আব্দুল্লাহ আল মামুন পিন্টু,টাঙ্গাইলঃ
টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলা সদরের চৌধুরী বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় একই আঙিনায় পাশাপাশি মসজিদ ও মন্দিরে ৫০ বছর ধরে সম্প্রীতির সাথে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে নামাজ ও শারদীয় দূর্গাপূজা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। এবারও মসজিদের পাশেই মন্দিরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে দূর্গাপূজা। আযান ও নামাজের সময় বন্ধ থাকছে পূজার কার্যক্রম। উভয় ধর্মের লোকজন বলছে তারা সব সময় সম্প্রীতির সাথেই নিজ-নিজ ধর্মীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে।
জানা যায়, টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলা সদরের চৌধুরী বাড়িতে ৯০ বছর আগে বাংলা ১৩৩৯ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় উঝা ঠাকুর কেন্দ্রীয় দূর্গা মন্দির। এই মন্দির প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিবছরই ধুমধামের সঙ্গে পালন করা হয় দূর্গাপূজা। মন্দির প্রতিষ্ঠার প্রায় ৪০ বছর পর একই আঙিনায় নির্মাণ করা হয় নাগরপুর চৌধুরী বাড়ি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ। একই স্থানে মসজিদ আর মন্দির নিয়ে কখনও কারও কোনো সমস্যা হয়নি। সবাই মিলে-মিশে নিজেদের ধর্ম পালন করছেন। এই দৃষ্টান্ত প্রমাণ করে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এই দৃষ্টান্ত যদি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া যায়। তবে বিশ্ব থেকে দূর হবে সাম্প্রদায়িক হানাহানী। এমনটাই মনে করেন নাগরপুরবাসী।
সরেজমিন নাগরপুর চৌধুরী বাড়ি কেন্দ্রীয় মসজিদ ও দূর্গা মন্দিরে গিয়ে দেখা গেছে, মন্দিরে চলছে পূজার্চ্চনা, উলুধ্বনি, আর ঢাকের বাজনা। পূজারী ও দর্শনার্থীরা আসছেন প্রতিমা দেখতে এবং পূজায় অংশ নিতে। নির্ধারিত সময়ে আযান শুরুর আগেই থেমে যায় পূজার যাবতীয় কার্যক্রম। জানিয়ে দেয়া হয় আযান এবং নামাজের পর আবার মন্দিরের মাইক, ঢাক-ঢোলসহ পূজার যাবতীয় কার্যক্রম শুরু হবে। এরপর পাশের মসজিদ থেকে ভেসে এলো আযানের সুর। আযানের পর পরই নামাজীরা আসতে শুরু করলেন মসজিদে। শুরু হলো নামাজ। নামাজ শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পর আবার বেজে উঠলো মন্দিরের মাইক, ঢাক-ঢোলসহ উলুধ্বনি। শুরু হয় পূজার কার্যক্রম।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘ ৯০ বছর আগে এ মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়। আর এ মন্দিরের নামকরণ করা হয় নাগরপুর চৌধুরী বাড়ি উঝা ঠাকুর কেন্দ্রীয় দূর্গা মন্দির। মন্দির প্রতিষ্ঠার ৪০ বছর পর এখানকার ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মন্দিরের পাশেই প্রতিষ্ঠা করেন নাগরপুর চৌধুরী বাড়ি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ। এরপর থেকেই পাশাপাশি চলছে দুই ধর্মের দুই মসজিদ-মন্দিরের কার্যক্রম।
নামাজী ও পূজারীরা জানান, এখানকার মানুষ শান্তিপ্রিয়, কোনো দিন কোনো বিশৃঙ্খলা হয়নি দুই ধর্মের মানুষদের মধ্যে। সবাই সম্প্রীতির সাথে পাশাপাশি মসজিদ ও মন্দিরে নিজ-নিজ ধর্মের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এতে কোনদিন কারও কোন প্রকার সমস্যা বা ঝামেলা হয়নি। তাদের প্রত্যাশা যুগযুগ ধরে চলতে থাকবে এই সম্প্রীতি।
চৌধুরী বাড়ির সুপ্রিয় সাহা বলেন, এই পূজাটা বহুবছর আগের পুরোনো। এখানে পূজা উদযাপিত হচ্ছে, পাশেই মসজিদ আছে হিন্দু-মুসলমান আমরা একত্রিত হয়ে পূজা উদযাপিত করি। আমাদের অনেক ভালো লাগে ।
অর্পিতা সাহা বলেন, আমি ছোট বেলা থেকেই এখানে পূজা দেখছি। একটা বছর অপেক্ষায় থাকি দূর্গাপূজার আমরা সবাই একত্রে আনন্দ করবো। আমাদের মন্দিরের পাশেই মসজিদ আমরা যেমন মুসলমানদের ঈদে আনন্দ করি তেমন আমাদের পূজায় মুসলমানরা আনন্দ করে। আমরা সবাই এক সাথে পূজা উদযাপন করি।
চৌধুরী বাড়ি উঝা ঠাকুর কেন্দ্রীয় দূর্গা মন্দির ক্লাবের সভাপতি লিটন কুমার সাহা পোদ্দার বলেন, আমাদের এখানে অনেক বছর ধরে পূজা পালিত হচ্ছে। পাশাপাশি মসজিদ ও মন্দির এক সাথে ধর্মীয় উৎসব পালন হয়। এতে কোন সমস্যা হয় না মুসলিম ধর্মের মানুষ আমাদের আরও সহযোগিতা করে।
মসজিদ কমিটির সদস্য খন্দকার লাভু মিয়া বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের চৌধুরী বাড়ি মসজিদ ও মন্দি পাশাপাশি আছে। আমার জন্ম হওয়ার পর থেকে দেখি আসছি, এখন পর্যন্ত একই অবস্থায় আছে। সনাতন ধর্মের তাদের পূজা পালন করছে। আমরা মুসলমানরা লক্ষ্য রাখি যাতে কোন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়। আমরা তাদের পূজায় সহযোগিতা করি, তারাও আমাদের ঈদে সহযোগিতা করে। এতে আমাদের উভয় পক্ষের খুব ভালো লাগে।
নাগরপুর থানার ওসি বলেন, এখানে প্রায় ৫০ বছর যাবৎ পূজা ও নামাজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সনাতন ধর্মের লোক ও মুসলিম ধর্মের লোক তারা সম্প্রীতি বজায় রেখে উভয় ধর্মের লোকজন ধর্ম পালন করে আসছে। এখানে কোন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় না। আমরা নাগরপুর থানার প্রশাসন পূজার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবো।
নাগরপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা , এখানে দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে মসজিদ ও মন্দির স্থাপিত হলেও প্রত্যেক ধর্মের মানুষ নিজ-নিজ ধর্ম সম্প্রীতি বজায় রেখে পালন করে আসছে। এ এলাকার মানুষের মধ্যে সামাজিক সম্প্রীতি বিদ্যমান রয়েছে। যার ফলে নামাজ ও পূজা পালনের ক্ষেতে অতিতে কখনও সমস্যা সৃষ্টি হয়নি। আমরা আশা করি বিগত বছরের ন্যায় এবছরও সুষ্ঠ ও সুন্দর ভাবে পূজা উদযাপিত হবে। উপজেলা প্রশাসন সব সময় তৎপর রয়েছে।