মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধি:
ঝিনাইদহ আদালতের জিপি-পিপিসহ ৭২ জন আইন কর্মকর্তার নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। রোববার (২০ অক্টোবর) আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপ সলিসিটর (জিপি-পিপি) সানা মো. মাহরুফ হোসাইন স্বাক্ষরিত এক আদেশে ঝিনাইদহ আদালতের জিপি, পিপি, এডিশনাল পিপি ও এপিপি পদে সরকারি ৭২ জন আইনজীবীর নিয়োগ দেওয়া হয়।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরোধীতাকারী এবং স্বৈরাচারী শাসক আওয়ামী লীগের আমলে পিপি নিয়োগ প্রাপ্ত এ্যাড. মোকাররম হোসেন টুলু এখন ঝিনাইদহ আদালতের শীর্ষ জিপি পদে নিয়োগ পাওয়ায় ঝিনাইদহ জুড়ে চলছে বিতর্ক।
আওয়ামীলীগের সময় নিয়োগ প্রাপ্ত সুবিধা ভোগী এ্যাড.মোকাররম হোসেন টুলু ছিলেন দুদকের পিপি এবং ক্রিমিনাল প্র্যাকটিশনার কিন্তু এখন তিনি কিভাবে জিপি হলেন এ নিয়ে প্রশ্ন আইনজীবী ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের।
তাই প্রকাশিত তালিকা বাতিলের দাবীতে ঝিনাইদহের সাধারণ আইনজীবীগণের পক্ষ থেকে ২২/১০/২০২৪ ও ঝিনাইদহ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা ২৩/১০/২০২৪ তারিখে আইন উপদেষ্টা বরাবরে দিয়েছেন স্মারকলিপি।
এবিষয়ে এ্যাড. মোকাররম হোসেন টুলু বলেন- যারা স্মারকলিপি দিয়েছেন তারাই এখন অস্বীকার করছেন। তারা কোন অভিযোগ দেয়নি। স্মারকলিপির স্বাক্ষর তারা করেন নি। তিনি ক্রিমিনাল প্র্যাকটিশনার স্বীকার করে বলেন জিপি হতে কোন আলাদা কোর্স করতে হয় না। যারা অভিযোগ দিয়েছেন তারা কি আলাদা কোর্স করেছেন? তিনি আওয়ামী লীগ করতেন কিনা জানতে চাইলে বলেন আওয়ামী লীগ তিনি করেন নি তার কোন পদ পদবি ছিল না কিন্তু বিএনপি ঘেঁষা ছিলেন তিনি।
আওয়ামী লীগের আমলে দুদকের পিপি ছিলেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন ২০০৭ সাল থেকে সাত/আট বছর দুদকের পিপি হিসাবে দ্বায়িত্ব পালন করেছেন এখন আর করেন না। জিপি নিয়োগে কোন তদবির ছিলো কিনা জানতে চাইলে বলেন, আমি কোন ঘুঁষ দূর্নীতি পছন্দ করিনা সুতরাং এমনিতেই আমার নিয়োগ হয়েছে।
বিতর্কিত এ্যাড. মোকাররম হোসেন টুলু বর্তমান দুদকের পিপি’র দ্বায়িত্বে আছেন কিনা ঝিনাইদহ দুদকের ইন্সপেক্টর আবুল কাওসার এর কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন এখনো দুদকের পিপি হিসাবে এ্যাড. মোকাররম হোসেন টুলু সাহেব আছেন।
কতো বছর ধরে তিনি এই দায়িত্ব পালন করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমি সঠিক বলতে পারবো না কিন্তু আমি ২০২২ সাল থেকে দেখে আসছি তিনি হলেন দুদকের পিপি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিনিয়র এ্যাড. দেশ চ্যানেল এর প্রতিনিধি’কে একটি উদাহরণ দিয়ে জানান, সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাজ কি এমবিবিএস/ডিএমএফ ডাক্তার করতে পারবেন? তিনি এখনো ক্রিমিনাল প্র্যাকটিশনার তাহলে কিভাবে সরকারি সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ করবেন? এ নিয়ে আইনজীবী দের মধ্যে তীব্র বিতর্কের ধূম্রজাল সৃষ্টি হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমল থেকে এখনো চলমান দুদকের পিপি হিসাবে দ্বায়িত্বে থাকা অবস্থায় কিভাবে আবার জিপি হিসাবে নিয়োগ পায় আইনজীবীদের জানা নেই। তার বাবা ছিলেন মুসলিমলীগ, বর্তমানে তার একভাই আওয়ামী লীগের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান, তিনি নিজেই স্বৈরাচারী শাসনকালে ক্ষমতার বলে দুদকের পিপি হয়েছিলেন। তিনি এখন যদি আবারও জিপি হিসাবে নিয়োগ পান তাহলে এই দেশ পুনোরায় স্বাধীন হওয়ার দরকার ছিল কি?
আইনজীবীদের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি দেওয়া এ্যাড. রফিকুজ্জামান মল্লিক দেশ চ্যানেল কে বলেন-
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পিপি এবং ক্রিমিনাল প্র্যাকটিশনার নিয়োগ পাওয়া এ্যাড. মোকাররম হোসেন টুলু এখন জিপি ( সরকারি কৌশলী) হয়েছে। যা তার পক্ষে সরকারি সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারা অসম্ভব হয়ে যাবে। কিন্তু মাস শেষে তিনি সরকারের সুযোগ-সুবিধা ঠিকই নিবেন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সরকার। তাই তার অপসরণের জন্য সাধারণ আইনজীবীদের পক্ষে আইন উপদেষ্টা বরাবরে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ঝিনাইদহে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের পক্ষে সাইদুর রহমান বলেন – বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরোধীতাকারী স্বৈরাচারী শাসক আওয়ামী লীগের আমলে পিপি নিয়োগ প্রাপ্ত এ্যাড. মোকাররম হোসেন টুলু জিপি পদে নিয়োগ পাওয়ায় ঝিনাইদহ জুড়ে চলছে বিতর্ক। তিনি বিতর্কীত একজন ব্যাক্তি সুতরাং তাকে অপসারণ করে অন্য ভালো কাউকে জিপি নিয়োগ দেওয়ার জন্যই আমরা ঝিনাইদহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা আইন উপদেষ্টা বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছি।
এবিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক (ডিসি) জনাব মোহাম্মদ আব্দুল আওয়াল দেশ চ্যানেল এর প্রতিনিধি’কে জানান, এ বিষয়টা আমাদের কাজ নয় সুতরাং এটা আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের কাজ। এখানে আইন, বিচার বিভাগ যে,সিদ্ধান্ত নিবেন সেটা হবে। আমি তাদের স্মারকলিপি পেয়েছি সেটা আইন, বিচার মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি।