জাহাঙ্গীর আলম, ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধিঃ
ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে প্রচন্ড শীত আর ঘনকুয়াশা উপেক্ষা করে কৃষকেরা বোরো চাষের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছে। কৃষকেরা জমিতে পানি ও চাষ করে জমি প্রস্তুতির জন্য উপজেলার মিন্টু, রবিউল , সাইফুল, লিটন, তরিকুল, শিপন, জামির সহ কয়েক হাজার কৃষক বোরো ধানের চারা লাগাতে ব্যস্ত সময় পার করছে। ইরি বোরো ধান লাগানো নিয়ে গ্রামে গ্রামে কৃষকের এখন চলছে উৎসবের আমেজ। কৃষকেরা মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছে । কেউ বীজতলা থেকে ধানের চারা তুলছেন আর কেউবা আবার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় ব্যস্ত রয়েছেন। এ দৃশ্য দেখা যাচ্ছে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের মাঠে, কৃষকের কাছে হার মানছে মাঘের শীত, লক্ষ্য মাত্রা ছাড়িয়ে যাবে ধানের আবাদ। গত কয়েক দিন ধরে হঠাৎ করেই বেড়েছে ঘনকুয়াশা ও শীতের দাপট। অতিরিক্ত শীতে জনজীবনে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। সকালে দেরি করে খুলছে সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সন্ধ্যা হওয়ার পরপরই অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ হওয়ায় চারপাশ হয়ে যাচ্ছে থমথমে জনমানবহীন পরিবেশ। কিন্তু যারা মাঠে সোনা ফলাবেন তাদের কোন স্থবিরতা নেই। হাড়কাঁপানো শীত আর ঘন কুয়াশাকে উপেক্ষা করে কোকিল ডাকা ভোরে কনকনে শীতে মাঠে নেমেছেন গ্রামের কৃষকেরা। সব সময় শীত তাদের কাছেই যেন হার মানে। চলতি মৌসুমে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে চাষীদের ধারণা। এবছর বেশি রোপণ করেছেন ব্রি ধান ৫০,৬৩,৮১,৮৮,৮৯,৯২,১০০ স্থানীয় মিনিকেট, রডমিনি, বাঁশমতি সহ বিভিন্ন জাতের ধান। ১৮ই জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় প্রচণ্ড শীত ও কুয়াশার মধ্যেও কৃষকেরা দলবেঁধে বোরো ধানের চারা রোপণ করছেন। জানতে চাইলে কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, শীতের ভয়ে ঘরে বসে থাকলে কি চলবে। আমরা এ সময়ে বসে থাকলে পরিবার ও দেশের মানুষের পেটে ভাত জুটবে কিভাবে। তিনি আরো বলেন, আমরা বসে থাকলে সমস্যা শুধু আমাদের হবে না, গোটা দেশের মানুষের সমস্যা হবে। মাঠের পর মাঠ ফসল না লাগালে মানুষ কি খাবে । রামচন্দ্রপুর গ্রামের মাঠে বোরো ধানের চারা নিয়ে যাচ্ছিলেন মিন্টু ও তরিকুল নামের দুই কৃষক। তারা বলেন, শুনেছি মাঘ মাসের শীতে নাকি বাঘ কাঁপে। বাঘ কাঁপা শীত শুরু হয়ে গেছে। বিকাল থেকেই ঘন কুয়াশা শুরু হয়। রাতে টিনের চালে টুপটাপ শব্দে বৃষ্টির মতো ঝরে কুয়াশা। সকাল পেরিয়ে দুপুর হয়ে গেলেও কুয়াশাচ্ছন্ন থেকে যায় চারপাশ। মাঝে মাঝে সূর্য্য মামার দেখা মেলে না। তবে কুয়াশা বা শীত আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন না হলে কদিন পরেই মাঠের পর মাঠ হয়ে যাবে সবুজ ধান ক্ষেত। তার পর সোনার ফসলে শুরু হবে হাসির ঝিলিক। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অফিসার হুমায়ূন কবির জানান, উপজেলার বিভিন্ন মাঠে ইরি বোরো ধান রোপণের ধুম পড়েছে। চলতি মৌসুমে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৬১৭৯ হেক্টর ধরা হয়েছে। শতভাগ পূরণ হবে বলে আশাবাদ প্রকাশ করেছেন। কেবল ৫০% জমিতে রোপণ হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই ১০০% ধান রোপণ করা হয়ে যাবে সারা মাঠ। কৃষকের মাঝে সার ও বীজ বিতরণ করা হয়েছে কৃষি অফিস থেকে। তিনি আরো জানান, চারা রোপণ থেকে শুরু করে ধান কেটে ঘরে উঠানো পর্যন্ত সার্বিক পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান করা হবে।