বিপ্লব সাহা, খুলনা ব্যুরো:
ঘুর্ণিঝড় ‘রেমাল’ এর তান্ডবে সর্বস্ব হারালো খুলনার উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ। তবে ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডব কিছুটা কমলেও এখনো পর্যন্ত কমেনি দমকা হাওয়া ও ভারী মুষলধারা বৃষ্টি। দেশের আবহাওয়াবিদদের মতে ক্ষিপ্ত বৈরী আবহাওয়া আজকের দিনও রাত অপরিবর্তিত থাকবে যা আগামীকাল ভোর নাগাদ কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন তবে দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলা জুড়ে আরো দুই থেকে তিন দিন ভারী ও মাঝারি ধরনের বৃষ্টি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে নদী উপকূলীয় এলাকাগুলোতে এখনো দমকা হওয়াও মুষলধারা বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে ফলে শত চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা হলো না দেশের দক্ষিণের দুই বিভাগের নদী উপকূলীয় অসহায় মানুষদের ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে এক রাতেই লণ্ডভণ্ড হয়েছে সেখানকার মানুষের স্বপ্ন। রেমেলের আঘাতে দেশের সকল স্থানেই কম বেশি ক্ষয়ক্ষতি হলেও তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভাবে ক্ষতি হয়েছে ভোলা, রায়েন্দা, খেপুপাড়া, মোংলা, পায়রা বন্দর, বাগেরহাট, রামপাল, সাতক্ষীরা, কয়রা, দাকোপ, চালনা, এলাকাগুলোতে গভীর রাত থেকে ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ রীতিমতো সারারাত ধরে তাণ্ডব চালিয়ে মানুষের চোখের ঘুম হারাম করে ছেড়েছে এদিকে পটুয়াখালীতে রেমালের ঝড়ের সর্বোচ্চ বাতাসের গতিবেগ ১৩১ কিলোমিটার প্রর্যন্ত রেকর্ড করা হয়েছে। অনেক জায়গায় নদীতে যাত্রীবাহী নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে সাথে জীবননাশের খবর পাওয়া জলোচ্ছ্বাসের স্রোতের মধ্যে অসংখ্য গবাদি পশু ভাসতে দেখা গেছে বৈদ্যুতিক তারের উপর গাছ ভেঙে পড়েছে ফলে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে অসংখ্য এলাকা অপরদিকে উপকূলীয় বঙ্গোপসাগর পায়রা সমুদ্র বন্দরে আঘাত হেনেছে রেমাল তান্ডব চালিয়েছে সারারাত সাগরও নদীতে পানি বেড়েছে ৫ থেকে ৭ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে দুই বিভাগের বেশ কয়েকটি জেলা। গতকাল ২৬ মে রবিবার গভীর রাত থেকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় বিভাগ খুলনা ও বরিশাল এলাকা জুড়ে আবহাওয়া অফিসের দেওয়া ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত এর রূপ নিয়ে রেমালের সারা রাতের তাণ্ডবে উপকূলীয় এলাকাগুলোতে তীব্র ঝড় মুষলধারা বৃষ্টি জলোচ্ছ্বাস সব মিলে অসংখ্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে উপকূলীয় এলাকাগুলোতে পানিবন্দী রয়েছে দুই বিভাগের লাখো লাখো মানুষ জলোচ্ছ্বাসে দক্ষিণ উপকূলীয় অসংখ্য ভেড়িবাদ ভেঙে পানি প্লাবিত হয়ে ভেসে গেছে কয়েক হাজার মৎস্য ঘের হাজার হাজার কোটি টাকা লোকসানের গ্রাসে মৎস্য ব্যবসায়ীরা সাথে গবাদি পশু গরু মহিষ ছাগল সহ আরো অনেক গৃহপালিত পশুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে কৃষকদের