আবুজর গিফারী,
বেড়া উপজেলা প্রতিনিধি।
ইন্দোনেশিয়া জনসংখ্যার দিক দিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম একটি মুসলিম দেশের নাম। বিশ লাখ বর্গকিলোমিটার এই বিশাল ভূখণ্ডে প্রায় ত্রিশ কোটি জনগণ বসবাস করে। এই জনগণের আটাশি ভাগ হল মুসলিম। বিশ্বের বৃহত্তম এই দেশে তিনশ বছর পর্যন্ত হল্যান্ডের ঔপনিবেশিকতা ছিল। শতশত বছর ধরে নির্যাতিত, নিপীড়িত ইন্দো মুসলমান অবশেষে ১৯৪৫ সালের আগস্ট মাস থেকে মুক্তিসংগ্রাম শুরু করে। শুরু হয় ডাচ সেনাদের সাথে তুমুল যুদ্ধ। শেষমেশ ১৯৪৯ সালের ২ নভেম্বর ইন্দোনেশিয়া স্বাধীনতা লাভ করে। হল্যান্ড আর ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতাকামীদের নেতা ডক্টর আহমদ সুকর্ণ ও আহমদ হাত্তার মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী ডাচ সেনারা ইন্দোনেশিয়া ত্যাগ করতে সম্মত হয়। সে সময় ইন্দোনেশিয়াকে হল্যান্ডের ভারত বলা হত। স্বাধীনতা লাভের পর ডক্টর আহমদ সুকর্ণ ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৬৫ সালে জেনারেল সুহার্তোর নেতৃত্বে এক সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হবার আগ পর্যন্ত তিনি এই পদে বহাল ছিলেন। এরপর থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত জেনারেল সুহার্তোই ছিলেন ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট।
ইন্দোনেশীয় জাতীয়তাবাদ রক্ষা করার জন্য স্বাধীনতাকামী যোদ্ধাদের ভিড়ে ইন্দোনেশিয়াকে দখলদারদের কালোহাত থেকে মুক্ত করতে আল্লাহর শরিয়াহ কায়েমের জন্য লড়াইকারী মুজাহিদদের সংখ্যাও কম ছিল না। এঁদের প্রধান কমান্ডার ছিলেন মুজাহিদ আগুস সালিম। তাদের জিহাদ ও কুরবানি ইন্দোনেশিয়ার ইতিহাসে আজও জ্বলজ্বল করছে। তবে আফসোস! বিশ্বের বৃহত্তম এই মুসলিম দেশে ইসলামের শেকড় প্রোথিত হওয়া এবং হল্যান্ড ঔপনিবেশিকদের বিরুদ্ধে জিহাদের ইতিহাস আমরা খুব কম লোকই জানি। এই আফসোসটা প্রকাশ করেছেন আরবের প্রথিতযশা সাহিত্যিক ও গবেষক শাইখ আলি তানতাবি। তার লিখিত ‘সুওয়ারুন মিন শারক্বি আসিয়া ফি ইন্দোনেসিয়া’ কিতাবে এ ব্যাপারে খুব সুন্দরভাবে আলোকপাত করেছেন।
দখলদার ডাচ সেনাদের বিরুদ্ধে ইন্দোনেশীয় মুজাহিদদের পাশাপাশি আত্নসম্ভ্রবোধ-সম্পন্না ইন্দো নারীরাও ছিল! ইন্দোনেশিয়ার জিহাদে তাদের রয়েছে স্বর্ণোজ্বল ইতিহাস। তাদের অনেকেই বীরাঙ্গনা খাওলার ভূমিকায় অবতরণ করেছিলেন। এদেরই একজন ছিলেন বীরাঙ্গনা ‘রাসুলা সাঈদ’। ইন্দোনেশীয়রা আজও তার কথা শ্রদ্বাভরে স্মরণ করে। ডাচ সেনারা মুজাহিদাহ ‘রাসুলা সাঈদ’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছিল। তখন উম্মাহর এই বীরাঙ্গনা ভীরু ইন্দো পুরুষ জাতকে সম্বোধন করে একটি কটাক্ষমূলক কথা বলেছিলেন, যা শতাব্দীর পর শতাব্দী পর্যন্ত উম্মাহর বুঝমান মুসলমানদের জন্য সবক হয়ে থাকবে। জানেন কী বলেছিলেন রাসুলা সাঈদ?!
তিনি বলেছিলেন-
“হে পুরুষ জাত, তোমাদের যদি নির্যাতন আর কারাগারের ভয় থাকে, তাহলে তোমরা নারী হয়ে যাও, যাতে আমরা নারীরা তোমরা পুরুষদের স্থলাভিষিক্ত হতে পারি!”