বিপ্লব সাহা, খুলনা ব্যুরো:
যৌথবাহিনী পুলিশ র্যাব একের পর এক অভিযান চালিয়ে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের আটক করে আইনের আওতায় আনলেও কিছুতেই থামছে না অপরাধীদের দৌরাত্ম্য সন্ধ্যা নামলেই অস্ত্রের ঝনঝনানি মোটরসাইকেলের মহড়া দখল চাঁদাবাজি লুটপাট বোমাবাজি খুলনা মহানগর সহ আশপাশ এলাকা দক্ষিণ অঞ্চল জুড়ে প্রতিনিয়ত ঘটছে এমন ঘটনা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদাবাজি সাধারণ মানুষের থেকে জোর করে ছিনিয়ে নেওয়া ডাকাতি অস্ত্রবাজি খুনখারাবি প্রকাশ্য অস্ত্র প্রদর্শন জান মালের হুমকি সবমিলে খুলনা এখন আতঙ্কের নগরী। অথচ দেশ জুড়ে চলমান রয়েছে যৌথ বাহিনীর ডেভিলহান্ট অপারেশন তা সত্ত্বেও ডেভিলরা প্রকাশ্যে বুক ফুলিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দিনরাত সর্বক্ষণ সুযোগ বুঝেই লিপ্ত হচ্ছে অপকর্মে অর্থের প্রয়োজনে মোটা অংকের চাঁদাবাজি করছে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের কাছে অপারগতায় জীবন নাশের হুমকিতে ব্যবসায়ী মহল। আর এসব কাজের সাথে জড়িত শহরের গতিপয় বেশ কিছু সন্ত্রাসী ও রাজনীতি অঙ্গনের কথিত নেতা কর্মীগণ এরা পুলিশ প্রশাসন যৌথ বাহিনী কাউকেই তোয়াক্কা করছে না এরা নিজেরাই এখন সর্বমহলের আতঙ্ক। এরা প্রশাসনের সকল শাসনবারন পিছু ফেলে বেপরোয়া হয়ে উঠে পাশাপাশি নিষিদ্ধ চরমপন্থী গ্রুপগুলোর সাথে গোপনে আঁতাত করে প্রকাশ্য সাধারন মানুষের জীবনের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে ।এরাই এক সময় খুলনা তথা দক্ষিণ জনপদের আতঙ্ক ছিল তার মধ্যে অনেকে আইনের বিচারে দীর্ঘমেয়াদি সাজা ভোগের জন্য কারাবন্দি ছিল অথচ সরকার পতনের পর সেইসব সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধানরা আইনের ফাক ফোকর দিয়ে জামিনে মুক্তি পেয়ে কেউ আবার আত্মগোপন থেকে প্রকাশ্যে আগের থেকেও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। মরিয়া হয়ে উঠেছে অবৈধভাবে পয়সা উপার্জনের এদেরই ছত্রছায়ায় গড়ে তুলেছে কতিপয় কিশোর বয়সে উশৃংখল ছেলেদের দ্বারা কিশোর মাস্তান দল আর ঐ সকল বেপরোয়া কিশোর মস্তানরা কখনো হত্যা, কখনো ছুরিকাহত আবার কখনো বিভিন্ন অপকর্ম করে নিজেদেরকে জানান দেওয়া শুরু করেছে উল্লেখযোগ্যভাবে এসব সন্ত্রাসী বাহিনীগুলো আটকের লক্ষ্যে
ঈদের কদিন আগে শহর জুড়ে অভিযান চালিয়ে অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে আড়াই ঘণ্টা বন্দুকযুদ্ধের পর শহরের অন্যতম চিহ্নিত সন্ত্রাসী পলাশ বাহিনীর প্রধান পলাশ সহ ১০ জনকে বিপুল পরিমাণে অস্ত্র সহ আটক করতে সক্ষম হয় যৌথ বাহিনী। বিশেষ করে অভিযান চালিয়ে এই বাহিনীকে আটক করার পর খুলনার সাধারণ জনমনে কিছুটা হলেও স্বস্তির নিশ্বাস ফিরে পেয়েছিলাম, পাশাপাশি এটাও ধারণা করেছিল এই অভিযানের মধ্য দিয়ে খুলনার অন্যতম সন্ত্রাসী খ্যত আন্ডারওয়ার্ল্ড কিছুটা হলেও দমে থাকবে । অথচ ওইসব জগতের অপরাধীরা প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে ক্রমান্বয় বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
