বিপ্লব সাহা, খুলনা ব্যুরো:
পশু বৃত্তি মানুষের কাছে হার মানতে বাধ্য হচ্ছে খুদা দরিদ্র আর অসহায় মানুষদের ক্ষুধা আর্তনাদর যন্ত্রণা।
ঠিক তেমনি দীর্ঘদিন যাবৎ অসহায় ক্ষুধার্ত মানুষদের নিয়ে ব্যবসা করছে খুলনা নগরীর খালিশপুর দৌলতপুর এলাকার কিছু সংখ্যক কতিপয় আসাধু হীনমন্যবৃত্তির পৈচাশিক মানুষেরা।
ওই সকল এলাকার সাধারণ মানুষের তথ্যসূত্র থেকে জানা যায় নগরীতে কুকুরের মাংস গরুর গোস্ত খাসির গোস্ত বলে দীর্ঘদিন যাবৎ বিক্রি করছিল একটি চক্র।
আর ওই কুকুরের মাংস দিয়ে বিভিন্ন হোটেল রেস্তোরায় তৈরি হচ্ছিল বিরিয়ানি বার্গার ও গ্রিলসহ বিভিন্ন মুখোরোচক খাবার।
তাছাড়া খালিশপুর দৌলতপুর সহ বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করে ৩০ টাকা প্যাকেট বিরানি বিক্রি করতো ওই চক্রের সদস্যরা।
গতকাল এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ সূত্র ধরে পুলিশের গোপন অভিযানে কুকুরের মাংস বিক্রি চক্রের মূল হোতা সহ ৪ সদস্যকে হাতেনাতে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে ।
অভিযান পরিচালনা করে খুলনা পলিটেকনিক কলেজের একটি পরিতক্ত ভবন থেকে অনেকগুলো কুকুরের চামড়া ও হাড় উদ্ধার করা হয়েছে।
অভিযান কালে আটকৃত চার ব্যক্তিদের জবানবন্দি সূত্রে জানা যায় তারা প্রায় এক মাস ধরে কুকুরের মাংস দিয়ে বিরিয়ানি রান্না করে প্যাকেটের মাধ্যমে ব্যবসা করছিল।
এলাকার সাধারণ মানুষেরা এই চক্রদের দীর্ঘদিন যাবৎ সন্দেহের চোখে দেখে আসছিল তারই সূত্র ধরে গতকাল বুধবার বিকালে স্থানীয়রা তাদের হাতেনাতে পরিত্যক্ত ভবনটির দ্বিতীয় তলা থেকে আটক করতে সক্ষম হয়।
এবং ওই স্থান থেকে জবাই করা কুকুরের মাংস জব্দ করা হয়।
পরে পুলিশ খবর দিয়ে এনে পুলিশের হাতে তাদের সোপর্দ করলে বিষয়টির সঠিক তথ্য বেরিয়ে আসে।
এবং আটককৃতদের মধ্যে তিনজনই কিশোর।
তারা সবাই ওই ইনস্টিটিউটের আশপাশের এলাকার বাসিন্দা। আটককৃতদের মধ্যে রয়েছে চক্রের মুলহোতা নগরীর খালিশপুরস্ত ডলার হাউজ মোড় এলাকার লিংকন হাওলাদারের ছেলে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র তাজ (১৬), খালিশপুর ব্যবসায়ী মোর এলাকার নর্থজোন- ২৩-এর হাবিবুর রহমানের ছেলে মোঃ আবু সাঈদ (৩৭), ২ নং নেভিগেট এলাকার কুতুব আলীর ছেলে মোহাম্মদ সিয়াম( ১৬), চরের হাট এলাকার শোভন সরদারের ছেলে প্রেম সরদার (১৬)। আটককৃত ৩ সদস্য বাদে চক্রের আরো বেশ কিছু সদস্য ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে কুকুরের মাংস ও ভ্রাম্যমান বিরিয়ানি বিক্রেতা আবু সাঈদ, আরমান, উৎস, রনি ও ফজল এখনো পলাতক।
তবে পলাতক চক্রের সদস্যদের আটকের জন্য অভিযান অব্যাহত রেখেছে প্রশাসন কর্তৃপক্ষ।
এ সময় নগরীর খালিশপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন পরিত্যাক্ত ভবনটি থেকে কয়েক দিন ধরে দুর্গন্ধ পাচ্ছিল স্থানীয়রা। তারই সূত্র ধরে স্থানীয়রা ওৎপেতে থেকে বুধবার বিকেলে একটি কুকুর নিয়ে ওই ভবনে চারজনকে ঢুকতে দেখেন স্থানীয়রা। পরে কৌশলগতভাবে কয়েকজন তাদের পিছুনেয় এবং তারা গিয়ে দেখেন কুকুরটিকে জবাই করে মাংস কাটার প্রস্তুতি চলছে। এবং সাথে সাথে তারা পুলিশে খবর দেন ।
এসময় ওসি আনোয়ার আরো জানান সম্প্রতি নগরীতে ইজি বাইকে করে খালিশপুর এলাকার জনৈক্য আবু সাঈদ ৩০ টাকা মূল্য প্যাকেট বিরিয়ানি বিক্রি করছিলেন।
তাছাড়া খুলনা সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এর অভ্যন্তরের একটি পরিত্যক্ত ভবনে দীর্ঘদিন ধরে কুকুর জবাই করছিল ওই চক্র সদস্যরা।
সদস্যদের আটক কালে ভবন থেকে অনেকগুলো কুকুরের চামড়াও হাড় উদ্ধার করা হয়েছে।
আটককৃতরা জানিয়েছেন তারা প্রায় এক মাস ধরে কুকুরের মাংস দিয়ে বিরানির ব্যবসা করছিলেন।
পাশাপাশি খালিশপুর বঙ্গবাসী এলাকায় প্রতি প্লেট বিরিয়ানি ৩০ টাকায় বিক্রি করতেন তারা।
এ বিষয়ে খুলনা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল ইমরান, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা প্রিয়ঙ্কর কুন্ডু, কেসিসির ফুড এন্ড সেনিটারের পরিদর্শন শেখ মেহেদী হাসান বুলবুলের উপস্থিতিতে নানান জিজ্ঞাসা বাদ করা হয়। এবং তাদের বিরুদ্ধে প্রানী কল্যাণ আইনে ২০১৯ এর ৭ ধারায় মামলার পর আটককৃতদের আদালতে প্রেরণ করা হয়।