মোঃ আমিরুল ইসলাম পঞ্চগড় জেলা প্রতিনিধি।
পঞ্চগড়ে সরকারি অনুদান বণ্টনে অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতির অভিযোগে নতুন করে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় সূত্রের দাবি, জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক একেএম ওয়াহিদুজ্জামানের সহোযোগিতায় মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে নিবন্ধিত কিছু অকার্যকর সমিতির নামে সরকারি অনুদান পাচ্ছেন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেত্রীরা। কাগজে-কলমে সক্রিয় হলেও বাস্তবে এসব সমিতির কার্যক্রম নেই। তবু সমিতির সভাপতিরা নিয়মিত সরকারি অর্থ উত্তোলন করে নিজেদের পকেটে ভরছেন। এর ফলে প্রকৃত কর্মক্ষম ও দরিদ্র নারীরা বছরের পর বছর বঞ্চিত হচ্ছেন।
২০২৪-২৫ অর্থ বছরে পঞ্চগড় জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মাধ্যমে ৬০টি মহিলা সমিতিকে মোট ২১ লাখ ১৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তদন্তে জানা গেছে, এসব সমিতির বেশির ভাগই স্থানীয় ক্ষমতাধর আওয়ামী লীগ নেত্রীদের নিয়ন্ত্রণে। কেউ কেউ দীর্ঘদিন পালাতক বা মামলার আসামি হলেও সরকারি অনুদান পাচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, পঞ্চগড় পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের ‘সাদিয়া মহিলা সমিতি’র কোনো কার্যক্রম নেই। সভাপতি রেবেকা নাসরিন সুমি নথিপত্র মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে আছে বললেও সাধারণ সম্পাদকের নামও ঠিক বলতে পারেননি। শহরের জালাসির ‘ইভা উন্নয়ন সংস্থা’ও কেবল কাগজে-কলমে আছে। সভাপতি সাংবাদিকদের হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেন।
বোদা উপজেলার মাড়েয়া মহিলা সমিতি এবার ৫০ হাজার টাকার বিশেষ বরাদ্দ পায়। সাধারণ সম্পাদক দাবি করেন, কার্যক্রম চলছে, কিন্তু সদস্যরা অভিযোগ করেন, “কোনো সভা-সমাবেশ হয়নি, শুধু কয়েকটি সেলাই মেশিন এবং একবার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।”
অন্যদিকে দর্জিপাড়া মহিলা উন্নয়ন সংস্থার সভানেত্রী মোমেনা সাংবাদিকদের হুমকি দিয়ে বলেন, “আমার কাগজপত্র সব ঠিক আছে, যাচাই-বাছাই করে অনুদান দেওয়া হয়েছে। আপনারা টাকা চাইতে এসেছেন।”
পঞ্চগড় সদর উপজেলার ২৮টি সমিতিকে চলতি বছরে ৩২ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২৪টি সমিতি মহিলা আওয়ামী লীগ ও যুব মহিলা লীগের নেত্রীদের নিয়ন্ত্রণে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ক্ষমতাসীন থাকার সুবাদে দীর্ঘদিন ধরে এই সমিতির নামে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।
একতা দু:স্থ মহিলা সমিতির সভাপতি ইয়াসিন প্রধান বলেন, “গত ১৫ বছর ধরে আমরা কোনো সরকারি অনুদান পাইনি। আওয়ামী লীগের প্রভাব এখনও রয়ে গেছে। তারা শুধু কাগজে-কলমে অকার্যকর সমিতি দেখিয়ে টাকা নিয়েছে। আমরা যারা মাঠে কাজ করছি, তারাই বঞ্চিত হচ্ছি।”
এ বিষয়ে জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক একেএম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, “আমি ডিসি সাহেবের অনুমতি ছাড়া মন্তব্য করতে পারব না। নো কমেন্টস”
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) কামী গোলাম তৌসিফ বলেন, “সমিতির বিষয়ে যে তথ্য চাওয়া হয়েছে, আপনার সাথে আমি একেবারে সহমত। আপনি যে অভিযোগ সম্পর্কে বলছেন তা যদি হয়ে থাকে তাহলে তিনি প্রতারণা করেছেন। আপনার যে অভিযোগ টি আছে তা আপনার কাছে রাখেন আমি আমার কর্মকর্তার সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলছি।”

