আমিরুল ইসলাম পঞ্চগড় জেলা প্রতিনিধি:
বর্তমান সময়ে দেশে যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কনটেন্ট তৈরি করে খ্যাতি অর্জন করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম সাজ্জাদ ই ইসলাম (২৮)। পড়ালেখা করেছেন ফার্মেসী বিষয়ে। এরপর চাকুরীর পিছনে না ছুটে এই তরুণ বেছে নিয়েছেন অনলাইনে উপার্জনের পথ। এখন ঘরে বসেই আয় করছেন প্রচুর বৈদশিক মুদ্রা। পথচলার কয়েকবছরেই বনে গেছেন কোটিপতি। বিভিন্ন মুখরোচক খাবার তৈরির ভিডিও বানিয়ে তিনি প্রতি মাসে আয় করছেন ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা।
সাজ্জাদ ই ইসলামের বাড়ি পঞ্চগড় সদর উপজেলার চাকলাহাট ইউনিয়নের কহুরুহাট এলাকায়। তিনি সেখানকার স্কুলশিক্ষক আমিনুল ইসলামের ছেলে। বর্তমান জেলা শহরের রওশনাবাগ এলাকায় থাকেন তিনি।
সাজ্জাদ কাজ করেন ফেসবুক এবং ইউটিউব প্লাটফর্মে। ফেসবুকে তার ‘natural beauty hacks’ নামে একটি পেজ রয়েছে। যার দর্শক সংখ্যা ৩৬ লাখের অধিক। এই পেজেই নিয়মিত ভিডিও পোস্ট করেন তিনি। মুহূর্তেই ভাইরাল হয় সেগুলো। এছাড়া ইউটিউবেও ভিডিও শেয়ার করে আয় হচ্ছে তার। একলাখ সাবসক্রাইব পূর্ণ হওয়ায় ইউটিউব তাকে দিয়েছে সিলভার বাটনও।
শহরের রওশনাবাগ এলাকাতেই রয়েছে সাজ্জাদের অফিস। সেখানেই চলে তার কর্মযজ্ঞ। তার কাজে সহযোগিতা করার জন্য রয়েছে বেশ কজন তরুন। সাজ্জাদ তার আয়ের একটা অংশ তাদের দেন মাসিক বেতন হিসেবে। বলা যায়, সাজ্জাদ নিজের পাশাপাশি সৃষ্টি করেছেন আরও কজনের কর্মসংস্থান।
সম্প্রতি তার অফিসে গিয়ে দেখা যায়, বেশ পরিপাটি ও সাজানো অফিস কক্ষে ডেস্কটপ সামনে নিয়ে ভিডিও ইডিটের কাজ করছেন সাজ্জাদ। পাশের টেবিলে চলছে একটি বৈদ্যুতিক চুলা। সেই চুলায় তৈরি হচ্ছে মুখরোচক খাবার। একজন রান্নার কাজে ব্যস্ত থাকলেও অন্যরা সেটি ভিডিও করছেন। খাবার প্রস্তুত হয়ে গেলে, সেটি তৈরির আদ্যোপান্তসহ পোস্ট করছেন ৩৬ লাখ দর্শকের সেই ফেসবুক পেজে।
সাজ্জাদ ২০১২ সালে পঞ্চগড় বিপি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে ২০১৪ সালে এইসএসসি পাশ করেন। তখন থেকেই আগ্রহী হয়ে ওঠেন অনলাইনে উপার্জনের ব্যাপারে। এরপর ঢাকার স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে ফার্মেসী বিষয়ে অনার্স শেষ করেই মুখোমুখি হন করোনা পরিস্থিতির। ফলে গ্রামে এসে অবসরকালীন সময়েই শুরু করেন তার যাত্রা। শুরুর দিকে স্বজন ও স্থানীয়দের কটু কথা শুনতে হলেও এখন বেশ সুনাম তার।
সাজ্জাদ জানান, অনলাইনে উপার্জনের জন্য ইউটিউবে ঘাটাঘাটি করতেন আগে থেকেই। ঢাকায় অনার্সে পড়ার সময় এসব বিষয়ে একটি কোর্সও করেন তিনি। এখন তিনিও অন্যদের শেখাতে চান এই কাজ। বেকার যুবকরা অনলাইনে উপার্জন করে তার মত সাবলম্বী হোক এমন প্রত্যাশা তার।
তিনি বলেন, অনার্স শেষ করার পর হীনমন্যতায় ভুগছিলাম। এরপর পরিবারের সাপোর্টে ভিডিও বানানো শুরু করি। সফলতার দেখা পেতে একটু সময় লাগলেও প্রথমবারেই ফেসবুক থেকে সাড়ে ৪ হাজার ডলার উপার্জন করি। এরপর আর পিছনে তাকাইনি। এখন প্রতি মাসেই ৪ থেকে ৫ হাজার ডলার আয় হচ্ছে। যা বাংলাদেশি টাকায় ৪ থেকে ৫ লাখ টাকায় দাঁড়ায়।
সাজ্জাদ বলেন, করোনাকালে গ্রামের বাড়িতে বসে বসে যখন ভিডিও বানানোর কাজ করতাম তখন আপনজনরাও তাচ্ছিল্য করতেন। বলতেন, পড়ালেখা শিখে এই ছেলে কি করে এসব। এগুলো না করে বাজারে একটা দোকান দিয়ে বসলেওতো পারে। তবে তখন যারা তাচ্ছিল্য করতেন এখন তারাও প্রশংসা করেন। অনেকেই পরামর্শও নিচ্ছেন- কিভাবে শুরু করবে।
যারা একেবারেই নতুন, এভাবে ভিডিও বানিয়ে উপার্জন করতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে সাজ্জাদ বলেন, প্রত্যেক কাজেই সফলতার জন্য পরিশ্রম জরুরি। হতাশ হওয়া যাবেনা। কারণ, সফলতা একদিনে আসেনা, লেগে থাকলে সফলতা আসবেই।
হরেক ধরণের খাবার তৈরির আইডিয়া কোত্থেকে পান এবং নিত্য নতুন খাবার তৈরির পদ্ধতি কিভাবে জানেন- জানতে চাইলে সাজ্জাদ বলেন, এসব আইডিয়া গুগল এবং ইউটিউব ঘেটে বের করি।
আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমার ভিডিও গুলোতে বাংলায় টিপস দেই। ফলে আমার দর্শক কেবল বাংলা ভাষাভাষিরাই। সামনে আন্তর্জাতিক মানের ভিডিও তৈরির পরিকল্পনা আছে। এ ক্ষেত্রে খাবার তৈরির টিপসগুলোতে ভয়েস থাকবে ইংরেজিতে। এতে আয়ও বাড়বে মনে করি। এছাড়া খুব শীঘ্রই এসব কাজে আগ্রহীদের শেখানোর উদ্যোগ নিবো। আমি চাই বিভিন্ন ধরণের টিপসমূলক ভিডিও বানিয়ে অনলাইন থেকে আয় করে আমার মত অন্যরাও স্বাবলম্বী হোক।
সাজ্জাদের সঙ্গে থেকে সহযোগি হিসেবে কাজ করেন মনিরুজ্জামান, ফরহাদ হোসেন ও মারুফ। তারা বলেন, আমরা এখানে শিখতে আসছি। খাবার এবং ভিডিও তৈরির কাজে সহযোগিতা করায় বেতনও পাই। অর্থ্যাৎ, শেখার পাশাপাশি বাড়তি আয়ও হয়।