মোঃ আশরাফুল ইসলাম.
সাম্প্রতিক সময়ে পৃথিবীর আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন।যার ফলে আবহাওয়াও করছে বৈরী আচরণ। অতীতে মানুষ ছিল প্রকৃতির অধীনে; কিন্তু বর্তমানে প্রকৃতিই মানুষের অধীনে।দিন দিন জলবায়ুর পরিবর্তন জীববৈচিত্র্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলায় এখন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে আকস্মিকতা, দ্রুততা ও অনিশ্চয়তা কাজ করছে তার পেছনেও প্রধানত মানুষের কর্মকাণ্ডই দায়ী।
ভূ-পৃষ্ঠের কোনো স্থানের ২৫ থেকে ৩০ বছরের আবহাওয়ার গড় অবস্থাকেই ওই স্থানের জলবায়ু বলা হয়। এটি মূলত কোনো স্থানের দীর্ঘদিনের বায়ুপ্রবাহ, বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, রৌদ্রালোক ইত্যাদির উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনকে নির্দেশ করে। প্রাকৃতিক (পৃথিবীর বিভিন্ন গতিশীল প্রক্রিয়া, অক্ষরেখার দিক পরিবর্তন, সৌর বিকিরণের মাত্রা, সূর্যের তুলনায় পৃথিবীর অবস্থান ইত্যাদি) নানা কারণে জলবায়ু স্বাভাবিকভাবে পরিবর্তন হলেও মূলত মানবসৃষ্ট (যেমন: কলকারখানা, যানবাহন থেকে নির্গত গ্যাস, কয়লা পোড়ানো, ইটভাটার ধোঁয়া, গাছ কাটা ইত্যাদি) কারণেই জলবায়ু দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে।
প্রকৃতিকে মানুষ নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করছে ইচ্ছা মতো। ফলে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কর্মকাণ্ডের বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ছে প্রকৃতিতে। প্রযুক্তির কল্যাণ আমাদের জীবনধারাকে সহজ করে দিলেও, নষ্ট করে দিচ্ছে পরিবেশ । প্রাকৃতিক কারণে জলবায়ুতে স্বাভাবিকভাবে কিছু পরিবর্তন হয়। কিন্তু বর্তমানে যে হারে তাপমাত্রা বাড়ছে তার জন্য মানুষের কর্মকাণ্ডই প্রধানত দায়ী।
বায়ুমণ্ডলে গ্রিন হাউজ গ্যাস, কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়ে গেছে। তার মধ্যে বনাঞ্চল ধ্বংসের কারণেও গ্রিন হাউজ গ্যাসের নির্গমন বাড়ছে। এতে বায়ুমণ্ডলের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী জলবায়ুর এ পরিবর্তন পরিবেশ ও মানুষের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, দুই মেরুর বরফ গলার সঙ্গে সঙ্গে উচ্চতা বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের।
জনসংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে মানুষ জীবনের তাগিদে প্রতিনিয়ত প্রকৃতির ওপর আধিপত্য বিস্তার করছে। গাছপালা ধ্বংস করে আধুনিক যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য নিজেদের উন্নত করছে, অপরিকল্পিত বাসাবাড়ি, কলকারখানা এবং আরাম-আয়েশের ব্যবস্থা করছে।অথচ একটি দেশের শতকরা ২৫ শতাংশ বনাঞ্চল থাকা প্রয়োজন হলেও বাংলাদেশের পরিমাণ ১৭ শতাং , তবুও দিনদিন তার পরিমাণ কমে যাচ্ছে।ফলে পরিবর্তন হচ্ছে জলবায়ু, আর এই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দেখা দিচ্ছে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ।
জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুস্থ সুন্দর পৃথিবী উপহার দিতে পরিকল্পিত নগরায়ণ, শিল্প কলকারখানা নির্মাণ, সম্পদের যথাযথ ব্যবহার, বেশি করে বৃক্ষরোপণসহ নাগরিকদের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি আমাদের নিতে হবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকরী পদক্ষেপ । যেমন:
১) বৃক্ষ নিধন রোধ ও গাছ লাগানো: পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অক্সিজেন। আর গাছ থেকে আমরা সেটি অনায়াসেই পাই। বর্তমানে ক্রমবর্ধমানহারে গাছ কাটার উৎসব চলছে। ফলে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে। তাই আমাদের উচিত নিয়মিত গাছ লাগানো। বাড়ির চারদিকে, রাস্তার পাশে, রেললাইনের দুই ধারে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লাগাতে হবে গাছ। ধ্বংস করা যাবে না বনাঞ্চল।
২) ইঞ্জিনচালিত গাড়ির ব্যবহার কমানো: যথাসম্ভব চেষ্টা করতে হবে ইঞ্জিনচালিত গাড়ির ব্যবহার কমানোর। কেননা তা থেকে প্রচুর পরিমান কার্বনমনোক্সাইড গ্যাস বের হয়, যা মানবদেহ ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বিকল্প হিসেবে বৈদ্যুতিক/ব্যাটারিচালিত গাড়ি, বাইসাইকেল ইত্যাদি ব্যবহার করতে হবে।
৩) রিসাইকেল করা: পরিবেশ রক্ষায় রাসায়নিক পদ্ধতিতে ব্যবহার করা জিনিসকে যেখানে সেখানে না ফেলে একটি নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা ও তা পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করে তোলা।
৪) জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো: জীবাশ্ম জ্বালানি (কয়লা, তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস) এর ব্যবহার কমাতে হবে। এটি অত্যন্ত দূষণকারী যা কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং মিথেনের মতো গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত করে, যা জলবায়ু পরিবর্তনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
৫) জনসচেতনতা সৃষ্টি: জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ, প্রভাব ও করণীয় দিকগুলো নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত সভা, সেমিনারের আয়োজন করতে হবে। সবার মাঝে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।
এভাবে জলবায়ু পরিবর্তনে আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে এবং সুন্দর পৃথিবী নির্মাণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে হবে।সম্মিলিত প্রয়াসই পারে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার প্রচেষ্টাকে সফল করতে।