বিপ্লব সাহা খুলনা ব্যুরো:
অনভিজ্ঞ প্যাথলজিস্ট আর মানহীন যন্ত্রপাতি সাথে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সবকিছু মিলে মানুষের জীবন নিয়ে সেবার নামে চলছে তেলেসমাতি। সরকার অনুমোদন ছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সকল বিধি মালার পাতা উল্টিয়ে রেখে কতিপয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বাহুবলে খুলনা শহর জুড়ে অবাধে চলছে ডায়াগনস্টিক ও ক্লিনিকের নামে অপব্যবসা।
যদিও এ ব্যাপারে বারবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দেশ জুড়ে বেনামী ক্লিনিক ও মানহীন ডায়াগনস্টিকের মত অবৈধ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক কর্তাদের হস্তক্ষেপে হানা দিলেও স্থায়ী ভাবে সুষ্ঠু কোনো প্রতিকার তো হচ্ছেই না বরং দিন দিন অদৃশ্য অপশক্তির আচ্ছাদনে বেড়েই চলেছে এই সকল অবৈধ প্রতিষ্ঠান আর তা নিয়ে জনগণের মনে বাসা বেধেছে নানান প্রশ্ন।
পাশাপাশি শহরের মহল্লা ভিত্তিক ফ্ল্যাট বাড়ি ভাড়া নিয়ে দৃষ্টিনন্দন সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে সরকারি বেসরকারি হাসপাতালের নামিদামি ডাক্তারদের ম্যানেজ করে তাদের নামের তালিকা টাঙ্গিয়ে সিন্ডিকেট দালালদের সহযোগিতায় প্রত্যন্ত অঞ্চল গ্রাম থেকে আসা অসহায় রোগীদের কৌশলগতভাবে লাইসেন্সবিহীন বেনামী হাসপাতালগুলোতে ভর্তি করে অজানা উদ্ভট অসুখের কথা বলে অন্য কোনো হাসপাতাল থেকে কিছু সময়ের জন্য একজন চিকিৎসক হাজির করে দায়সারা ভাবে রোগী দেখে যাওয়ার পরপরই বিভিন্ন রোগের সিমটম এর উপর ভিত্তি করে নানান ধরনের টেস্ট করার অজুহাতে হাতিয়ে নিচ্ছে ওই সকল অসহায় রোগীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা। আর ওই সকল টেস্টগুলো শহরের নামিদামি কোনো ডায়াগনস্টিক থেকে না করিয়ে লাইসেন্সবিহীন বেনামি অনভিজ্ঞ প্যাথলজিস্ট দ্বারা টেস্ট করানোর কারণে সঠিক রোগ নির্ণয় করতে না পারার কারণে রোগী সঠিক চিকিৎসা তো পাচ্ছেই না বরং এতে রোগী সুস্থ হওয়া তো দূরের কথা উপরন্ত দিন দিন শারীরিকভাবে অবনতি হওয়ায় কোন উপায়ান্ত না পেয়ে রুগীর স্বজনরা সেখান থেকে স্থানান্তর করে নিতে চাইলেও ক্লিনিক মালিক নিজেই চিকিৎসক সেজে কৌশলগতভাবে আরো ভালো ডাক্তার কল করে এনে চিকিৎসা দেওয়ার সান্তনা বাণী শুনিয়ে চিকিৎসার নামে রোগীদের জীবন নিয়ে খেলছে নিকৃষ্ট খেলা।
তদন্ত সূত্রে নগরীর বেশ কিছু অবৈধ ক্লিনিক এর ব্যাপারে এমনও অভিযোগ পাওয়া গেছে সেখানে অবৈধভাবে গর্ভপাত করিয়ে শিশু বিক্রয়ের মতন নেক্কারজনক কাজের সাথে লিপ্ত রয়েছে। আর এ সকল অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ সাপেক্ষে খুলনা র্যাব -৬ এর একটি চৌকস দল অভিযান চালিয়ে নগরের জিড়োপয়েন্ট সংলগ্ন লাইসেন্সবিহীন অবৈধ সুন্দরবন ক্লিনিক এর মালিক সস্ত্রীক আটক এবং পরবর্তীতে জেল হাজতে প্রেরণ করা হলেও থেমে নাই এ ধরনের ন্যাক্কারজনক কর্মকান্ড থেকে।
তবে এ ব্যাপারে খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রধান পরিচালকের সাথে যোগাযোগ করে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি স্পষ্ট জানান আমি এবং খুলনা সিভিল সার্জন অফিসের ঊর্ধ্বতনকর্তাদের নিয়ে ভ্রাম্যমান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট র্যাব পুলিশ সহ লাইসেন্সবিহীন ক্লিনিক ও মানহীন ডায়গনস্টিক সেন্টার এর বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু অবৈধ ক্লিনিক জরিমানা ও সিলগালা করে বন্ধ করার পাশাপাশি মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা করে জেল হাজতে পাঠালেও অতি অল্প সময়ের মধ্য আইনের ফাঁকফোর দিয়ে বেরিয়ে এসে পুনরায় কোনো অজানা শক্তির বলে বহাল তবিয়তে চালিয়ে যাচ্ছে লাইসেন্সবিহীন অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক ব্যবসা। তিনি আরো বলেন আমার জানামতে খুলনা জেলা শহরে মোট ২৭০ টি ক্লিনিক হাসপাতাল(ক্লিনিক)ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে তার মধ্য ২০২৪ সাল নাগাদ লাইসেন্স নবায়ন করেছে মাত্র ৯৮ টি প্রতিষ্ঠান। বাকিগুলো নবায়ন ছাড়াই খেয়ালখুশি মতন চলছে পাশাপাশি একেবারে লাইসেন্সবিহীন ডায়গনস্টিক এর সংখ্যা রয়েছে ২০২ টি। তবে আমাদের পক্ষ থেকে অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক এর বিরুদ্ধে কঠিন তদারকি বহাল থাকলেও কোথাও যেন থেকে যাচ্ছে গোপনের গড়িমসি।
তবে কোনো অপশক্তি যদি অন্তরালে থেকে এদের হয়ে ছায়া শক্তি হিসেবে কাজ করে যেকোনো পন্থায় তাদেরকেও সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে খতিয়ে বের করা হবে।
অপরদিকে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের লাইসেন্স ও অনুমোদন বিহীন চলছে খুলনার স্বনামধন্য দশটি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর নাম।
যার তালিকায় প্রথমেই রয়েছে খুলনা শিশু হাসপাতাল ও শিশু হাসপাতাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার , খুলনা ডায়াবেটিক হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, খুলনা ডাইবেটিক সমিতি, সূর্যের হাসি নেটওয়ার্ক খালিশপুর, সূর্যের হাসি নেটওয়ার্ক ইসলামপুর, সূর্যের হাসি নেটওয়ার্ক দৌলতপুর, জাপান মেডিকেল সেন্টার, এবং নিউ পথ মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র তবে উল্লেখিত ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলো দেশজুড়ে বেশ কিছু শাখা রয়েছে সে ক্ষেত্রে আঞ্চলিক শাখা গুলোর ভিন্ন ভিন্ন লাইসেন্স প্রয়োজন আছে কিনা সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক সুস্পষ্টভাবে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে সকল ক্লিনিক গুলো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিধিমালার পরিপন্থী অনুযায়ী এবং লাইসেন্স বিহীন অনুমোদন ছাড়া নিজ গতিতে চলছে সেগুলো অচিরেই বন্ধ করে দেওয়া হবে। পাশাপাশি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকের ব্যবসা করতে হলে অবশ্যই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সকল বিধান মেনে চলতে হবে এবং অভিজ্ঞ সম্পন্ন নার্স ডাক্তার সার্বক্ষণিকভাবে নিয়োজিত রাখতে হবে। অন্যথায় ওই সকল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা করে দেওয়া হবে বলে অবগত করেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক।