নজরুল ইসলাম, জেলা প্রতিনিধি:
সিরাজগঞ্জে টেকনিক্যাল এন্ড বিএম ও কৃষি এবং আইডিয়াল কলেজ কর্মচারীদের পরিচালনায় চার বছর ধরে একটি কক্ষে রাতভর চলে আসছিল মাদক ও জুয়ার আসর। এতে বাঁধা দিলে নানান ভয়ভীতি দেখানো হয় স্থানীয়দের। এছাড়া মাদক ও জুয়া খেলার রুম বরাদ্দ দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে দুটি প্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধে। এনিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকেরা।
জানা যায়, গত মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) রাত ৮ টার দিকে সদর উপজেলার শিয়ালকোল ইউনিয়নের শেখ আব্দুল হামিদ টেকনিক্যাল এন্ড বিএম ও কৃষি কলেজ এবং আইডিয়াল কলেজের কর্মচারীদের (অফিস সহকারি/ল্যাব সহকারি) পরিচালনায় কলেজের একটি অফিস কক্ষে আলোসহ লোকজনের গুঞ্জন শুনতে পায় স্থানীয় কয়েকজন। পরে জুয়ারিদের হাতেনাতে ধরতে কক্ষের দরজা তালা লাগিয়ে লোকজন ঢাকতে শুরু করে। এসময় জুয়ারিরা টের পেয়ে গুরুত্বপূর্ন নথি এলোমেলো করে দরজা ভেঙে পালিয়ে যায়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে কোন উপায় না পেয়ে একপর্যায়ে কলেজ ও ম্যানেজিং কমিটি জুয়ারিদের উপস্থিত করে স্থানীয় লোকজনের কাছে ক্ষমা চেয়ে বিচারের আশ্বাসে ছেড়ে দেওয়া হলেও প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও ম্যানেজিং কমিটির একাধিক সদস্য বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে আসছে। এনিয়ে এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভ ও আইনশৃঙ্খলা অবনতি হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।
জুয়া খেলার উপস্থিত ব্যক্তিরা হলেন, শেখ আব্দুল হামিদ টেকনিক্যাল এন্ড বিএম ও কৃষি কলেজের অফিস সহকারি মুঞ্জুরুল আলম মজনু, আইডিয়াল কলেজের অস্থায়ী ল্যাব সহকারী ফিরোজ খান, বিপ্লব কুমার সাহা (ভম্বল), সিরাজগঞ্জ সরকারি এতিমখানার কর্মচারী দুলাল হোসেন ও ধান ব্যবসায়ী ওয়ালিদ।
স্থানীয়রা জানান, অনেকদিন ধরে কলেজের একটি কক্ষে নিয়মিত জমজমাটভাবে জুয়া খেলা ও মাদকসেবন চলে আসছিল। এখানকার বিএম ও আইডিয়াল কলেজ দুটি প্রতিষ্ঠান প্রধানের সম্মতি, বিদ্যালয়ের কর্মচারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার কেউ সাহস পায়না। প্রতিবাদ করতে গেলে টাকা দিয়ে পুলিশ এনে ধরিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে জেলখানায় ভরিয়ে দিবে বলে নানান ভয়ভীতি দেখানো হয়।
তারা আরো জানান, বিদ্যালয় নিরাপদ স্থান মনে করে দীর্ঘদিন যাবৎ কলেজে সন্ধ্যা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত নানান অপকর্মসহ রাতে বিভিন্ন এলাকার জুয়াড়ীদের একত্রিত করে আগত জুয়াড়িদেরকে নিয়ে স্কুল/কলেজের শ্রেণি কক্ষে প্রায় লক্ষাধিক টাকার খেলা চালানো হয়। আমরা ভয়ে কিছু বলতে পারি না। ছেলে মেয়ের ভবিষ্যত তাদের হাতে। বিদ্যালয়ের সুনাম, ছেলে-মেয়ের বেতন, রেজিস্ট্রেশন, সার্টিফিকেটসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা তারাই দিয়ে থাকেন। এজন্য অনেকেই অনেক কিছু দেখেও দেখেন না। তারা স্থায়ীভাবে মাদক সেবন, জুয়া খেলা বন্ধ এবং সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের গ্রেফতার ও চাকুরিচ্যুত করনে প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ বিষয়ে শেখ আব্দুল হামিদ টেকনিক্যাল এন্ড বিএম ও কৃষি কলেজ এর অফিস সহকারি মুঞ্জুরুল আলম মজনু মুঠো ফোনে জুয়া খেলার বিষয়ে অস্বীকার করেন। পরে বিদ্যালয় কক্ষের ভিডিওতে দেখা ও দরজা ভেঙে ফেলার বিষয়ে বলা হলে ফোন কেটে বন্ধ করে রাখেন।
শেখ আব্দুল হামিদ আইডিয়াল কলেজ এর ল্যাব সহকারি(অস্থায়ী) ফিরোজের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।
সিরাজগঞ্জ সরকারি এতিমখানার কর্মচারী দুলাল হোসেন বলেন, আমি জুয়া খেলি নাই তবে অবসরে আড্ডা করছিলাম।
এ বিষয়ে শেখ আব্দুল হামিদ টেকনিক্যাল এন্ড বিএম ও কৃষি কলেজের অধ্যক্ষ দিলারা জাহান বলেন, ঘটনাটি জানতে পেরেছি। যেহেতু এখন প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ রয়েছে। খোলার সাথে সাথেই প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
শেখ আব্দুল হামিদ আইডিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ মীর মামুন হাসান রুবেল বলেন, যে ঘটনাটি ঘটেছে অবশ্যই নিন্দনীয়। গত (৪ আগস্ট) রোববার এ নিয়ে বসার কথা ছিল কিন্তুু দেশের পরিস্থিতির কারনে হয়নি। অবশ্যই আমার প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
সিরাজগঞ্জ জেলা শিক্ষা অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. আফছার আলীর মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়ায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এসব বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ সহকারি সচিব (নীতি ও সংস্কার) মো: রফিকুল ইসলাম বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের কর্মকান্ড মোটেই উচিত নয়। উপজেলা, জেলা বা বিভাগ এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে অভিযোগ বা ভিডিও ভিত্তিত্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা যেতে পারে।