বিপ্লব সাহা, খুলনা ব্যুরো:
বাংলাদেশের গ্রাম অঞ্চলের নানান প্রজাতির ফলের মধ্যে জনপ্রিয় অন্যতম আরেকটি ফলের নাম পানিফল। যা বছর দশেক আগেও বাংলাদেশের ফল প্রেমী মানুষদের কাছে ততটা উল্লেখযোগ্য বাহারি ফলের কাতারে না থাকলেও বর্তমানে দেশের সকল শ্রেণীর ফল প্রিয়সী মানুষের কাছে হয়ে উঠেছে অন্যতম স্বাদের ফল যা বাদাম ভাজার মতো অবসর সময়ে পানিফল সময় কাটানোর একটি অন্যতম ফল হিসেবে বিবেচিত।তাছাড়া বিশেষজ্ঞদের তথ্য মতে ফলটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট ও পুষ্টিগুণে ভরা যা মানব দেহের ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি এবং তারণ্য ধরে রাখতে পানি ফল অনবদ্য।সাথে মানব দেহের দুর্বলতা এড়াতে দুর্বল শরীরকে সবল করতে এর জুড়ি মেলা ভার। একই সাথে অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ যকৃতের প্রদাহ পোকামাকড় ধ্বংসনের এবং ওজন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও সক্রিয় ভূমিকা রাখে সস্তা দামের পুষ্টিগুণে ভরা দেশীয় পানিফল। পাশাপাশি পানিফল ফলনের বিনিময়ে দেশের হাওর বাওর পুকুর বিলের পানিতে পানি ফল চাষ করে হতদরিদ্র অসংখ্য প্রান্তিক কৃষক হয়ে উঠেছে স্বাবলম্বী। যে সকল কৃষকদের জায়গা নাই জমি নাই সেই সকল কৃষকরা পরিত্যক্ত হাওর বাওড়ের বিস্তীর্ণ কিছু অংশ জুড়ে পানিফল চাষ করে কিছু অর্থের মুখ দেখে স্বাবলম্বী হচ্ছে বলে জানালেন খুলনা বিভাগের বাগেরহাট জেলার ঝনঝুনিয়া গ্রামের পানিফল চাষী হারুন ঢালী । এ সময় তিনি আরো বলেন নিজের জমি জমা বলতে কিছু নাই আমার সারা বছর মৌসুমী ফলের ব্যবসা অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষ করলেও সারা বছর থাকতে হয় অর্থনৈতিক টানপোড়ণের মধ্য।
তাই অভাব অনটনের সংসারের দুঃখ দুর্দশা ঘুছানোর জন্য অনেক চিন্তা ভাবনা ও কৃষিবিদদের সাথে পরামর্শ করে সরকারি পরিত্যক্ত খাল বিলে জমে থাকা পানিতে পানিফল চাষ করার উদ্যোগ নেই। আর এই পানিফল চাষের মাধ্যমেই আমার সংসারের ভাগ্যের পরিবর্তন আসে।স্বল্প সময় ও কম পরিশ্রমে পানি ফল চাষে লাভবান হয়ে সংসার থেকে অভাব দূর হয়েছে ফলের ব্যবসা করে এখন আমি স্বাবলম্বী। গণমাধ্যমকে সুকান্ত নামের আরো একজন পানিফল চাষি বলেন আমাদের দেশের গ্রাম অঞ্চলের ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে অনেক খাল বিল হাওড় ডোবা পুকুর পানিবদ্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে সেখানে একটু বুদ্ধি খাটিয়ে বানিজ্যিকভাবে পানিফল চাষ করা হলে গ্রামের অনেক অসহায় সম্বলহীন প্রান্তিক চাষীদের অনেকাংশেই সচ্ছলতা ফিরে আসবে। আর এই পানিফল স্বল্প সময় কম পরিশ্রমে অধিক ফলন হওয়ায় অনেকেই কাজ করতে আগ্রহী হচ্ছে।