ডুবে গেছে ঘরবাড়ি মাঠে থাকা ফসলাদি উগলে পড়েছে বড় বড় গাছ আর বিদ্যুতের খুঁটি ঝড়ের ক্ষিপ্ত তান্ডবে ভেঙ্গে নিয়ে দূরবর্তী এলাকায় ফেলেছে ছোট ছোট ঘরবাড়ি উপকূলীয় এলাকাগুলোতে জেলা প্রশাসকের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে অসংখ্য আশ্রয় কেন্দ্র সাথে জরুরী সেবা ব্যবস্থা নৌবাহিনী ফায়ার সার্ভিস আনসার ভিডিপি নৌ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা সহ অসংখ্য ভলেন্টিয়ার বাহিনীদের উদ্ধার ও জরুরি সেবা কাজে নিয়োজিত রাখা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র গুলোতে যারা এসে আশ্রয় নিয়েছে তাদের মাঝে শুকনো খাবার ও বিভিন্ন ধরনের ওষুধ বিতরণ করা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের নিরাপদের জন্য তদারকি অব্যাহত রেখেছে তবে বিচ্ছিন্নভাবে বেশকিছু এলাকা থেকে জান মালের ক্ষয়ক্ষতির খবরও পাওয়া গেছে হারিয়ে গেছে অসংখ্য গবাদি পশু।অপরদিকে ঢাকা বরিশাল এবং দেশের অন্যান্য নদীতে চলাচল রত যাত্রীবাহী নৌযান বন্ধ রাখা হয়েছে এবং আবহাওয়াবিদদের পূর্বাভাস না পাওয়া পর্যন্ত সেগুলো চলাচল করবে না। পাশাপাশি খুলনা জেলার শহরাঞ্চলগুলিতে রেমালের দাপটে তেমন প্রভাব নাথাকলেও মুশলধারা বৃষ্টি সাথে থেমে থেমে প্রচন্ড গতীতে দমকা হাওয়ায় টিনের তৈরি দোকান ও বসত বাড়ির টিন দুমড়ে মুচড়ে উড়িয়ে নিয়ে অন্যত্র নিয়ে ফেলেছে অসংখ্য বিলবোর্ড ও বড়সড় গাছপালা ভেঙে ব্যস্ততম সড়কে পড়ে যান চলাচলের বিঘ্ন ঘটাচ্ছে সাথে দমকা হাওয়া সহ সারাদিনে বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। এবারের ঝর রেমালে সারাদেশ তথা দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে বড় ধরনের আঘাত হেনে ক্ষয়ক্ষতি করেছে তার ওপরে দৃষ্টিপাত রেখে দেশের বিশিষ্ট বিশেষজ্ঞগণ সকল গণমাধ্যমে জানিয়ে বলেছেন দেশের যেসব অঞ্চল জুড়ে মৎস্য চাষ ও নতুন ফসলের আবাদ করা হয়েছিল সে সকল এলাকা জুড়ে মৎস্য চাষীদের বড় ধরনের ধাক্কা গেল ফলে মোটা অংকের লোকসান গুনতে হবে তাদের পাশাপাশি দক্ষিণ অঞ্চলের সাতক্ষীরা কয়রা দাকোপ মোংলা চালনা সহ প্রায় দেড় থেকে দুই শত কিলোমিটার ভেড়িবাদ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে বাড়ি ঘর ডুবিয়ে দিয়ে অস্বাভাবিক ভাবে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতি করেছে ফলে সারা দেশের দুর্যোগপূর্ণ এলাকার সাধারণ মানুষ তথা সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে পাশাপাশি রেমালের তাণ্ডবে যে সকল অসহায় মানুষদের ছোটখাটো ঘরবাড়ি ভাসিয়ে নিয়ে চলে গেছে তাদের ঠাই এখন খোলা আকাশের নিচে ভেড়িবাঁধ স্কুল ও খেলার মাঠ আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে
তবে এই মুহূর্তে এই সকল ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের পাশে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সহ প্রশাসন ও সরকারের দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় যদি দ্রুততার সাথে সাহায্য সহযোগিতার বন্দোবস্ত না করে তাহলে এ সকল অসহায় মানুষদের জীবনের উপরে ক্রমান্বয়ে আরো ঝুঁকি নেমে আসবে।