বিপ্লব সাহা,খুলনা ব্যুরো :
আমাগে জায়গা সম্পত্তি নাই ঝুড়ি কোদাল আর শরীর আমাগে বেঁচে থাকার অবলম্বন অন্তনাই দিনমজুরদের আক্ষেপের। সার্বিক দিক থেকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মঙ্গা প্রভাব বিশ্বজুড়ে যেমন সকল শ্রেণির ব্যবসা-বাণিজ্যের উপরে তেমনি সব থেকে বেশি কঠিন মন্দা সময় পার করছে দৈনন্দিন খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষেরা কর্মের অভাবে অর্থনৈতিক অনটনে অনাহার ও অর্ধআহার কঠিন দুঃসময় পার করছে তারা।
একদিকে যেমন কাজ কর্মের সন্ধান নেই অন্যদিকে আবার
প্রতিটা জিনিসের দাম উর্ধ্বগতি। হওয়ার কারণে উচ্চবিত্ত মধ্যবিত্ত কোনো শ্রেণীর মানুষেরাই কাঠামোগতভাবে কোন কাজই করাচ্ছে না।
রড সিমেন্ট ইট বালুসহ এমন কোন দ্রব্য নাই যার মূল্য উর্ধ্বগতি হয়ে দুই থেকে তিন গুণ বৃদ্ধি হয়নি। সবকিছু মিলে দাম উর্ধগতি হওয়ার কারণে এবং দেশের অর্থনৈতিক মন্দা ভাব বিরাজ করায় সকল শ্রেণীর মানুষেরাই গচ্ছিত অর্থ খরচ করতে দ্বিধাবোধ করছে।
যার কারণে আমাদের দৈনন্দিন কাজেরও সংকট হয়ে পড়েছে।
মাত্র কিছুদিন আগেও শুক্রবার বাদে প্রতিদিনই আমাদের কর্মব্যস্ততা ছিল অথচ এখন কাজের অভাবে সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিনের খোঁজাখুঁজি করে কাজ বের করলেও সে ক্ষেত্রে আমরা সঠিক পরিমাণের রোজের বেতন পাচ্ছিনা।
তারপরেও বাজারের প্রতিটা জিনিসের দাম অতিরিক্ত বেশি সে ক্ষেত্রে আমরা কি খেয়ে বাঁচবো তানিয়ে আছি অনেক চিন্তার মধ্যি। কোনরকম ঠেলে মিলে ৫০০ টাকা আয় করলেও সপ্তাহ জুড়ে কাজ মিলতেছে না।
আগে সারা সপ্তাহ জুড়ে আয় করতাম ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা।
সেই তুলনায় এখন মাত্র ১৫শ’ থেকে ১৬শ’ টাকা আয় করতি পারতিছি কোনো রকম।
অথচ সংসারে খাওনের মানুষ ৬ জন। এতে তিন বেলা ভাত খাওয়া তো দূরের কথা নুন আনতে পান্তা ফুরানোর শামিল হইছে আমাগে জীবনে।
দৈনন্দিন কাজ কাম নাই লজ্জার খাতিরে কারোর কাছে হাত পাইতে কিছু চাইয়েও খাতি পারি না। মাস গেলি উপরন্ত দোকানদারগে কাছে দিনা হয়ে জাতি হচ্ছে।
যারা শখ করে বাড়ি বানায় সেইসব মালিকদের কাছে টাকা থাকলিও বর্তমান পরিস্থিতি খারাপ দেখে কেউ টাকা খরচ করে কাজ করাচ্ছে না।
যার কারনে আমাগে মতন ডেলি খাইটে খাওয়া কিষেনগে এহন মরার উপায় হইছে বলে জানিয়েছেন খুলনা নগরীর সাতরাস্তা মোড়ের রাজমিস্ত্রির জুগাইলে আক্কাস মিয়া।
এবিষয়ে খুলনা ঠিকাদার ব্যাবসায়ী প্রতিষ্ঠান মেসার্স রেজা কনেস্ট্রাকশন এর চেয়ারম্যান বজলুর রহমানের সাথে কথা বল্লে তিনি বলেন বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এতটাই মন্দা যার প্রভাব বিশ্বজুড়ে পড়লেও বাংলাদেশেও কোন অংশে কম না।
তিনি বলেন এ অঞ্চলের অনেক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান আছে যারা খুলনা সিটি কর্পোরেশন সহ অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাজ করে কোন রকম টিকেট থাকলেও আগের মতন পর্যাপ্ত শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে কাজ করানো সম্ভব হচ্ছে না।
কারণ প্রতিটা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানে পূর্বে থেকে শ্রমিক নিয়োগ রয়েছে যারা যথারীতি সার্বক্ষণ কাজ করে থাকে তাদের মধ্যেও অতিরিক্ত শ্রমিক ছাঁটাই দিয়ে হাতে গোনা কিছু শ্রমিক রেখে কোন রকম কাজ চালানো হচ্ছে।
