বিপ্লব সরকারঃ স্টাফ রিপোর্টার,নওগাঁ
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে পাড়ায় মহল্লায় ও চায়ের টেবিলে আলোচনায় মুখর নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার রাজনীতির মাঠ। এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দুর্নীতিমুক্ত শিক্ষিত ও নতুন মুখ দেখতে চান ভোটাররা। এ কারনে বর্তমান চেয়ারম্যানকে টপকিয়ে সাবেক অধ্যক্ষ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলামের পাল্লা ভারী হওয়ার বিষয়টি ভোটারদের মুখে মুখে গুঞ্জন রয়েছে।
মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) দুপুর বারোটার সময় উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৮ মে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনলাইনের মাধ্যমে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৬ জন। ভাইস চেয়ারম্যান দুইজন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান দুইজন। উপজেলায় ৮ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা রয়েছে ১ লাখ ৫৯ হাজার ২শ ৪৬ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছে ৭৯ হাজার ৬শ ২৬ ও মহিলা ভোটার সংখ্যা ৭৯ হাজার ৬শ ১৮ জন। হিজড়া ভোটার রয়েছেন দুইজন।
নমিনেশন জমাদানকারী চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, ইতিহাসবিদ ও সাবেক অধ্যক্ষ মো. শহীদুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আজাহার আলী, আওয়ামী লীগ সমর্থক ও জাহানপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ওসমান আলী, উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিস্কৃত সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও পাগল দেওয়ান ফাজিল মাদ্রাসার প্রভাষক আবু নাসের মো. আফজাল হোসেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি সমর্থক আয়েন উদ্দীন ও ধামইরহাট উপজেলা জামায়াতের আমির মো. আতাউর রহমান।
অন্যদিকে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন, বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান সোহেল রানা ও উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাজেদুল ইসলাম। এছাড়াও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আঞ্জুয়ারা বেগম ও বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সাবিনা এক্কা।
স্থানীয় ভোটাররা জানান, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জামায়তসহ অন্যান্য দল অংশগ্রহণ না করায় নির্বাচনে গ্রহণযোগ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। এবার নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকায় বিএনপি ও জামায়াতের অংশগ্রহণে প্রতিদ্বন্দ্বিতা মুখর হয়ে উঠবে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন।’
ধামইরহাট উপজেলা যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক আবু ইউসুফ মুর্তজা বলেন, ‘উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৬ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে শিক্ষিত ও যোগ্য প্রার্থী হিসেবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলামের বিকল্প কোন প্রার্থী দেখছি না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, বর্তমান চেয়ারম্যান আজাহার আলীকে টপকিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শহীদুল ইসলামের পরিচিতি ও গ্রহণযোগ্যতা অন্যান্য প্রার্থীদের মধ্যে শক্ত অবস্থানে রয়েছে। তবে বর্তমান চেয়ারম্যানের সঙ্গে এই দুই প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দিতা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ধামইরহাট উপজেলা শাখা বিএনপির আহ্বায়ক সদস্য মাহবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক অগণতান্ত্রিক ও ডেমি সরকারের অধীনে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের কেউই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।
ধামইরহাট উপজেলা জামায়াতের নেতা ও চেয়ারম্যান প্রার্থী আতাউর রহমান বলেন, ‘জনগণের ভালোবাসা ও সহযোগিতা পেয়ে দুইবার ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার ও ইউপি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছি। এবারও জনগণের বিপুল ভোটে মধ্য দিয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তিনি।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘একটানা ৩৪ বছরের অধিক সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি।’ দলীয় বিবেচনায় তার সমকক্ষ প্রার্থী নেই।
তিনি আরও বলেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেলে দল মত সর্বস্তরের জনগণের জন্য অধিকতর সেবা ও উন্নয়নে নিজেকে উৎসর্গ করবেন বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার মো. আনিছার রহমান বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দানের শেষ দিন পর্যন্ত ৬ জন চেয়ারম্যান, দুইজন ভাইস চেয়ারম্যান ও দুইজন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান অনলাইনে নমিনেশন জমা দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ৮ মে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ব্যালটের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।