মো. আনোয়ার হোসাইন জুয়েল, তাড়াইল (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি:
সকালের পৌষের বাতাসে দোলছে সরষে ফুল, মৌমাছিরা গানে গানে কয় তুলরে মধু তুল। প্রকৃতি পাগল ক্যামেরাম্যানরাছবি তুলে পার করছে দিন, টানিয়ে নেবে স্মৃতির পাতায় রাখবে আজীবন।
কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার ফসলি মাঠ গুলি এখন হলুদ রঙে সেজেছে।যতদূর চোখ যায় হলুদ আর হলুদ। সবুজের মাঝে যেন হলুদের মাখামাখি। সবুজ-শ্যামল প্রকৃতির ষড়ঋতুর এই দেশে ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে যেমনি প্রকৃতির রূপ বদলায়, তেমনি বদলায় ফসলের মাঠ।
সরে জমিনে দেখা যায়, বিস্তৃর্ণ এলাকা জুড়ে সরিষা ক্ষেতে হলুদ ফুলে একাকার হয়ে আছে। প্রকৃতি যেন হলদে শাড়ি পরা তরুণীর সাজে সজ্জিত হয়ে আছে। ক্ষেতের পর ক্ষেত শুধু সরষে ফুলের হলুদ আভায় রাঙিয়ে দিয়েছে। গাঢ় হলুদ বর্ণের সরিষার ফসলের মাঠ ও সরিষার ফুলে ফুলে মৌ মাছিরা মধু সংগ্রহের জন্য গুনগুন করছে। চলছে মধু আহরণের পালা। মৌ মাছিরা মধু সংগ্রহে মাঠে নেমেছে। শীতের শিশির ভেজা শিক্ত মাঠভরা সরিষা ফুলের গন্ধ বাতাসে ভাসছে। মানুষের মনকে পুলকিত করছে। সরিষার ক্ষেতগুলো দেখে মনে হয় কে যেন হলুদ চাঁদর বিছিয়ে রেখেছে। শরৎকালের মাঠে মাঠে সবুজের অপার সমারোহ এখন আর নেই। দিগন্ত জুড়ে সরিষা ফুলের নয়নাভিরাম দৃশ্য শোভা পাচ্ছে। সরিষা ও শীতকালীন সবজি মাঠে শোভাবর্ধন করছে। সরিষা ফুলের হাসির সঙ্গে হাসছে এ উপজেলার কয়েক হাজার কৃষক। ভাল ফলন পাওয়ার আশায় চাষিরা স্বপ্ন নিয়ে বুক বেঁধে আছে।
তাড়াইল উপজেলায় এবার প্রায় সব মাঠে সরিষার আবাদ হয়েছে চোখে পড়ার মতো। জাওয়ার ইউনিয়নের বোরগাঁও গ্রামের হারু মিয়া বলেন, আমি ৮ কাটা জমিতে সরিষা আবাদ করেছি। বেলংকা গ্রামের আজিজুল, নিজাম উদ্দিন, কাশেম বলেন আমাদের এলাকায় প্রায় ২০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। দিন ভাল থাকলে বাম্পার ফলন হতে পারে। কয়েকদিনের মধ্যেই ফসল ঘরে তুলতে পারব।
জাওয়ার ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা চায়না আক্তার ও মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, জাওয়ার ইউনিয়নে প্রায় ৪০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। খরচের তুলনা লাভ বেশি থাকায় পতিত জমিতেও সরিষা রোপন করেছেন চাষীরা। এর মধ্যে উন্নত জাতের বারি-১৪ ও বারি -১৭ ফলন বেশি হওয়ায় এ দুই জাতের সরিষা চাষে বেশি আগ্রহী কৃষকরা। এ জাতের বীজ কাটা প্রতি ২-৩ মন উৎপাদন হয়।
রাউতি ইউনিয়ন ব্লকের উপসহকারী আমিনুল হক জানান, রাউতি ইউনিয়নে প্রায় ৩ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। বারি-১৪ ও বারি -১৭ জাতের সরিষা গাছের উচ্চতা হয় দেড় থেকে ২ ফুটের মতো। আগে সরিষা গাছ বড় হলেও ফলন তুলনামূলক কম হতো। নতুন জাতের ছোট আকারের এই সরিষা গাছের গোড়া থেকে মাথা পর্যন্ত ফলন আসে। এ সরিষা প্রতি কাটায় প্রায় ২ হাজার টাকা খরচ করে ৩-৪ মন সরিষা পাওয়া যায়। যা বর্তমান বাজারে ৪-৫ টাকা মন। খরচের অধিক লাভ।
তাড়াইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন কুমার সাহা জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে ১ হাজার ৪৬০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সরিষা আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৪৮৫ হেক্টর জমিতে।
তিনি আরও বলেন, বীজ বপনের ৭০ দিনের মধ্যেই ক্ষেত থেকে সরিষা সংগ্রহ করতে পারেন কৃষকরা। ফলে কম সময়ে এই ফসলে কৃষকের লাভ বেশি। এক কাটা জমি চাষ করতে ২ হাজার টাকার মত খরচ হয়। সরিষা বিক্রির পর সব খরচ বাদে কাটাপ্রতি ৩ টাকা লাভ হয়। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে ফলন খুবই ভালো হবে। ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটাতে সরিষার আবাদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সরিষা আবাদ বাড়াতে কৃষকদের উৎসাহিত করার জন্য কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির মাধ্যমে বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনাসহ কৃষকদের সর্বাত্নক সহযোগিতা করা হচ্ছে।
তাছাড়া শীতকালীন সবজির মধ্যে মরিচ ৪৫৫ হেক্টর, লাউ ১৯৫ হেক্টর, খিলা ২৫৫ হেক্টর ও অন্যান্য সবজির মধ্যে শিম, আলু, পেয়াজ, রসুন, টমেটো ইত্যাতির আবাদ হয়েছে ব্যাপক হারে।