মশিউর মিলন, পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি:
পটুয়াখালীর বাউফলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইিড) আওতায় ৬২ লাখ টাকা
ব্যয়ে আয়রন ব্রিজ নির্মাণ কাজে মরিচা পড়া লোহার পোস্ট বীম জোড়াতালি দিয়ে ব্যবহার করার
অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের সুলতানাবাদ- চন্দ্রপাড়া সড়কে
চন্দ্রপাড়া খালের ওপর আয়রন ব্রিজ নির্মাণ কাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এমন
অনিয়মের অভিযোগ।
ঠিকাদারের অনিয়ম ও এলজিইডির সঠিক তদারকি না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
সেতু নির্মাণে পুরান লোহার মালামাল জোড়াতালি ও রং করে ব্যবহার করায় সেতু স্থায়ীত্ব নিয়ে
প্রশ্ন তুলেছেন তারা।
উপজলো এলজিইডি সূত্র জানায়, দক্ষিণাঞ্চলে আয়রন ব্রিজ পুনঃ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায়
চন্দ্রপাড়া খালে ২৭মিটার দৈর্ঘ্য ও ৩.৭মিটার প্রস্তের সেতু নির্মাণের প্রকল্পে নেওয়া হয়। এতে
ব্যয় ধরা হয় ৬২, ৩৭, ৯৫০ টাকা। পটুয়াখালীর মের্সাস রোজা অ্যান্ড সাওম এন্টার প্রাইজ
কাজটি পায়। ২০২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয় এলজিইডি।
চুক্তি অনুযায়ী মূল ঠিকাদার নির্মাণ কাজ করার কথা থাকলেও সাব ঠিকাদারের কাছে কাজটি
বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। সাব- ঠিকাদার নির্মাণ কাজ তদারক কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে
বিধিবহির্ভূত ভাবে নির্মাণ কাজ করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও কাজে নিয়োজিত শ্রমিক সূত্রে জানা যায়, ব্রিজ নির্মাণে পুরাতন
লোহার বীম, পোস্ট ও অন্য অন্য লোহার মালামালে রং মেখে ব্যবহার করছেন সাব-ঠিকাদার পৌর
যুবলীগ সাধারন সম্পাদক অরবিন্দু দাস ও বাউফল দাশপাড়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের
সহকারী শিক্ষক মো. সবুজ তালুকদার। তারা এসব মালামাল বরিশালের ভাঙরি দোকান থেকে কিনে
এনেছেন। মরিচা পড়া লোহার এসব বীম ও পোস্ট জোড়াতালি দিয়ে ও রং মেখে ব্রিজের কাজে
ব্যবহার করছেন।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৬/৭জন শ্রমিক কাজ করছেন। তারা পুরানো এসব লোহার
পিলার মাটির নিচে কুপছেন। কোনো ধরনের যন্ত্রপাতির সাহায্য ছাড়াই ঝুঁকি নিয়ে সনাতন
পদ্ধতিতে পিলার কুপছেন শ্রমিকেরা। এতে পুরাতন লোহা দিয়ে নির্মাণ কাজ ও শিডিউল
অনুযায়ী কাজ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রশ্ন উঠেছে ব্রিজের
স্থায়ীত্ব নিয়ে।
নির্মাণ কাজের পাশে পথচারী চলাচল করতে কাঠের সেত নির্মাণ করতে ৪৩.৮১৩ টাকা বরাদ্দ দেওয়া
হলেও নড়েবড়ে একটি কাঠের সেতু নির্মাণ করে রেখেছেন সাব ঠিকাদার। যা দিয়ে ঝুঁকি
নিয়ে চলাচল করছেন পথচারীরা।
সুলতানাবাদ গ্রামের বাসিন্দা মো. তরিকুল ইসলাম বলেন,ব্রিজ নির্মাণের নামে সরকারি বরাদ্দ
লুটপাট চলছে। বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ করতে পুরাতন মরিচা পড়া লোহার বীম এঙ্গেল ব্যবহার করা
হচ্ছে। আরেক বাসিন্দা রাকিব বলেন, যথাযথ ভাবে কাজ হচ্ছে না।
এলজিইডির তদারকি না থাকায় সাব- ঠিকাদার ইচ্ছে স্বাধীনমত কাজ করছেন। ব্যবহার করছেন
জরার্জীণ পুরাতন লোহা। যার কারণে ব্রিজ টেকসই হবে না। যানবাহন চলাচলে ঝুঁকি বাড়বে।
পুরাতন রড ব্যবহার ও নির্মাণ কাজে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে সাব- ঠিকাদার সবুজ
বলেন, আমি এ কাজের সাথে জড়িত না। অরবিন্দু দাস বলেন, কাজ ঠিক মত হচ্ছে। কোনো
অনিয়ম হচ্ছে না।
তবে এবিষয়ে মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রোজা অ্যান্ড সাওম এন্টার প্রাইজের কোনো বক্তব্য
পাওয়া যায়নি।
নির্মাণ কাজ তদারক কর্মকর্তা ও উপজেলা এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী এবিএম
হুমায়ন কবির বলেন, নুতন পোস্ট পাওয়া যায় না বিধায় পুরাতন পোস্ট ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে
বাকি সব নতুন। বীমসহ অন্য অন্য মালামালও পুরাতন ও রং করা কেনো এমন প্রশ্ন করা হলে
বিষয়টি এড়িয়ে যান এ তদারক কর্মকর্তা।
উপজলো এলজিইডি প্রকৌশলী মো. মানিক হোসেন বলেন, বিষয়টি আমার জানান নেই।
খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।