মোঃসাদ্দাম হোসেন ইকবাল,
ঝিকরগাছা উপজেলা প্রতিনিধি।
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলায় শ্রেষ্ঠ সভাপতি হিসাবে প্রাথমিক শিক্ষা পদক ২০২৩ এর জন্য মনোনীত হয়েছেন মীর ফারুখ আহম্মদ। ঝিকরগাছা উপজেলার ৬১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সবাইকে পেছনে ফেলে পানিসারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি হিসাবে তিনি এই পদক পেয়েছেন।
ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা ইউনিয়নের পানিসারা গ্রামের ঐতিহ্যবাহী মীর পরিবারে ১৯৬৬ সালে জন্ম গ্রহণ করেন মীর ফারুখ আহম্মদ। তার পিতার নাম মীর শামছুর রহমান। মীর পরিবারের হাত দিয়ে উক্ত এলাকায় অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং দাতব্য প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো পানিসারা প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুলিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুরতজান মাধ্যমিক বিদ্যালয়, টাওরা আজিজুর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মীর খলিলুর রহমান দাতব্য চিকিৎসালয়, মীর লুৎফুর রহমান এতিমখানা ইত্যাদি।
শিক্ষা জীবনের শুরুতে তিনি পানিসারা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেণি এবং ১৯৮৩ সালে সুরতজান মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন। ১৯৮৫ সালে সিটি কলেজ, যশোর থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে তিনি ঢাকা ইউনিভার্সিটি (বহিরাগত) থেকে ১৯৮৯ সালে বি এ পাশ করেন। এরপর বাংলাদেশ জার্মান কারিগরি প্রশিক্ষন কেন্দ্র থেকে ইলেকট্রিক্যাল ট্রেডে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করার পর ১৯৯৫ সালে পল্লী বিদ্যুত এর “সদস্য সেবা বিভাগ” এ চাকুরীতে যোগদান করেন।
২০২০ সালে সারা পৃথিবীতে যখন করোনা শুরু হয়, বন্ধ হয়ে যায় সকল ধরনের যোগাযোগ, মানুষ যখন ঘরবন্দী হয়ে পড়ে তখন মানুষের দুঃখ দুর্দশা লাঘবের জন্য তিনি তার ছোটভাই আমেরিকা প্রবাসী মীর মনিরুজ্জামান বাবুর অনুরোধে সমাজ সেবার লক্ষ্যে চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়ে এলাকায় ফিরে আসেন। তাদের পরিবারের অর্থায়নে পরিচালিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘পানিসারা গ্রাম উন্নয়ন কমিটি’ এর মাধ্যমে করোনাকালে অসহায় মানুষকে খাদ্য সহায়তা, চিকিৎসা সহায়তা সহ বিভিন্ন সামাজিক কাজে তিনি অগ্রণী ভুমিকা পালন করেন। এর পুরস্কার স্বরুপ গ্রামবাসী ২০২১ সালে তাকে পানিসারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি হিসাবে মনোনীত করেন। বর্তমানে তার সভাপতির ২য় মেয়াদকাল চলছে।
মীর ফারুখ আহম্মদ বলেন, করোনা কালে আমার ছোটভাই আমেরিকা প্রবাসী মীর মনিরুজ্জামান বাবুর অনুরোধে এবং অনুপ্রেরণায় নিজ এলাকায় সমাজসেবীর কাজ শুরু করি। আমি পানিসারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর মুল সড়ক থেকে স্কুলের ভবন পর্যন্ত বাচ্চাদের যাতায়াতের জন্য ইটের সোলিং রাস্তা নির্মাণ করেছি, পারিবারিক অর্থে খেলার মাঠ সংস্কার করেছি। করোনাকালীন সময়ে সব স্কুল যখন বন্ধ ছিলো তখন বাচ্চাদের পড়ালেখার সুবিধার্থে বার্ষিক ৩ লক্ষ টাকা খরচ করে পানিসারা গ্রামে ৫টা কোচিং সেন্টার চালু করেছিলাম যার মধ্যে বর্তমানে ২টা চালু আছে। সেখানে সমাজের পিছিয়ে পড়া বাচ্চাদের পড়ানো হয়। এছাড়াও স্কুলের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য ব্যাক্তিগত ফান্ড থেকে প্রতিমাসে ১হাজার টাকা খরচ প্রদান করি। এই স্কুলটি একদিন দেশ সেরা স্কুলের খেতাব জিতবে এই স্বপ্ন দেখেন এবারের শিক্ষা পদক প্রাপ্ত সভাপতি মীর ফারুখ আহম্মদ।
২ সন্তানের জনক মীর ফারুখ আহম্মদ মীর লুৎফুর রহমান এতিমখানার প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, পানিসারা গ্রাম উন্নয়ন কমিটির কোষাধ্যক্ষ, যশোর ফুল উৎপাদক ও বিপনন সমবায় সমিতি লিমিটেড এর সাধারণ সম্পাদক, মীর খলিলুর রহমান দাতব্য চিকিৎসালয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেবার উপদেষ্টা হিসাবে বিভিন্ন সমাজ সেবা মুলক কাজের সাথে জড়িত রয়েছেন।