বিপ্লব সাহা, খুলনা ব্যুরো:
সাবেক নগর ভবনের কর্ণধর পালিয়ে যাওয়া তালুকদার আব্দুল খালেকের একক পৃষ্ঠপোষকতায় চলত সকল কার্যক্রম তার মধ্য অন্যতম প্রকল্পের নামে প্রায় ডজন খানেক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানই তার নিকটতম স্বজনদের। আর সেই লক্ষ্যে ঐ সকল ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে প্রাধান্য দিয়ে তাদের মাধ্যমে নগর ভবন থেকে শত শত কোটি টাকার পাহাড় গড়ে তুলেছিল সাবেক নগর পিতা ফ্যাসিস্ট তালুকদার। তবে গেলে বছর তার দলসহ সে আত্মগোপনে চলে যাওয়ার পর বর্তমান দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের তদন্তে বেরিয়ে আসতে শুরু করে দুর্নীতি নামের থলের বিড়াল,
আর তারই প্রেক্ষিতে খুলনা দুর্নীতি দমন কমিশন নগর ভবন কর্তৃক সহজে প্রকল্পের কাজের সুবিধা পাওয়া উল্লেখযোগ্য দশটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত নেমে বেরিয়ে এসেছে অজানা অনেক লুকিয়ে থাকা দুর্নীতির ঘটনা।
বিশেষ করে যে সকল ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন প্রকল্পের নামে শত শত কোটি টাকা হরির লুট করেছে তারা প্রত্যেকেই তালুকদারের পছন্দের মানুষ এবং আওয়ামী লীগের দলীয় নেতা।
এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভাবে রয়েছে আজাদের মেসার্স আজাদ ইঞ্জিনিয়ার্স প্রায় ৪৫ কোটি টাকা নিজের মনে করে প্রকল্পের নামে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছে এবং তারি সাথে রয়েছে রোজা এন্টারপ্রাইজ প্রায় ৩৬ কোটি টাকার টেন্ডারের কাজ করেছে।
দুর্নীতি খুঁজতে তালুকদার আব্দুল খালেকের সহায়তাকারীদের দিকে নজর দিয়েছে দুদক। তবে ঠিকাদারদের অধিকাংশই গাঁ ঢাকা দিয়েছেন।
জানাগেছে, গত ৫ আগস্টের পর থেকে তালুকদার আবদুল খালেক আত্মগোপনে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ এক ডজন মামলা হয়েছে খুলনা মহানগরী ও জেলার বিভিন্ন থানায়। এছাড়া চলতি বছরের ৯ জুলাই তার বিরুদ্ধে ১৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এবং ছাড়া তার দাপটে তার স্ত্রী সাবেক বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপমন্ত্রীও বাদ পড়েনি দুর্নীতির নামে হরির লুট করতে দুদক অনুসন্ধান করে বাগেরহাট-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুন নাহারের বিরুদ্ধে অসাধু উপায়ে ১ কোটি ৬৬ লাখ ৭ হাজার ৫৩৭ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ সত্যতার প্রেক্ষিতে মামলা করে দুদক।
খুলনা সিটি করপোরেশনের একটি সূত্রে জানাযায়, তালুকদার আব্দুল খালেক নামে বেনামে করপোরেশনের প্রায় ৮০ ভাগ ঠিকাদারি কাজ করেছেন। তিনি নিজে অংশীদার থেকে কিংবা অন্যের লাইসেন্সে কাজ নিয়ে নিজেই তা করেছেন। এজন্য কাজের অনিয়ম ও দুর্নীতি দেখার মতো কেউ ছিলো না। শুধু অর্থ ভাগাভাগি হয়েছে। তার সময়কালে টেন্ডারের কাজ পাওয়া ঠিকাদারদের ও কাজের নথিপত্র চেয়ে দুদক চিঠি দিয়েছে। এর মধ্যে দুদক দশটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করেছে। এসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তালুকদার আব্দুল খালেক নিয়ম ভেঙে টেন্ডারের কাজ দিয়েছেন। এসব উন্নয়ন কাজ থেকে মোটা অঙ্কের কমিশন ও নিম্নমানের কাজ করে তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ লোপাট করেছেন। তার এসব অনিয়মের সঙ্গে পরিকল্পনা বিভাগের একজন কর্মকর্তা সরাসরি সম্পৃক্ত বলে জানা গেছে। অধিকাংশ দেন দরবার ওই কর্মকর্তা নিজেই করতেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের খুলনা জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, তালুকদার আব্দুল খালেক মেয়রের দায়িত্ব পালনকালীন সব থেকে বেশি কাজ পেয়েছে এমন দশটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা হয়েছে। চিহ্নিতদের মধ্যে অন্যতম আওয়ামী লীগ নেতা আজাদের মেসার্স আজাদ ইঞ্জিনিয়ার্স প্রায় ৪৫ কোটি টাকা এবং রোজা এন্টারপ্রাইজ প্রায় ৩৬ কোটি টাকার টেন্ডারের কাজ করেছে। এছাড়াও সেলিম হুজুরের হোসেইন ট্রেডার্স প্রায় ৫২ কোটি টাকার, যুবলীগ নেতা তাজুল ইসলামের তাজুল ট্রেডার্স প্রায় ৪০ কোটি টাকা, সবগুলো প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে মোট প্রায় ৬০০ কোটি টাকার টেন্ডারের কাজের ধরণ ও সংশ্লিষ্টদের কাজ পাওয়ার পদ্ধতিকে যাচাইবাছাই করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে দুদক খুলনা জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রকিবুল ইসলাম বলেন, তালুকদার আব্দুল খালেকের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করা হচ্ছে। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অনেক সত্যতা আমরা পেয়েছি। তার ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলাও হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, তালুকদার আব্দুল খালেক সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে থাকাকালীন নিজেই ঠিকাদারি কাজ করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তার সময়কালে কাজ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে তদন্ত চলছে ও সিটি করপোরেশন সংশ্লিষ্ট অভিযোগের বিষয়েও তদন্ত চলছে।