মশিউর মিলন, পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কালাইয়া বন্দরে যুবদল নেতা মো. সরোয়ার উদ্দিন সরদারের বাসভবনের সামনে সরকারি জমি দখল করে ফ্রেন্ডস ক্লাবের সাইনবোর্ড টাঙিয়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা ২০১৫ সালে আধাপাকা একতলা টিনশেট ভবন নির্মাণ করেন। সরোয়ারের পরিবার বিএনপি মতাদর্শের হওয়ায় ওই সময়ে তারা কোনো আইনি সহায়তা পায়নি। সরোয়ার উদ্দিন উপজেলা যুবদলের সাবেক আহবায়ক।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর যুবদল নেতা সরোয়ারের লোকজন ওই ভবনটি ভেঙে ফেলার উদ্যোগ নেয়। তখন আপোষে ভবনটি ভেঙে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ক্লাব কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যে তারা ভবনটির টিনের ছাউনি, জানালা ও দরজা খুলে নেয়। সেই সুযোগে গত মঙ্গলবার (২০ আগষ্ট) সন্ধ্যায় বাউফল সরকারি কলেজের ছাত্রদল সমর্থিত ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস মো. মোসলে উদ্দিন কয়েকজন নারীকে নিয়ে ওই ভবনটি দখল করে বসবাস শুরু করে দেয়। এ নিয়ে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এমনকি মোসলে উদ্দিনের স্বজনেরাও এ বিষয়টি ভালোভাবে নেননি।
মঙ্গলবার (২০ আগষ্ট) রাত ১১ টার দিকে মোসলে উদ্দিনের ভাতিজা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক মো. রিয়াজ পঞ্চায়েতের (৪০) নেতৃত্বে ১০-১২ জনের একটি দল মোসলে উদ্দিনের লোকজন নামিয়ে দিয়ে দখলমুক্ত করার চেষ্টা চালায়। তখন দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেয়। খবর পেয়ে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন ওরফে তুহিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই পক্ষকেই আপোষ করিয়ে দেওয়ার কথা বলে নিভৃত করেন। পরে মোসলে উদ্দিন ওই রাতেই রিয়াজকে প্রধান আসামী করে ছয় ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে আরও ১০-১২জন অজ্ঞাত ব্যক্তির নামে বাউফল থানায় হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ করেন এবং ওই রাতেই রিয়াজকে গ্রেপ্তার করেন।
এ বিষয়ে কালাইয়া ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি (মেম্বার) সদস্য ও ফ্রেন্ডস ক্লাবের তৎকালীন সভাপতি মো. ফকরুল ইসলাম ওরফে ফোরকান মেম্বার বলেন, সাবেক চিফ হুইপ ও স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজকে অবহিত করে সরকারি খাস জায়গায় আধাপাকা টিনশেড ভবনটি নির্মাণ করেছিলাম। ভবনটির মধ্যে সরোয়ার উদ্দিনেরও কিছু জমি রয়েছে। বর্তমানে ওই ভবনটি দখলের বিষয়ে তার কিছুই জানা নাই।
সরোয়ার উদ্দিন সরদার বলেন, তাদের ঘরের সামনের অধা শতাংশ সরকারি জমি, ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তারাই হাটা-চলার জন্য ব্যবহার করে আসছিলেন। তাদের অপরাধ তারা বিএনপি করেন। এ কারণে তাদের পরিবারকে হয়রানি করার জন্য আওয়ামী লীগের লোকজন তাদের ঘরের সামনে তাদের জমি ও খাস জমি দখল করে ক্লাব ঘর নির্মাণ করে। তখন বাঁধা দিলে এবং উপজেলা ভূমি কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করলেও তারা বিএনপি পরিবারের লোক হওয়ায় কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে মোসলে উদ্দিন বলেন, আমি ওই জায়গাটি স্থায়ী বন্দোবস্ত নিয়েছি। দখল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ফ্রেন্ডস ক্লাব তার জায়গায় ঘর নির্মাণ করেছে। তা তারা ভেঙে নিয়েছে। যেহেতু জায়গা তার, ঘরও এখন তার।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বশির গাজী বলেন, কারো বসত ঘরের সামনে তাও আবার আধা শতাংশ জমি, অন্য কাউকে বন্দোবস্তো দেওয়ার সুযোগ নাই। তিনি আরও বলেন, মোসলেন উদ্দিন একজন সম্পদশালী। সরকারি বিধি অনুযায়ী ওই জমি তার বন্দোবস্তো পাওয়ার কথা না। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এবিষয়ে বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শোনিত কুমার গায়েন বলেন, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।