মোঃ আতিকুর রহমান আজাদ প্রতিনিধি মাদারীপুর
মাদারীপুরে এক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কৃষকদের ফসলি জমিতে মাছের ঘের তৈরির চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে আদালতে মামলা করেন ভুক্তভোগীরা। পরে পরিস্থিতি শান্ত রাখতে ওই স্থানে ১৪৪ ধারা জারি করেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। ঘটনাটি ঘটেছে জেলার ডাসার উপজেলার ডাসার ইউনিয়নে। এ ঘটনায় চাপাক্ষোভ বিরাজ করছে কৃষকদের মাঝে। অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যানের নাম রেজাউল করিম ভাষাই শিকদার। তিনি আওয়ামী লীগের আমলে নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচন করে ডাসার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। কৃষক ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ডাসার ইউনিয়নের গোপালসেন, কালাইতলা, জ্বীনবাড়ি মৌজার ৭৫-৮০ একর জমিতে ধান উৎপাদন করেন এলাকার কয়েকশ কৃষক। এই চাষাবাদের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন শ্রমজীবী মানুষ। জীবিকা নির্বাহের একমাত্র কৃষি ফসল। সেখানকার কিছু জমি ভাড়া নিয়ে বেশকিছুদিন ধরে ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি খনন করে মাছের ঘের নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করে ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম ভাষাই শিকদার। এতে ব্যাপক ক্ষতির সম্ভবনা হওয়ার আশঙ্কায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত দেন স্থানীয়রা। পরে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব পান ডাসার উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা । গত ১২ ফেব্রুয়ারি সরেজমিন পরির্দশন শেষে উপজেলা প্রশাসনের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন তিনি। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, অভিযোগের ৭৫-৮০ একর জমির মধ্যে ৩৫-৪০ একর জমি নষ্ট করে ড্রেজার ও ভেকু দিয়ে মাটি খননে মৎস খামার বানানো হলে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। ফসলি জমি নষ্ট করে মাছের ঘের নির্মাণে জমির শ্রেণি পরিবর্তনের কোন সুযোগ নেই। এরপর উপজেলা প্রশাসন মাটি কাটা বন্ধ করতে বললেও খ্যান্ত হননি অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান। শেষ মেষ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হানিফ মোল্লা নামে এক ভুক্তভোগী অভিযোগ দেয় এবং গত ১৮ আগস্ট ১৪৪ ধারা জারি করেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আল নোমান। এ সময় আদালত শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে ডাসার থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন। আজ ২২ আগস্ট পর্যন্ত ১৪৪ ধারা বহাল রয়েছে। একই সাথে উপজেলা ভূমি সহকারী কমিশনারকে আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতেও বলা হয়। কৃষক হানিফ মোল্লা বলেন, আমার জমিতে ইউপি চেয়ারম্যান জোরপূর্বক মাছের ঘের নির্মাণের চেষ্টা করছেন। এতে ফসল উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে আমি ও আমার পরিবার না খেয়ে মারা যাবো। স্থানীয় বাসিন্দা শাহীন মাতুব্ব বলেন, ২৫ বছর ধরে আমার বাবা শাহেব আলী মাতুব্বর ব্লক করে ধান উৎপাদন করে আসছে। পরে আমরাও ধান চাষাবাদে করে জীবিকা নির্বাহ করি। কিন্তু চেয়ারম্যান রেজাউ করিম ভাষাই শিকদার মাছের ঘের নির্মাণ করলে আমাদের পরিবারের দুর্দশা নেমে আসবে। সুজন মাতুব্বর বলেন, এখানে মাছের ঘের হলে জীববৈচিত্রের ব্যাপক পরিবর্তণ হবে। এতে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হবে। আমরা চাই না এখানে মাছের ঘের করা হোক। প্রশাসনের কাছে আকুল আবেদন যাতে দ্রুত এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যাবস্থা নেয়। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ডাসার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম ভাষাই শিকদার বলেন, আমি কয়েকজন কৃষকের জমি ভাড়া (লিজ) নিয়েছি। তাদের ওই জমিতে তেমন কোনো ফসল হয় না। তাই কৃষকদের মতামত নিয়ে জমি ভাড়া করে সেখানে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে মাছের ঘের নির্মাণের চেষ্টা করছি। কিন্তু কাজ শুরুর পর পরই একের পর এক বাধা আসছে। তাই কাজ আপাতত বন্ধ রেখেছি। মূলত আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেও করার জন্য একটি পক্ষ উঠে পড়ে লেগেছে। ডাসার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুবির চন্দ্র সূত্রধর বলেন, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে ডাসার থানায় চিঠি দেওয়া হয়। পরে পুলিশ গিয়ে ১৪৪ ধারার নোটিশ জারি করে। দুইপক্ষকেই আইন মেনে থাকতে বলা হয়েছে। ডাসার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সাইফ-উল-আরেফীন বলেন, ফসলি জমিতে মাছের ঘের নির্মাণের কোনো বিধান নেই। কৃষকদের কথা চিন্তা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। জেলা প্রশাসনকে কৃষি কর্মকর্তার তদন্ত রিপোর্টও পাঠানো হয়েছে।