মশিউর মিলন, পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি:
বরিশাল আন্তঃ বিভাগীয় ডাকাত দলের এক সদস্যর সাথে পটুয়াখালী-২ বাউফল এর সংসদ সদস্য, তার ছেলে ও ভাতিজার (ইউপি চেয়ারম্যান) ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। বুধবার (০৮নভেম্বর) ডাকাতের এ ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তের মধ্যে তা ভাইরাল হয়ে যায়। গ্রেফতার ডাকাত আমিনুল উপজেলার কালাইয়া ইউপির ২নং ওয়ার্ডের ইকবাল মৃধার ছেলে।
ওই ডাকাতের নাম আমিনুল ইসলাম (২৫)। যৌথ বাহিনীর সদস্যরা আমিুনুলসহ ৭ ডাকাতকে গ্রেফতার করার পর ওই ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
ছবিতে দেখা গেছে, সাদা পাঞ্জাবির উপরে কালো কোট পরিহিত আওয়ামী লীগের এমপি আ স ম ফিরোজের ডান পাশে কালো প্যান্ট গায়ে চেক শার্ট ও ডান হাতে মোবাইল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন ডাকাত আমিনুল। তার ডান পাশে এমপি পুত্র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক রায়হান সাবিক ও এমপির বাম পাশে তার ভাতিজা কালাইয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহম্মেদ মনির মোল্লা দাঁড়িয়ে আছেন। পিছনে অন্যান্য নেতা কর্মীরা রয়েছেন।
সম্প্রতি বাউফলে বেশ কয়েকটি ডাকাতির ঘটনার পর জড়িতদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত ছিল। মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) পুলিশ, র্যাব ও ডিবির সমন্বয়ে গঠিত যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে উপজেলার দাশপাড়া গ্রাম থেকে সুমন আকন নামে একজনকে আটক করে। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী বরিশালের গৌরনদীর বাটাজোড় গ্রামের সোলায়মান হোসেন ওরফে রনি, উপজেলার কালাইয়া গ্রামের বাচ্চু সরদার, একই গ্রামের উজ্জাল হোসেন ওরফে সাহেদ, আমিনুল ইসলাম, পূর্ব কালাইয়া গ্রামের জুলহাস ওরফে জুলফু ডাকাত, কনকদিয়া ইউনিয়নের ফারুক হোসেন ও পিরোজপুর জেলার নজরুল শেখকে আটক করে। এসব ডাকাতদের শনাক্ত করতে পুলিশ তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় নেয়।
আটক ডাকাতদের মধ্যে কালাইয়া গ্রামের আমিনুল ইসলাম হলেন আশ্রয়দাতা। তার সহযোগিতায় সম্প্রতি উপজেলার দাশপাড়া গ্রামে বসবাসরত বন বিভাগের এক আইন কর্মকর্তার বাসাসহ বেশ কয়েকটি বাড়িতে ডাকাতি করে। ডাকাত আমিনুলকে গ্রেফতারের পর তাকে ছাত্রলীগের কর্মী উল্লেখ করে ছেড়ে দেয়ার জন্য ওসিকে এক প্রভাবশালী নেতা চাপ প্রয়োগ করেন বলে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়।
এসব ডাকাতদের গ্রেফতারের খবরে সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে এলেও ডাকাত আমিনুল ইসলামের সাথে এমপি আ স ম ফিরোজ, তার ছেলে রায়হান সাকিব ও ভাইয়ের ছেলে কালাইয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফয়সাল আহম্মেদ মনির মোল্লার একাধিক ছবি বুধবার ফেসবুকে ছড়িয়ে পরলে মুহূর্তের মধ্যে তা ভাইরাল হয়ে যায়। উপজেলা জুড়ে শুরু হয় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি (একাংশ) জসিম উদ্দিন ফরাজী বলেন, স্থানীয় এমপি আ স ম ফিরোজ ও তার পরিবারের সদস্যদের সাথে একজন ডাকাতের ছবি ভাবাই যায় না! ডাকাত আমিনুল এমনভাবে তাদের সাথে ছবি তুলেছেন, দেখে মনে হয় তাদের পূর্ব থেকেই চেনাজানা ছিল।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদার বলেন, ফেসবুকে স্থানীয় এমপি ও তার পরিবারের কয়েক সদস্যের সাথে ডাকাত আমিনুলের যে ছবি দেখলাম তা নিন্দনীয়। বলার কোনো ভাষা নেই। ডাকাতের সাথে জনপ্রতিনিধিদের এ ঘনিষ্ঠ ছবি আমাকে হতাশ করেছে। এ ডাকাত চক্রকে গ্রেফতার করার জন্য আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই।
বাউফল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এটিএম আরিচুল হক বলেন, আটককৃত ৭জনই পেশাদার ডাকাত। আমিনুল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তিনি একটি রাজনৈতিক দলের কর্মী। এ কারণে তার দলের এক প্রভাবশালী নেতা আমিনুলকে আটক করায় অসন্তুষ্ট হয়েছেন। তবে তিনি ওই প্রভাবশালী নেতার নাম বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
এবিষয়ে আ স ম ফিরোজ এমপি বলেন, আমার সম্মানহানি এবং বিব্রত করার জন্য একটি পক্ষ এগুলো করছে।