আমিনুল ইসলাম, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায় বাঁধাকপি, ফুলকপি, মুলা, শিম, বরবটি, লাউ, টমেটো, গাজরের মতো সবজি যা শীতকালীন ফসল হিসেবেই পরিচিত। তবে অধিকাংশ বাজারে আগাম শীতকালীন সবজি উঠলেও চড়া দামের কারণে ইচ্ছা থাকলেও কিনতে পারছেন না সাধারণ ক্রেতারা। আষাঢ় শ্রাবণে বৃষ্টি কম হওয়ায় ভাদ্র মাসেই আগাম জাতের এসব
সবজি বাজারে উঠতে শুরু করেছে। মৌসুমের কার্তিক মাসের শুরুতে রবি মৌসুমে এ ধরনের সবজি চাষ হয়। কয়েক বছর ধরে আগাম হিসেবেও চাষ করছেন কৃষক। ফলে শীত শুরুর আগেই বাজারে পাওয়া যায় এসব সবজি। তবে এবার বর্ষায় বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় মৌসুমের অন্তত দুই মাস আগেই মিলছে শীতকালীন সবজি। সরবরাহ কম থাকায় দামও চড়া।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পৌর এলাকার সুজাপুর, কৃষ্ণপুর, খয়েরবাড়ী, মুক্তারপুর, লালপুর, দৌলতপুর, শিবনগর, ভিমলপুরসহ সাতটি ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকায় সবজির চাষাবাদ হয়। নবাবগঞ্জের কয়েকটি গ্রামেও সবজি চাষ হচ্ছে। এসব ফুলবাড়ীসহ উত্তরাঞ্চলের বাজারে সরবরাহ করা হয়। উপজেলায় ৪৯০ হেক্টর জমি সবজি চাষের উপযোগী রয়েছে। চলতি খরিপ- ২ মৌসুমে ৫৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে।
পৌরবাজারের সবজি ব্যবসায়ী সাজ্জামাল,রানা,সাজ্জাদ,শ্যামল দত্তের সাথে কথা হলে তারা জানান, সব পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। সবেমাত্র বাজারে আগাম সবজি উঠতে শুরু করেছে। সরবরাহ বেশি হলে খুচরা বাজারে দাম কমে আসবে। নতুন সবজি তাদেরও চড়া দামে কিনতে হয়। বিক্রিও করছেন চড়া দামে।
শনিবার (০২ সেপ্টেম্বর) পৌর এলাকাসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি বাঁধাকপি ৬০- ৬৫ টাকা, ফুলকপি ৮০-৯০, মূলা ৪০, শিম ১২০-১৪০, বরবটি ৫০, টমেটো ১৬০-২০০, শসা ৩০-৫০, গাজর ১৮০-২০০ এবং লাউ প্রতিটি ৩০- ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্য সবজির মধ্যে মিষ্টিকুমড়া প্রতিটি ৪০-৪৫ টাকা, পেঁপে ২৫-৩০, কাঁকরোল ৪০-৪৫, আলু ৩৭-৫৫, বেগুন ৪৫-৫০, ঝিঙা ৩৫-৪০, পটোল ৩৫-৪০ ও ঢ্যাঁড়স ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
প্রতি কেজি স্থানীয় জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৮০ টাকায়। এ ছাড়া আদা ২৫০ টাকা, কাঁচামরিচ ১৪০-১৬০, শুকনো মরিচ বিন্দু ৪৫০, কারেন্ট ৫০০, সাজনা ১৬০, পুঁইশাক ২০, চিচিঙ্গা ৪০-৫০, কচুর লতি ৫৫, পানিকচু প্রতিটি ৩০ ও ওল ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর এ সময়ের তুলনায় অধিকাংশ সবজির দাম কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেশি বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
পৌর এলাকার বাসিন্দা মেডিকেল শিক্ষার্থী মো. শাকিল আহম্মেদ সিয়াম বলেন, ‘কী বাজার করব, ৪০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। ২ হাজার টাকার নিচে সপ্তাহের বাজার হয় না।’ ভ্যানচালক মাসুদ, হৃদয় ও রহিমের ভাষ্য, যা আয় হয়, সব খরচ হয়ে যাচ্ছে। কলেজ শিক্ষার্থী সারা সাদিয়া নুর ও রিনাত আশরাফ রিম বলেন, আগে যে টাকা দিয়ে বাজার করতাম তা দিয়ে এখন আর হচ্ছে না,প্রতিটি সবজিরই দাম অনেক বেশি। বাজারে এলেই শুনতে হচ্ছে পণ্যের দাম বাড়ার কথা। কিন্তু আমরা তো শিক্ষার্থী হিসাব করে চলতে হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. শাহানুর আলম বলেন, সবজি আগাম উঠাতে পারলে লাভ বেশি। এবার বৃষ্টি কম হওয়ায় সবজি আগে চাষ সম্ভব হয়েছে। সাধারণত কার্তিক মাসে শীতকালীন সবজি চাষ শুরু হয়। এ মৌসুমে উপজেলায় ১ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অনেক কৃষক বেশি লাভের আশায় আগাম সবজির চাষ করেন। স্থানীয়ভাবে আবাদকৃত এ সবজি বাজারে উঠতে শুরু করেছে।