মুফতি খোন্দকার আমিনুল ইসলাম আবদুল্লাহ ।
তখন একদিকে পৃথিবীতে নববি সূর্যের আলোকরশ্মি কিরণ ছড়ায়, অন্যদিকে পারস্য- সাম্রাজ্যে কিসরার শাহি প্রাসাদে ভূ-কম্পন সৃষ্টি হয়। এর ফলে কিসরার শাহি প্রাসাদের ১৪টি চূড়া(১২) ভূপাতিত হয়। পারস্যের সাওয়া উপসাগর আচমকা শুকিয়ে যায়। এ ছাড়া পারস্যের সেই অগ্নিকুন্ড, যা ১ হাজার বছর ধরে একমুহূর্তের জন্যও নেভেনি, তা-ও নিজ থেকেই নিভে যায়।(১৩)
বস্তুত, এসব ঘটনা ছিল অগ্নিপূজা এবং সর্বপ্রকার অজ্ঞতা ও ভ্রান্তির পরিসমাপ্তির সূচনা। হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী রোম ও পারস্য সাম্রাজ্য পতনের ইঙ্গিত।
সহিহ হাদিসে(১৪) বর্ণিত আছে, রাসূল (ﷺ) এর জন্মের সময় তাঁর সম্মানিত মায়ের উদর থেকে এমন একটি নূর প্রকাশিত হয়েছিল, যার আলোয় পৃথিবীর পূর্ব থেকে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত আলোকিত হয়ে যায়। এ ছাড়া কোনো বর্ণনায় রয়েছে, রাসূল (ﷺ) তাঁর জন্মের সময় দুহাতের ওপর ভর দেওয়া ছিলেন। এরপর হাতে একমুঠো মাটি নিয়ে আকাশের দিকে তাকান।(১৫)
টীকা :
(৩) দালায়িলে আবু নায়িমে মারফু সূত্রে বর্ণিত আছে; জিবরিল আ. বলেছেন, ‘আমি পৃথিবীর পূর্ব থেকে পশ্চিম প্রান্ত সফর করেছি; কিন্তু বনু হাশিমের চেয়ে সম্ভ্রান্ত ও মর্যাদাশীল কোনো বংশ দেখিনি। মাওয়াহিব।
(৪) ইবনু হিশামের মতে, নাজারের অপর নাম কুরাইশ। তাঁর বংশধররাই ‘কুরাইশি’ বলে খ্যাত। তাঁর বংশোদ্ভূত না হলে কাউকে কুরাইশি বলা যায় না। তবে অনেকে বলেন, ফিহর ইবনু মালিকের অপর নাম কুরাইশ।- অনুবাদক।
(৫) সিরাত ইবনি হিশাম।
(৬) রাসূল (ﷺ) এর জন্মের সঙ্গে হস্তিবর্ষ বা হাতিবাহিনীর ঘটনা জড়িয়ে রয়েছে। এটা হলো সুরা ফিলে বর্ণিত ইয়ামেনের বাদশাহ আবরাহা কর্তৃক কাবাঘর ধ্বংস করার অভিযানের বছরের কথা। বেশির ভাগ সিরাত-রচয়িতার অভিমত অনুযায়ী, এ ঘটনা রাসূল (ﷺ) এর জন্মের ৫০ অথবা ৫৫ দিন আগে ঘটেছিল।
(৭) সিরাতে মুগলতাই: ৫।
(৮) দুরুসুত তারিখিল ইসলামি: ১৪।
(৯) এ সম্পর্কে অনেক বর্ণনা রয়েছে, তবে ইবনু আসাকির এ বর্ণনাটি সঠিক বলেছেন।
(১০) মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাকের সূত্রে তারিখু ইবনি আসাকির: ১/১৯-২০। (আদম আ. থেকে রাসূল (ﷺ) পর্যন্ত সময়ের ব্যবধান-সংক্রান্ত যে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, এই বর্ণনার নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র নেই। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে ইমাম ইবনু হাজমের আল-মিলাল ওয়ান-নিহাল গ্রন্থ দেখতে পারেন।- অনুবাদক।)
(১১) এ বিষয়ে সবাই একমত যে, রাসূল (ﷺ) এর জন্ম রবিউল আউয়ালের সোমবার দিনে হয়েছিল; কিন্তু কোন তারিখে, সেটা নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে বিস্তর মতপার্থক্য রয়েছে। তবে জন্মতারিখ নিয়ে চারটি প্রসিদ্ধ মত রয়েছে-২, ৮, ১০ ও ১২ রবিউল আউয়াল। হাফিজ মুগলতাই রাহ, ২ তারিখকে গ্রহণ করে অন্যগুলোকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। তবে প্রসিদ্ধ হচ্ছে ১২ তারিখের বর্ণনা। ইবনু ইসহাকও এ তারিখ গ্রহণ করেছেন। ইবনু হাজার আসকালানি রাহ, ১২ তারিখের বর্ণনার ওপর সবাই একমত বলে দাবি করেছেন। এমনকি আল্লামা ইবনুল আসির তাঁর আল কামিল ফিত তারিখ গ্রন্থে এ তারিখই গ্রহণ করেছেন। গবেষক মাহমুদ পাশা মিসরি জ্যোতির্বিজ্ঞানের আলোকে ৯ তারিখ গ্রহণ করেছেন। এটি সবার মতের বিপরীত এবং সূত্রবিহীন উক্তি। যেহেতু চাঁদ উদয়ের স্থান বিভিন্ন, তাই গণনার ওপর এতটুকু বিশ্বাস ও নির্ভরতা জন্মায় না যে, এর ওপর ভিত্তি করে সবার বিরোধিতা করা যাবে।
(১২) আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া।
(১৩) সিরাতে মুগলতাই: ৫। (রাসূল (ﷺ) এর জন্ম-সংক্রান্ত এ ধরনের বিভিন্ন ঘটনা সিরাত ও ইতিহাসের অনেক গ্রন্থে রয়েছে; কিন্তু এগুলো নির্ভরযোগ্য সূত্রে বর্ণিত হয়নি। কোনো কোনো ইতিহাসবিদ তাঁদের রচনায় এসব বর্ণনা উল্লেখ করলেও অনেকে বর্ণনার মান যাচাই করেননি। তাই এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে মোল্লা আলি কারি রাহ.-এর আল-মাসনু ফি মারিফাতিল হাদিসিল মাওজু গ্রন্থের ভূমিকায় শায়খ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রাহ.-এর আলোচনাটি দেখে নিতে পারেন। এ ছাড়া আল্লামা সাফিউর রাহমান মুবারকপুরি রাহ.-এর আর-রাহিকুল মাখতুমেও এ সংক্রান্ত আলোচনা দেখতে পারেন।- অনুবাদক।)
(১৪) ইবনু হাজার আসকালানি রাহ, বলেন, ইবনু হিব্বান ও হাকিম এ বর্ণনাকে সহিহ বলেছেন। আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া, নাশরুত তিব: ১/১৮।
(১৫) আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া।
লেখা :
বই – সিরাতে খাতামুল আম্বিয়া ﷺ ; পৃষ্ঠা : ১৮-২১
লেখক : মুফতি মুহাম্মদ শফি (রহ.); অনুবাদক : ইলিয়াস মশহুদ
চলবে ইনশাআল্লাহ …
*সীরাত সিরিজ*