তার কারণ সরকারি কাজ হচ্ছে ঠিকই কিন্তু সময় মতন সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বিল পাস করছে না।
যার কারনে আমরা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছি।
এদিকে দেশের আর্থিক ব্যাংকগুলোয় অর্থনৈতিক অবস্থা দুর্বল থাকার কারণে সেখান থেকেও আমরা কোন সহযোগিতা পাচ্ছি না।
আগে যেমন লাগাতার কাজের চাপ ছিল তেমন সরকারি বিলগুলো যথা সময়ে উত্তোলন করে নিয়ে শ্রমিকদের পরিশোধ করলে তারা স্বাচ্ছন্দে কাজ করত।
তখন কাজের চাপের পাশাপাশি অর্থনৈতিক অবস্থা সচ্ছলতা থাকার কারণে বহিরাগত অনেক শ্রমিক আমরা নিয়োগ দিয়ে অতি দ্রুত কাজ সম্পন্ন করে আবার নতুন প্রজেক্টে হাত দিতাম।সে ক্ষেত্রে অতিরুক্ত শ্রমিক প্রয়োজন হতো।
এখন বর্তমান পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে কোন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানে বাইরে থেকে শ্রমিক নিচ্ছে না।
তাছাড়া শহরের যে সকল ছোটখাট কন্টাকটাররা রয়েছে যারা শহরের বিভিন্ন বিল্ডিং ও ছোটখাটো প্রতিষ্ঠান তৈরি করার ক্ষেত্রে অর্থবিনিয়োগ করে কাজ করতো সে সকল কন্ট্রাকটাররা ও বর্তমানে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাওয়ার কারণে ব্যক্তি মালিকানাধীন কাজও পাচ্ছে না।
যার কারনে তাদের পরিস্থিতিও এখন অনেক বেশী কঠিন অবস্থার মধ্য।
তিনি আরো বলেন কন্ট্রাক্টারদের কাজ না থাকলে তো শ্রমিকদের কাজে লাগানোর কোন জায়গায় থাকে না।
এদিকে দৈনন্দিন খেটে খাওয়া বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা বলছে আমাদের শ্রমিকরা শহর ছেড়ে গ্রামাঞ্চলে গিয়ে নদী খনন খালকাটা মাটিকাটা ইটভাটা সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করবে সেখানে কাজের জন্য এসকিউভেটর মেশিনসহ অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করার কারণে শ্রমিকদের চাহিদা কম।
তাছাড়া পাশাপাশি আরো একটি বিষয় রয়েছে শহরের শ্রমিকদের তুলনায় গ্রাম অঞ্চলের শ্রমিকদের রোজ বেতন খুবই সীমিত।
সেই তুলনায় শহরে শ্রমিকরা গ্রামাঞ্চলে গিয়ে তাদের কাজ করে পোসাবে না।
শহরের একজন পাকা মিস্ত্রির হাজিরা রোজ ৭শ’ থেকে ৯শ’ টাকা একজন মিস্ত্রির যুগাইলের হাজিরা ৫ শ’ থেকে ৬শ’ টাকা।
এক্ষেত্রে খুলনা জেলার আশেপাশে তথা খুলনা গ্রাম অঞ্চলে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় আশাশুনি, সাতক্ষীরা, ডুমুরিয়া, তালা, কপিলমুনি, নলতা, দাকোপ, চালনা, বটিয়াঘাটা এলাকায় শ্রমিকদের রোজ হাজিরা ৩শ’ থেকে ৫শ’ টাকা ।
এ বিষয়ে খুলনার একজন অর্থনীতিবিদ বলেছেন বৈশ্বিক সংকট লগ্নে সারা বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকট চলছে। পাশাপাশি বেশি সংকটের মধ্যে রয়েছে এশিয়ার অন্যতম দেশ পাকিস্তান শ্রীলঙ্কা নেপাল ভুটান।
সেক্ষেত্রে আমাদের বাংলাদেশ কৃষি সুফল ও উর্বরা দেশ এখানকার মাটিতে অল্প পরিশ্রমেই ফসল উৎপাদন হয়।
এবং আমাদের দেশের কৃষকরা প্রতিটা ঋতুর সাথে তালমিলিয়ে ফসল উৎপাদন করে খাদ্য সহযোগিতার বিরাট একটি ভূমিকা রাখে।সে ক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর মত অতটা দুর্বল পরিস্থিতিতে পড়ার মতন সম্ভাবনা খুবই কম বলে তিনি মনে করেন।