতি দয়া মায়া নাই? যদি চাকরী করতে চাও তাহলে তোমার ভাইয়ের মাধ্যমে কিছু করে আসো।
চাকরি থেকে অব্যাহতি নেয়ার ১১ মাস পূর্বে ক্লাস না করে বেতন ভাতা তোলার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই টাকাটা হেড স্যারকে দিয়েছি অন্যান্য শিক্ষকদের দেয়ার জন্য।
এ বিষয়ে অত্র প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক মাহবুব আলম বলেন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের সুপারিশে তাকে যোগদান করার অনুমতি দিয়েছি।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমুল হাসান জানান, ওই শিক্ষিকা চাকরি রিজাইন দেয়ার পর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাকে তদন্তের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। তৎকালীন সময়ের কিছু লোক আমাকে বলেছিল, যতদূর সম্ভব ঐ শিক্ষিকার পক্ষে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য। তদন্ত শেষে আমি প্রতিবেদন কমিটির কাছে ছেড়ে দিয়েছি। কমিটি রুলস মেইনটেইন করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে যোগদানের জন্য প্রস্তাব পাঠাতে পারবে।
এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার মুহাঃ মুজিবুর রহমান বলেন, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের বরিশাল অঞ্চলের উপ-পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ঐ শিক্ষিকার বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। পটুয়াখালী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে তদন্ত করার জন্য নির্দেশ দিয়েছি।