ফলটি বাণিজ্যিকভাবে সারা দেশ জুড়ে ফল প্রেমি মানুষের কাছে চাহিদাও রয়েছে। বিশেষ করে পানিফল চাষের উপযুক্ত সময় আষাঢ় মাসের বৃষ্টিতে যখন জলাশয় গুলোতে পানি জমে তখন সেই পানিতে পানিফলের চারা ফেলে রেখে সামান্য পরিচর্যা করতে পারলে তিন থেকে চার মাস পর থেকেই পানিফল পরিপূর্ণভাবে ফলন ধরতে শুরু করে। ভাদ্র মাসের শেষ অংশ ও আশ্বিনের শুরু থেকে গাছের ফল সংগ্রহ শুরু হয় যা কার্তিক মাসে শেষ পর্যন্ত বিক্রি করার মতন উপযুক্ত সময় থাকে। পরবর্তী দুই তিন মাস খড়া মৌসুমে বিলে পানি কম থাকলে ওই সময় গাছে ফল কম আসলে তবুও অন্তত মাসে দু তিনবার ফল সংগ্রহ করা সম্ভব হয়। তবে ফল আসা শুরু হলে প্রতি সপ্তাহ ফল সংগ্রহ করা হয়। জলাশয় গুলো হাটু সমান পানি থাকলে নেমে পানিফল সংগ্রহ করতে সুবিধা হয়। আবার পানি বেশি থাকলে নৌকায় করে পানিফল সংগ্রহ করতে হয়। আর একজন কৃষক নাঈমুর রহমান বলেন ২০ বছর আগে বিয়ে করি বিয়ের পর থেকেই সংসারের অভাব লেগে থাকে এরপর স্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে বাড়ির পাশের ডোবায় অন্যের জমি বর্গা নিয়ে পানিফল চাষ করা শুরু করি। প্রথম বছরেই লক্ষ্যমাত্রা থেকেও অধিক ফলন হওয়ার কারণে সাবেক কিছু মানুষের কাছে থাকা ঋণ মুক্ত হয়ে সচ্ছল জীবনে ফিরে আসি। এরপর পরের বছর বেশ কিছু মানুষের কাছ থেকে জমি বর্গা নিয়ে প্রায় ১৭ হাজার টাকায় এক বছরের জন্য জমি লিজ নিয়ে দেশী জাতের পানি ফলের চাষ করি তিনি বলেন কীটনাশক শ্রমিক সার সবকিছু দিয়ে প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তবে নিজের গচ্ছিত কিছু বীজ থাকায় খরচ কিছুটা কম হয়েছে বিজ কিনতে হলে প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বেশি লাগতো পানিফল গাছের এক ধরনের লতি হয় সেই লতি তুলে রেখে পানিতে সংরক্ষণ করে রাখা হয় এছাড়া কাটিং থেকে বংশবিস্তার হয়। পরবর্তী মৌসুমে প্রায় ২ লাখ টাকার মতো বিক্রি হবে লক্ষ্য রেখে চাষের পরিমাণ বৃদ্ধি করি।তবে স্বল্প পরিশ্রম ও কম সময় পানিফল একটি লাভজনক ব্যবসা। ভরা বর্ষা মৌসুমের সপ্তাহে তিন থেকে চারবার ফল সংগ্রহ করি এবং ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা প্রতি বার বিক্রি করি। পানিফল বছর পাঁচেক আগেও প্রতি মন এক হাজার থেকে বারোশো টাকা মন প্রতি বিক্রি করেছি কিন্তু মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে সেই ফল এখন মনপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা। এখন আমি মাত্র ৬ জন শ্রমিক নিয়ে সপ্তাহে একবার ফল উঠানোর জন্য সকাল থেকে দুপুরের পর পর্যন্ত বিলের কোমর সমান পানি থেকে পানিফল সংগ্রহ করে বাজারজাত করার জন্য প্রস্তুত করি যার ফলে আমার আমি তো অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছি সাথে অনেক রোজের যুগাইলেরাও অভাব অনটন থেকে মুক্তি পাচ্ছে। এবং গ্রামাঞ্চলের অনেক কৃষকেরায় আগ্রহী হচ্ছে এই ফল চাষে।