নিজস্ব প্রতিবেদক:
নিয়োগ জালিয়াতি, অসময়ে বিজ্ঞপ্তি, শাখা খোলার পূর্বেই নিয়োগ ও কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষর জালিয়াতি স্বত্ত্বেও মহামান্য হাইকোর্টের আদালতের আদেশকে ঢাল বানিয়ে এমপিওভুক্তির বিস্তর অভিযোগ উঠছে শিক্ষক সামছুল আল আমিনের বিরুদ্ধে।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা শিয়ালকোল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ মেমোরিয়াল হাই স্কুল এন্ড কলেজের (স্কুল শাখা) শিক্ষক সামছুল আল আমিনের ১২ বছর পর এমপিওভুক্তি হওয়ায় তার সাথে ওই সময়ের অন্যান্য প্রার্থীগন বিস্মিত হয়ে পড়ছেন।
এদিকে শিক্ষক সামছুল আল আমিনের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অবৈধ ঘোষনা করে জোড়ালোভাবে তদন্তের দাবী তুলছেন দুলাল হোসেন, আমির হোসেনসহ অন্যান্য প্রার্থীগণ।
জানা যায়, গত রোববার (২৮ এপ্রিল) এমপিও শিক্ষক সামছুল আল আমিন যোগদান করা নিয়ে বিদ্যালয় পাড়ায় চলছে নানা সমালোচনা। তিনি খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে ২০১১ সালে বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। পরে তাকে নিয়মিত করার জন্য তখনকার অধ্যক্ষ ইয়াকুব আলী চেষ্টা করেন। কিন্তু তখন পদ না থাকায় তাকে আর নিয়মিত করা যায়নি। এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিষয় ভিত্তিক শিক্ষকের পদ সংখ্যা ১টি। তবে অতিরিক্ত শ্রেনি শাখা মিলিয়ে ওই প্রতিষ্টানে ২ জন সমাজ বিজ্ঞান সহকারী শিক্ষকের পদ রয়েছে। কিন্তু ইতোপূর্বেই একই পদে ৩ জন শিক্ষক কর্মরত আছে। সে হিসেবে কোন প্রকার পদ না থাকা সত্বেও ৪র্থ শিক্ষক হিসেবে আল আমিন এমপিও ভুক্ত হয়।
দীর্ঘ ১২ বছর পর আদালতের আদেশ পেয়ে সদ্য চাকুরিতে যোগদানকৃত সামছুল আল আমিন শিক্ষক হিসেবে যোগদান করা নিয়ে বিদ্যালয় পাড়ায় সৃষ্টি হচ্ছে নানা কৌতুহল।
এ বিষয়ে প্রার্থী আমির হোসেন বলেন, আমি ওই বিদ্যালয়ে ২০১১ সালে সেপ্টেম্বর মাস হয়ে ২০২০ সাল পর্যন্ত খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলাম। ঐ সময় আলামিনসহ বেশ কয়েকজন খন্ডকালীন শিক্ষক কর্মরত ছিলো। ২০১৩ সালের কোন এক সময় প্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত শ্রেণি শাখা অনুমোদন পায়। তখন থেকেই আল আমিন অধ্যক্ষকে টাকা দিয়ে গোপনে নিয়োগ ও এমপিওভুক্ত হবার চেষ্টা করে আসছিল। ২০১৩ সালের শেষের দিকে সমাজ বিজ্ঞানে শিক্ষক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হলে আমিসহ খন্ডকালীন অনেক শিক্ষকই নিয়মিত শিক্ষক হিসাবে চাকুরী পেতে আবেদন করি। কিন্তু তার আলোকে কোন প্রকার নিয়োগ পরীক্ষা অদ্যবধি পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়নি। যেখানে ২০১৩ শাখা খোলা হলো এবং একই বছর শেষের দিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলো সেখানে ২০১১ সালে কিভাবে আল আমিনের নিয়োগ হলো তা বোধগাম্য নয়।
আল আমিনের বিষয়ে বড় ধরণের জালিয়াতে সংঘঠিত হয়েছে বলে মনে করেন খন্ড কালিন শিক্ষকেরা। নিয়োগ কমিটির জালিয়াতি ঢাকতে মহামান্য হাইকোর্টে নির্দেশনাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। নিয়োগ সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবী করেন তারা।
নিয়োগ কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আল আমিনের নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে তার জানা নেই। যদি নিয়োগের কোন কাগজপত্রে তার স্বাক্ষর ব্যবহার করা হয়ে থাকে তাহলে তা তার নিজের দেওয়া নয়, তা জালিয়াতি করা হয়েছে।
যোগদান বিষযে শিক্ষক সামছুল আলম বলেন, হাইকোর্টে আদেশ নিয়ে আমি যোগদান করছি। এছাড়া আর কিছু বলতে পারবো না।
এ বিষয়ে অধ্যক্ষ মোঃ মাসুদ রানা ওয়াসিম জানান, আল আমিনের নিয়োগের বিষয়টি সাবেক অধ্যক্ষের কর্মকালীণ সময়কার, ঐ শিক্ষককের নিয়োগ সংক্রান্ত কোন জালিয়াতি হয়ে থাকলে তা তার জানা নেই।
শিক্ষক আল আমিনের নিয়োগ বিষয়ে জানতে চাইতে সাবেক অধ্যক্ষ ইয়াকুব আলী জানান, এতোদিন পর আমার কিছুই মনে নেই। কিভাবে এটা করেছে তাও জানি না। নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন ও অন্যান্য প্রার্থীগনের মতে কখনোই এ নিয়োগ পরীক্ষা হয়নি এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু বলবো না।