ইব্রাহিম খলিল শার্শা প্রতিনিধি
র্দীঘদিনের কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন পূরণ হলো বেনাপোল অঞ্চলের মানুষের। নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্য ভ্রমণের সুযোগ সৃষ্টিতে তারা বেশ আনন্দিত। মঙ্গলবার ‘রুপসী বাংলা এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি যাত্রী নিয়ে পদ্মাসেতু হয়ে বেনাপোল থেকে ঢাকার উদ্দ্যেশে ছেড়ে গেল।
যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজহারুল ইসলাম বেনাপোল রেলওয়ে স্টেশন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে রূপসী বাংলা এক্সপ্রেসের উদ্বোধন করেন।
বেনাপোল থেকে মাত্র পৌনে সাড়প৩থেকে ৪ ঘণ্টায় ঢাকা যাওয়া যাবে এই আনন্দে ভাসছে বেনাপোলবাসী। তবে আজ বিকেল সাড়ে ৩টায় ছাড়ার কথা থাকলেও ৪টা ৪০ মিনিটে উদ্বোধনের পর ৪টা ৫৫ মিনিটে লোকাল যাত্রীসহ ৯৮৭ জন যাত্রী নিয়ে বেনাপোল থেকে ছেড়ে গেল রুপসী বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনটি, জানান রেলওয়ের বেনাপোল স্টেশনের স্টেশন মাস্টার সাইদুজ্জামান।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা রেজাউল করিম সিদ্দিকী জানান, ঢাকা থেকে কাশিয়ানী জংশন হয়ে বেনাপোল ও খুলনায় নতুন দুই জোড়া যাত্রীবাহী ট্রেন চালু হলো মঙ্গলবার।
বেনাপোল-ঢাকা-বেনাপোল রুটে ‘রূপসী বাংলা’ এক্সপ্রেস সাপ্তাহিক এক দিনের বিরতি রেখে যাতায়াত করবে। বর্তমানে ট্রেনযোগে ঢাকা থেকে রাজবাড়ী হয়ে বেনাপোল যেতে ৭ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট সময় লাগে। পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-বেনাপোল নতুন রুটে যাত্রীদের বেনাপোল যেতে প্রায় ৪ ঘণ্টা সময় বাঁচবে।
৮২৭/৮২৮ ‘রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি ঢাকা থেকে সকাল পৌনে ১১টায় ছেড়ে দুপুর আড়াইটায় বেনাপোল পৌঁছেছে। বিকেল সাড়ে ৩টায় ছেড়ে সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে ঢাকা পৌঁছাবে। এই ট্রেনটির বিরতি স্টেশন যশোর জংশন, নড়াইল, কাশিয়ানী জংশন ও ভাঙ্গা জংশন।
ট্রেনের আসন সংখ্যা ৭৬৮ এবং সাপ্তাহিক বন্ধ সোমবার। ২১ ডিসেম্বর রাত ৮টা থেকে সংশ্লিষ্ট স্টেশনের কাউন্টার এবং অনলাইন ও মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে টিকিট কাটা যাচ্ছে।
৭৬৮ আসনের ট্রেনটির ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে বেনাপোল থেকে ঢাকা পর্যন্ত শোভন চেয়ার ৪৫৫, স্নিগ্ধা ৭৫৫, এসি সিট ৯০৫ এবং এসি বার্থের ভাড়া এক হাজার ৩৫৫ টাকা। সব শ্রেণির ভাড়ার সাথে সরকার নির্ধারিত ভ্যাট যুক্ত হবে।
এদিকে ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি বুধবার বাদে প্রতিদিন দুপুর ১টায় ঢাকার উদ্দেশে বেনাপোল থেকে ছেড়ে যাবে। এই ট্রেনটি যশোর জংশন, মোবারকগজ্ঞ, কোর্টচাদপুর, দর্শনা, চুয়াডাঙ্গা, আলমডাঙ্গা, পোড়াদহ, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ি, ফরিদপুর, ভাঙ্গা হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ভারত চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ডিরেক্টর মতিয়ার রহমান বলেন, স্বল্প সময়ে ট্রেনে আরামদায়ক ভ্রমণে যাত্রীর সংখ্যা যেমন বাড়বে তেমনি আমদানিকৃত পণ্য এবং স্থানীয় কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য কম সময়ে ঢাকায় পৌঁছে যাবে। ফলে নানা দিক থেকে উপকৃত হবে এ অঞ্চলের মানুষ।
একজন আমদানি-রফতানিকারক ব্যবসায়ী আনম ফয়সল বলেন, ব্যবসার কাজে আমাকে প্রায়ই ঢাকায় যাতায়াত করতে হয়। বাস ভ্রমণের থেকে ট্রেন ভ্রমণ সব সময় আরামদায়ক এবং নিরাপদ। নতুন রুটের এই ট্রেন আমাদের জন্য দারুণ সুখবর। আমরা দিনে দিনে ঢাকায় কাজ শেষ করে বেনাপোলে ফিরতে পারব।
বেনাপোল রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার সাইদুজ্জামান জানান, বর্তমানে বেনাপোল রেল স্টেশন থেকে ঢাকা-বেনাপোল রুটে ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’, খুলনা-কলকাতা রুটে ‘বন্ধন এক্সপ্রেস’ ও খুলনা-বেনাপোল রুটে ‘বেতনা এক্সপ্রেস’ সার্ভিস চালু রয়েছে। আগে বেনাপোল এক্সপ্রেস যমুনা সেতু হয়ে ঢাকায় যেত। ২ নভেম্বর থেকে পদ্মা পাড়ি দিয়ে বেনাপোল এক্সপ্রেস ঢাকায় চলাচল শুরু করেছে। পদ্মা পাড়ির সুযোগে রেল ভ্রমণে যাত্রীর সংখ্যা সামনের দিনে আরো বাড়বে। নতুন ‘রুপসী বাংলা’ এক্সপ্রেস চালু হলে ঢাকা-বেনাপোলের দূরত্ব ও সময় অর্ধেকে নেমে আসবে।
এদিকে রুপসী বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনটি প্রথম দিনেই দেরিতে ছাড়ায় যাত্রীরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।
অপরদিকে রুপসী বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনটির যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার ‘ঝিকরগাছা রেলস্টেশনে’ যাত্রা বিরতির দাবিতে সর্বস্তরের জনগণ রেলস্টেশনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।