বিপ্লব সাহা, খুলনা ব্যুরো:
খুলনার সংসদীয়- ১ আসন এর প্রার্থী নিয়ে জামায়েত ইসলাম দোদুল্যমান অবস্থানে থাকলেও অবশেষে দাঁড়িপাল্লার প্রার্থী হিসেবে হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যক্তিত্ব ও এলাকার সর্বজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি কৃষ্ণনন্দী মাওলানা ইউসুফ এর স্থানে জামায়াত ইসলামের হয়ে নির্বাচন করার জন্য দল তাকে মনোনীত করেছে ফলে উল্লেখিত এলাকায় জামায়াত ইসলাম এর প্রচার প্রচারণায় গত ৩ ডিসেম্বর বুধবার থেকে জমে উঠেতে শুরু করেছে। অপরদিকে বিএনপিও খুলনার -১ আসন থেকে আমির এজাজ খান কে বিএনপি’র প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করেছে ফলে দুই দলের দুই প্রার্থী নিয়ে আলোচনায় সরব হয়েছে এলাকার চায়ের দোকান থেকে শুরু করে বিভিন্ন আড্ডার স্থল ও রাজনৈতিক সংগঠন এবং ভোটারদের মাঝে।
তবে খুলনা-১ আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী পরিবর্তন করে হিন্দুপ্রার্থী নির্ধারণ করার কারণে বিভিন্ন মহলে জল্পনা কল্পনা শুরু হয়েছে অনেকেই বলছেন আসনটি হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা হওয়ার কারণে হিন্দু ভোটের দুর্গ আয়ত্তে আনার লক্ষ্যে জমাত ইসলাম এই কৌশল অবলম্বন করেছে । উল্লেখযোগ্যভাবে আসনটিতে নতুন প্রার্থী হিসেবে জামায়াতের ডুমুরিয়া উপজেলা হিন্দু কমিটির সভাপতি কৃষ্ণ নন্দীর নাম ঘোষণা করায় আসনটি হিন্দু অধ্যুষিত হওয়াতে হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোটাররা আস্থাভাজন ব্যক্তি হিসেবে প্রার্থী পেয়েছে বলে তাদের মাঝে উল্লাসের বহিঃপ্রকাশ লক্ষ্য করা যাচ্ছে ।
উল্লেখ্য বটিয়াঘাটা ও দাকোপ উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-১ আসনে এর আগে বটিয়াঘাটা উপজেলা জামায়াতের আমির শেখ আবু ইউসুফকে প্রার্থী ঘোষণা করছিল জামায়াত। বিষয়টি নিশ্চিত করে জামায়াতের ডুমুরিয়া উপজেলা হিন্দু কমিটির সভাপতি কৃষ্ণ নন্দী নাগরিক ভাবনাকে বলেন, ‘আমাকে জামায়াতের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। গত কাল ৫ ডিসেম্বর বেলা সাড়ে তিনটায় বটিয়াঘাটা থেকে প্রচারণা শুরু করেন।
আমিরে জামায়াত আগের ঘোষিত প্রার্থী মাওলানা আবু ইউসুফ ভাই ও আমি—এই দুজনকে বুকে বুক মিলিয়ে দিয়ে গেছেন।’
ব্যবসায়ী কৃষ্ণ নন্দীর গ্রামের বাড়ি ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগরে। ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-৫ আসনে জামায়াতের প্রার্থী দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। এক বছর ধরে ডুমুরিয়া ও ফুলতলায় তাঁর বিভিন্ন রাজনৈতিক সমাবেশে কৃষ্ণ নন্দীকে দেখা গেছে। তাঁর নেতৃত্বে প্রতিটি সমাবেশেই সনাতন ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষের সরব উপস্থিতি ছিল। জানতে চাইলে জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও খুলনা জেলার সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান আজ বুধবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘কৃষ্ণ নন্দী এখন খুলনা-১ আসনে জামায়াতের প্রার্থী। কেন্দ্রীয় কমিটিতে সিদ্ধান্ত হয়ে পরবর্তী সময়ে বিষয়টি আমাদের জানানো হয়েছে। আজ বুধবার আমরা স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের বৈঠকে আলোচনা করে সেটা বাস্তবায়ন করেছি। এই বিষয়ে আমরা দুই দিন আগে চিঠি পেয়েছিলাম।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দলের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব থাকার সুযোগ নেই। যাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, দল তাঁকে মেনে নেয়। এটা আমাদের দলের শৃঙ্খলা। আগে যাঁকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছিল, তিনি এটা মেনে নিয়েছেন। তিনিই নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবেন।’ ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এখনকার খুলনা-১ আসনটি খুলনা-৫ নামে ছিল। আসনটিতে বেশির ভাগ সময় সংখ্যালঘু প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন। এই আসনে প্রথম এমপি হন কুবের চন্দ্র বিশ্বাস। দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে জয় পান প্রফুল্ল কুমার শীল। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির একতরফা নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে জেতেন প্রফুল্ল কুমার মণ্ডল। ১৯৯৬ সালে জয়ী হন শেখ হাসিনা। পরে তিনি আসনটি ছেড়ে দিলে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান শেখ হারুনুর রশিদ। কিন্তু সংখ্যালঘু প্রার্থী পঞ্চানন বিশ্বাসের কাছে হেরে যান। যদিও পঞ্চানন বিশ্বাস আওয়ামী লীগের এমপি হিসেবে শপথ নেন। ২০০১ সালে আবার জয়ী হন পঞ্চানন বিশ্বাস। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী জন আওয়ামী লীগের ননী গোপাল মণ্ডল। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে আবার এমপি হন পঞ্চানন বিশ্বাস। ২০২৪ সালে জয়ী হন ননী গোপাল মণ্ডল।
খুলনার ছয়টি আসনের মধ্যে পাঁচটিতে প্রার্থী ঘোষণা করলেও খুলনা-১ আসনে এখনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি। এখানে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে জেলার সাবেক আহ্বায়ক আমীর এজাজ খান প্রচারণা চালাচ্ছেন। তিনি ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে এখানে দলীয় প্রার্থী ছিলেন। পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক নেতা জিয়াউর রহমান (পাপুল) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা পার্থ দেব মণ্ডল গণসংযোগ করছেন। বাম গণতান্ত্রিক জোটের পক্ষে দাকোপ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান কিশোর কুমার রায়ও আলোচনায় আছেন।
দলীয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ‘আওয়ামী লীগের ঘাঁটি’ হিসেবে পরিচিত খুলনা-১ আসনে ১৯৯১ সালের পর ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির একতরফা নির্বাচন ছাড়া বিএনপি কখনো জেতেনি। একসময় বাম দলের প্রভাব থাকলেও জামায়াতের অবস্থান সব সময় দুর্বল ছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে জামায়াতের সাংগঠনিক কার্যক্রম কিছুটা বেড়েছে।

