সাব্বির আকাশ হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি
হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার ৫টি চা বাগানের ভবিষ্যৎ নিয়ে বাগান ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ হতাশার মধ্যে পড়েছেন। বিগত ৪ বছর ধরে লোকসান টানতে হচ্ছে বাগান গুলোকে। দিনে দিনে লোকসানের পরিমান বেড়েই চলেছে। গত ৪ বছরে শ্রমিকের মজুরি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, আবাসন খরচ ও ঔষধসহ বিভিন্ন উৎপাদন খরচ কয়েক গুণ বেড়েছে। সে অনুযায়ী চায়ের বাজার দর বৃদ্ধি পায়নি। এ অবস্থায় ৫টি চা বাগানের ব্যাংক দেনার পরিমান বেড়ে গেছে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ঋণের পরিমান কমিয়ে দিয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে উপজেলার ৫ টি চা বাগান লোকসানের পড়ে যে কোন সময় বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মাধবপুর উপজেলার ৫টি চা বাগানের মধ্যে তেলিয়াপাড়া ও জগদীশপুর এ দুটি ন্যাশনাল ট্রি কোম্পানির, সুরমা, নোয়াপাড়া ও বৈকন্ঠপুর চা বাগান ব্যক্তি মালিকানাধীন। বিশ্বের চা উৎপাদনে পঞ্চম বাংলাদেশ। কিন্তু রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদন বৃদ্ধিই এখন গলার কাঁটা হয়ে উঠেছে ।
বাগান মালিক দের উৎপাদনের পরও কস্ট অব প্রডাকশনের (সিওপি)চেয়ে কম দামে বিক্রি হচ্ছে চা। এতে চা খাতে নতুন বিনিয়োগ কমে যাওয়া, বাগান বিক্রি করে দেয়া চা উৎপাদনে বড় ক্ষত তৈরি হচ্ছে।
দেশে চা উৎপাদন প্রতি বছরই প্রায় রেকর্ড উৎপাদনের দিকে যাচ্ছে। এর পরও উৎপাদন খরচের সঙ্গে তাল মিলিয়ে লোকসানের ঘুরপাক খাচ্ছেন বাগান মালিকরা। গত এক যুগে মুজুরি, জ্বালানি, প্যাকেজিংসহ বিভিন্ন খরচ বাড়লেও চায়ের দাম তুলনা মূলক কমেছে।
একই সঙ্গে দেশীয় ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান গুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা মূলক দামে চা ক্রয়ে অনীহায় প্রতিটি নিলামেই অবিক্রীত থাকছে বিপুল পরিমান চা।দেশে চা ক্রেতাদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ইস্পাহানি চা কোম্পানি। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে আবুল খায়ের কনজিউমার প্রডাক্টস লিমিটেড। তৃতীয় স্থানে মেঘনা টি, চতুর্থ ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড এবং চা ক্রয়ে পঞ্চম স্থানে রয়েছে ড্যানিশ ফুডস লিমিটেড।
তেলিপাড়া ন্যাশনাল টি কোম্পানিতে খোজ নিয়ে জানাযায় ২০০২২-২০২৩ অর্থ বছরে চায়ের মোট উৎপাদন ৫০৮০০০ কেজি। বাজার দর ছিল ১৮০ দশমিক.০৪ টাকা।তেলিয়াপাড়া ন্যাশনাল টি কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) মো: রাহেল রানা জানান এক কেজি চা তৈরি করতে খরচ পরে ৩২৬ দশমিক ৭২টাকা। ন্যাশনাল টি কোম্পানি লিমিটেডের জিএম এমদাদুল হক (মিঠু) জানান এক কেজি চা উৎপাদন খরচ হয় যে পরিমান তার অর্ধেক পয়সাও বিক্রি হয়নি। বছরের পর বছর মালিক পক্ষ লস দিতে হচ্ছে। উৎপাদন হচ্ছে সঠিক। কিন্তু বাগান কর্তৃপক্ষ ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সরকার সঠিক মূল্য নির্ধারণ করে দিলে চা শিল্প আলোর মুখ দেখতে পারবে।
চায়ের দাম অস্বাভাবিক কমে যাওয়ার বিষয়ে আমরা খুবই শঙ্কিত। যারা বাগানের চা কিনে নিয়ে ব্র্যান্ডিং করে তাদের প্যাকেটজাত চায়ের দাম ঠিকই বেড়েছে। খুচরা পর্যায়ে এককাপ চায়ের দামও বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। কিন্তু যারা উৎপাদক তারাই লোকসানে রয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে অনেক চা বাগান বন্ধ হয়ে যাবে।লক্ষ লক্ষ৷ চা শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে।
বর্ডার দিয়ে চা প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা অব্যাহত রাখাসহ চা নীতিমালা সংশোধন জরুরি বলে মনে করছেন চা শ্রমিক নেতারা।চা শ্রমিকদের দাবি সিন্ডিকেটের কারনে বছরের পর বছর বাগান মালিকরা লোকসান গুনতে হচ্ছে। সিন্ডিকেটের কবল থেকে রক্ষা করতে হবে। আমাদের বাগান থেকে পাতা নিয়ে প্যাকেটজাত করে তিন গুন দামে বিক্রি করছে তারা বাজারে। লোকাল বাজারে কিন্তু চায়ের দাম কমেনি। সরকার এসব বিষয়ে সুদৃষ্টি না দিলে চা বাগান মালিক পক্ষ লোকসানে বাগান বন্ধ করে দিবে লক্ষ লক্ষ শ্রমিক বেকার হয়ে পরবে ।