বিপ্লব সাহা, খুলনা ব্যুরো:
আজ হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মপ্রাণ সকল ভক্তদের প্রাণপুরুষোত্তম ভগবান শ্রী শ্রী জগন্নাথ বলদেব সুভদ্রা জিউর রথযাত্রা।
আর এই মহতি রথযাত্রা উপলক্ষে ভগবানের কৃপা পিপাসু ভক্তগণ অধির অপেক্ষার মহেন্দ্রক্ষণে ভগবান দর্শন ও রথ টানার উদ্দেশ্যে ভক্ত আগমনে শঙ্খ উলু ধ্বনি করতাল মৃদঙ্গ ও জয় জগন্নাথ জয় বলদের জয় সুভদ্রা জয়ধ্বনি ও সমবেত ভক্ত কন্ঠের কীর্তনের মুখরতায় সাক্ষাৎ ভগবত ধামে পরিণত আজ খুলনা । আর এই রথযাত্রার অনুষ্ঠান পালন কল্পে খুলনা জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ ইসকন গল্লামারি শাখা ও নগরীর অন্যান্য মন্দিরের আয়োজনে খুলনা জেলা ও মহানগর কমিটির অন্তর্ভুক্ত সকল সদস্যগণ সার্বিক সহযোগিতায় পাশে থেকে ভগবান শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার লক্ষ্যে আগামী ১০দিন ব্যাপী উল্টোরথ সমাপ্তি পর্যন্ত সকল ধরনের সহযোগিতার সংকল্প নিয়ে সুশৃংখলভাবে পাশে থাকার প্রত্যয়ে আজ ৭ জুলাই রথযাত্রার প্রথম পর্ব নগরীর গোলকমনি শিশু পার্কে আর্য্য ধর্মসভা মন্দির কমিটির উদ্যোগে সকাল ১১টায় শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের পূজা অর্চনা ও মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে খুলনা মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্যামল হালদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করেন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ মোজাম্মেল হক বিপিএম বার বিপিএম সেবা।
সমগ্র অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রশান্ত কুমার কুন্ডু অনুষ্ঠান শুরুতে
উপস্থিত সম্মানিত অতিথিদের পুষ্প মাল্য অর্পণের মধ্য দিয়ে ভগবান শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা প্রথম দিনের শুভ সূচনা হয়েছে।
যা আগামী ১০ দিন ব্যাপি প্রতিবছরের ন্যায় এবারও নগরীর জোড়া গেট প্রেমকানন মন্দিরে শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের মাসি বাড়ি প্রস্তুত রেখে সেখানে প্রতিদিন প্রাত মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান মঙ্গল আরতি এবং সমগ্র দিনব্যাপী তথা রাত্র আটটা পর্যন্ত পূজার্চনা বৈদিক আলোচনা শ্রীমদ্ভাগবত পাঠ কীর্তন এবং বিভিন্ন সংগঠন কর্তৃক বৈদিক নাটক আয়োজনও ভগবানকে ভোগ নিবেদন অতঃপর প্রসাদ বিতরণ অনুষ্ঠিত হবে। সমগ্র রথযাত্রার অনুষ্ঠানটি কে এমপি কমিশনার বিভাগীয় কমিশনার জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সজাগ দৃষ্টি সাথে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তায় তৎপর থাকবে।
অপরদিকে ভগবান শ্রী শ্রী জগন্নাথ বলদেব সুভদ্রা জিউর রথ যাত্রার গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য পর্যালোচনার মাধ্যমে একপর্যায়ে প্রধান অতিথির বক্তৃতা পূর্বক ইসকন গল্লামারি শাখা মন্দিরের দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্যতম সেবক জগন্নাথ দেবের রথযাত্রার মূল তাৎপর্য উপস্থিত ভক্তদের মাঝে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে বলেন রথযাত্রার হচ্ছে মূলত আমাদের হৃত আত্মার পুনরুদ্ধার কৌশল। মূলত আমাদের হৃদয়ে কৃষ্ণ অর্থাৎ ঈশ্বরকে স্থান দেওয়ার ধ্যানই রথযাত্রা। আর এই ধ্যানের প্রথম ধাপ হচ্ছে হৃদয়কে পরিশুদ্ধ করা। কাম, ঈর্ষা, ঔদ্ধত্য,লোভ ক্রোধ আর মোহ থেকে নিজেকে মুক্ত করার মাধ্যমে পরিশুদ্ধির কাজটি করা যায়। শুধু নিজেকে নয় অন্যকেও সুন্দর হৃদয় ধারণ করতে সাহায্য করা রথযাত্রার দর্শন।
রথে জগন্নাথ বলরাম আর সুভদ্রা থাকেন। জগৎ মানে পৃথিবী আর নাথ মানে পতি। জগন্নাথ অর্থ জগতের পতি অর্থাৎ তিনিই জগতের সকল কর্মকাণ্ডের প্রভু। বল মানে শক্তি আর রাম মানে আনন্দ। বলরাম হচ্ছেন যিনি আমাদের আর্থিক শক্তি দান করেন যাতে আমরা ঈশ্বরের আশীর্বাদ উপভোগ করতে পারি। সু মানে ভালো আর ভদ্রা মানে কল্যাণ। ফলে জগন্নাথ বলরাম আর সুভদ্রা একসাথে থাকেন তখন এই ত্রিশক্তি মানুষের জীবনকে মঙ্গলময় করেন।
মানুষ তার সৌভাগ্যকে পুনরুদ্ধার করতে পারে। অতএব ভগবান বলেছেন আমি সকলের হৃদয়ে আছি। হৃদয়ে ঈশ্বর অধিষ্টান থাকলে আমাদের দেহ একটা রথ ছাড়া আর কিছু নয়। আর সে রথের সারথি আমাদের হৃদয়। রথের সুন্দর যাত্রায় আমাদের জীবনের সুন্দর যাত্রা। রথযাত্রা মূলত আমাদের জীবনকে সত্য ও সুন্দর পথে পরিচালিত করার দার্শনিক প্রয়াস মাত্র।
অপরদিকে উল্টোরথকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে রথযাত্রার দিনের মতোই রথ টানা হয় ব্যতিক্রম থাকে কিছু জায়গায় উল্টো দিক থেকে আকর্ষণ করা হয়। রথযাত্রার যেমন বৈষ্ণব দিগের কাছে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মথুরা ছেড়ে বৃন্দাবনে আসবার মতো। তেমনি উল্টো রথযাত্রা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বৃন্দাবন ছেড়ে পুনঃ-মথুরা গমনের ন্যায়। যিনি কৃষ্ণ তিনি জগন্নাথ ভক্ত যে রূপে দর্শন চান ভগবান সেই রূপেই আসেন। অতএব ভগবানের কাছে নিজেকে আত্মসমর্পণ করে তানার শ্রীচরণে সকল মনস্কামনা জানালে ভগবান সেই মনস্কামনা পূর্ণ করেন। তাই আমরা আজ ভগবান শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রার মধ্য দিয়ে মানুষে মানুষের মধ্য ভেদাভেদ হিংসা বিদ্বেষ পরিত্যাগ করে ভগবানের শান্তির বাণী হৃদঙ্গম করে পথ চলতে পারলেই তাহলে বিশ্বময় শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। অতএব ভগবানের আদর্শ হৃদয়ে ধারণ করে পথ চলতে পারলেই দুর্গম পথ সুগম পথে পরিণত হবে।