বিপ্লব সাহা, খুলনা ব্যুরো:
টানা বেশ কয়েক বছর ধরে গোজগাছ করে ঋণ কর্জের টাকা দিয়ে চাষাবাদের মাধ্যমে ফসলের একটি সুফলের আভাস পাওয়ার মুহূর্তে কোনো না কোনো অশনী শক্তি আমাদের স্বপ্ন তছনছ করে দিচ্ছে।
ঠিক তেমনই এবছর যেমন মাজরা ও কারেন্ট পোকার আক্রমণে বেশ ক্ষতি হয়েছে আমন ধানের।
সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় মিধিলীর প্রভাবে তীব্র ঝড়ো বাতাসে,
ফোলে ওঠা আমন ধান জমিতে শুয়ে পড়েছে এতে করে আমন ধানের যে পরিমাণে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ছিল তার অর্ধেক ও ঘরে তুলতে পারব বলে মনে হচ্ছে না।
সাথে হাজার হাজার হেক্টর জমিতে টানা মুষলধারা বৃষ্টির পানি জমে বোরো ধানের বীজতলা তলিয়ে দিয়ে সর্বনাশ করেছে আমাদের মতন অসহায় কৃষকদের।
পাশাপাশি খুলনা দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কয়েক জেলার অসংখ্য মাছের ঘেরও বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে মাছের ঘের থেকে মাছ ভেসে যাওয়ার কথা খুলনা জেলার আশপাশ এলাকার অনেক ঘের মালিকরা জানিয়েছে।
এদিকে ধান আবাদী চাষীরা সবেমাত্র জমি প্রস্তুত করে বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যে খুলনা বিভাগের দক্ষিণাঞ্চলের হাজার হাজার হেক্টর জমিতে বীজ তলা ফেলেছিল যা আগামী মাসের শেষ নাগাদ জমিতে রোপণ করার উপযোগী হয়ে উঠতো এগুলো সবই পানিতে তলিয়ে রয়েছে যদি ১ থেকে ২ দিনের মধ্যে পানি না টানে তাহলে সব বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে কৃষক সহ স্থানীয় কৃষিবিদরা।
আর আমন ধানের যে পরিমাণ ক্ষতি হবে তার কোন অন্ত নাই।
বুক সমান বেড়ে ওঠা আমন ধানের গাছগুলি সব ঘূর্ণিঝড় মিধিলির বাতাসে লন্ডভন্ড হয়ে মাঠে শুয়ে পড়েছে যার কারনে আমন ধানও অর্ধেকেরও বেশি গাছ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা একেবারেই কম মনে করলে ভুল হবে।
আর এসব কষ্টের কথা জানিয়েছেন খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা উপজেলাধীন কাতিয়ান্যংলা এলাকার কৃষক অমিয় বিশ্বাস।
এদিকে খুলনা বিভাগীয় কৃষি অধিদপ্তরের প্রধান মোহন কুমার ঘোষ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন প্রকৃতির বৈরীতার কারণে খুলনা বিভাগের দক্ষিণাঞ্চল এলাকার কৃষকরা প্রায় তিন চার বছর যাবৎ অক্লান্ত পরিশ্রম ও অর্থ বিনিয়োগ করে শেষ মুহূর্তে তাদের স্বপ্ন আমন ধান ঘরে তুলতে পারছে না।
কারণ পরপর তিন চার বছর ধরে আবহাওয়ার প্রতিকূলতায় একটা না একটা ঝড় ঝঞ্ঝা এসে আঘাত হানে কৃষি বিপ্লবের ওপর।
তিনি আরো বলেন আমন ও বোরো ধান এ অঞ্চলের কৃষকদের সারা বছরের অর্থকারী একটি অন্যতম ফসল।
আর এই ফসল দুটি শুধু এই এলাকায় যে উৎপাদন হয় ঠিক তাই না । সারা দেশ জুড়ে এই উল্লেখযোগ্য ফসল দুটি উৎপাদন হয় যা থেকে দেশের মানুষের চাহিদা মিটিয়েও সরকারের কোষাগারে মজুদ হয় লক্ষ লক্ষ টন।
যার মাধ্যমে অনেক দুর্যোগ মুহূর্তে সরকারের রাজস্ব খাতে অর্থনৈতিকভাবে একটি বিরাট ভূমিকা রাখে।
তবে এ বছর আমন ধান রোপনের শুরুতেই আমরা কৃষকদের একটি উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখেছিলাম।
যা দেখে আমরা ধারণা করেছিলাম বিগত দিনের কৃষকদের সকল ক্ষতি পুষিয়ে এবার আমন ধানের পর্যাপ্ত ফলনের মাধ্যমে প্রতিটি কৃষকদের পরিবারের সারা বছরের খোরাক মিটিয়ে উদ্বৃত্ত বহু টাকার ধান বাজারে বিক্রি করতে পারবে।
তবে মাঝে খুলনা দক্ষিণাঞ্চলের দাকোপ বটিয়াঘাটা চালনা এলাকা জুড়ে কয়েক হাজার হেক্টর জমির আমন ধানে কারেন্ট ও মাজরা পোকা আক্রমণ করে কৃষকদের স্বপ্ন অনেকটাই ধূসর হলেও খুলনা বিভাগীয় কৃষি অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা স্থানীয় কৃষকদের সাথে মাঠে গিয়ে মাজরা ও কারেন্ট পোকা নিধনের সকল ধরনের পরামর্শ এবং বিভিন্ন জাতের কীটনাশক প্রয়োগ করে এই ক্ষতিকারক পোকা দুটির হাত থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পেয়েছে, স্থানীয় কৃষকরা।
পাশাপাশি তিনি আরো বলেন গত দুইদিন যাবত বৃষ্টি এবং ঝড়ের আঘাতে যে পরিমাণে আমন ধান ও বোরোর বীজতলার ক্ষতি করেছে তাতে যদি বৃষ্টির পানি অচিরেই মাঠ থেকে জমে থাকা পানি দ্রুত নিষ্কাশন না হয় তাহলে এ বছরেও কৃষকদের বড় ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন।