নজরুল ইসলাম, জেলা প্রতিনিধি:
সরকারি চাকরিবিধি লঙ্ঘন ও অবৈধ প্রক্রিয়ায় অর্থ আত্মসাৎ সহ নানা অভিযোগে জড়িয়ে পড়েছেন সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার ৫নং নওগাঁ ইউনিয়ন পরিষদের সচিব সেলিম রেজা।
সরকারি চাকরিতে বহাল থেকেও কাজীপুর উপজেলার তেকানী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছেন। এমনকি পরিষদ চলাকালেও তাকে দেখা যায় দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচিতে। এ নিয়ে সর্বত্র আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
শুধু তা-ই নয়, চেয়ারম্যান দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ্য থাকায় ইউনিয়ন পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ পদ ও দলীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন প্রকল্প, ভাতা কার্ড, ট্যাক্স ও হাট-বাজার থেকে উত্তোলন করা টাকা আত্নসাৎ করার অভিযোগও রয়েছে সেলিম রেজার বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে এমন অনিয়মের অভিযোগ তুলে উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগও করেছেন আলী আশরাফ নামের এক ইউপি সদস্য। তবে অনেকেই হেনস্তার ভয়ে এ নিয়ে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।
একজন সরকারি কর্মচারী কীভাবে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদকের পদে এলেন সেই তথ্য খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, কাজীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় এক নেতার ভাতিজা হওয়ায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদকের পদ ভাগিয়ে নিয়েছেন সেলিম রেজা। তিনি তেকানী ইউনিয়নের দক্ষিণ বুরুঙ্গী গ্রামের আজাহার আলীর ছেলে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ২ জুলাই ২০১৮ সালে কাজীপুর উপজেলার তেকানী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলনে আব্দুল বারী সভাপতি ও মঞ্জুরুল ইসলাম শিবন চাকলাদার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন। এরপর ওই বছরের ৭ নভেম্বর সেলিম রেজাকে সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান সিরাজী পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেন।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সেলিম রেজা ২০১১ সালে কাজীপুর উপজেলার মাইজবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদে সর্ব প্রথম সচিব হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তী ২০১৫ সাল থেকে তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ ইউনিয়ন পরিষদে সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন।
নওগাঁ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আলী আশরাফ অভিযোগ করে বলেন, সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা ১৯৭৯-তে বলা হয়েছে, একজন সরকারি কর্মচারী কোনো রাজনৈতিক দলের বা কোনো অঙ্গসংগঠনের সদস্য হতে অথবা অন্য কোনোভাবে যুক্ত হতে পারবেন না। অথচ সেলিম রেজা পরিষদের সচিব হয়েও দলীয় পদে রয়েছেন।
তেকানী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব সেলিম রেজা পালন করছেন বলে জানিয়ে সভাপতি আব্দুল বারী বলেন, সেলিম রেজা সরকারি চাকরি নিয়েছে কমিটি হওয়ার অনেক আগেই। উপজেলা আওয়ামী লীগ তাকে এ কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করেছে।
সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ তালুকদার বলেন, দলীয় পদে থেকে সরকারি চাকরি করার বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে সরকারি চাকরিতে কর্মরত থাকা অবস্থায় কেউ দলীয় কোন পদে থাকতে পারবেনা।
নওগাঁ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান (মজনু) বলেন, আমি স্ট্রোক করেছিলাম। এ জন্য প্রয়োজন ছাড়া পরিষদে যাওয়া হয়না। তবে সচিবের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকলে তদন্ত করে দেখা হোক।
নওগাঁ ইউনিয়ন পরিষদের সচিব সেলিম রেজা বলেন, কাজীপুরের তেকানী ইউনিয়নে আমার গ্রামের বাড়ি। তবে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটিতে আমার নাম কেন? সে বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না।
এ প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জ স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক (উপসচিব) মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন বলেন, বিষয়টি আমি অবগত নই, তবে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।