নগরীর সোনাডাঙ্গার আরামবাগে গত ২৯ মার্চ দিবাগত রাতে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যৌথবাহিনীর আড়াই ঘণ্টাব্যাপী বন্দুকযুদ্ধের পর অন্তত ১০ জনকে গ্রেপ্তারের পর আবারো জেলার রূপসা থেকে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির রক্তমাখা লাশ উদ্ধার করেছে হাইওয়ে পুলিশ। এ ছাড়া একইরাতে নগরীর পৃথক তিন এলাকায় ধারাল অস্ত্রের আঘাতের ঘটনায় পাঁচজন আহত হয়। এর আগের রাতে নগরীর নিউ মার্কেটের কাছে ছিনতাইকারীদের হাতে জখম হয় একজন। এভাবে একের পর এক অপরাধের ঘটনা ঘটিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে কথিত সন্ত্রাসীরা অনেকটা ওপেন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে বলে নগরবাসীর প্রকাশ্য অভিযোগ। প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে বুধবার (৯ এপ্রিল) দিবাগত মধ্যরাতে নগরীর খালিশপুর থানাধীন জোড়াগেট সংলগ্ন ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জখম হয় হাসান তালুকদার (১৯) নামের এক যুবক ।
হাসান তালুকদার নগরীর ৭ নম্বর ঘাট এলাকার বাসিন্দা সোহরাব তালুকদারের ছেলে হাসান তালুকদার নিজেও একজন সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্য যখন হওয়ার পর হাসানকে স্থানীয় লোকজন খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
একই দিনে রূপসা ব্রিজ টোল প্লাজা সংলগ্ন রক্তাক্ত জখম অবস্থায় উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করে টোল পুলিশ জখম হওয়া যুবকের মাথায় আঘাতে অধিক রক্তক্ষরণ হওয়ার কারণে ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে থেকে নিশ্চিত করেছে । পরে পুলিশ তদন্ত চলাকালীন লাশটি খুলনা মেডিকেল হাসপাতালের মর্গে রাখা ছিলো।
একই রাতে নগরীর সোনাডাঙ্গা মডেল থানা এলাকায় দুটি কোপাকুপির ঘটনা ঘটে। এতে চারজন আহত হয়। তাদেরকেও চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সোনাডাঙ্গা আল আমিন মহল্লা এলাকা প্রতিপক্ষের ধারাল অস্ত্রের আঘাতে আহত হয় খুলনা থানাধীন বাগমারা এলাকার মোহাম্মদ কিসমত গাজীর ছেলে পলাশ (২০) একই এলাকার বেল্লালের ছেলে মো. হাসান (২৪)।
এ ছাড়া সোনাডাঙ্গা আবাসিকের মধ্যে প্রতিপক্ষের ধারাল অস্ত্রের আঘাতে আহত হয়, আল ফারুক সোসাইটির সামনে রবিউলের ছেলে আল আমিন (১৮) ও করিমনগরের বাবুলের ছেলে অভি মৃধা (২৪)।
এর আগের রাতে (মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টায়) নগরীর নিউমার্কেট এলাকায় মোটরসাইকেলে যাওয়ার সময় ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে ভুট্টো সরদার (৪৬) ও তার শ্যালক দিপু (২৭) নামে দুই মোটরসাইকেল আরোহী ভুক্তভোগীদের অভিযোগে জানা যায় মোটরসাইকেলযোগে বৈকালী থেকে জরুরি কাজে ডাকবাংলার দিকে যাওয়ার সময় ছিনতাইয়ের কবলে পড়েন। এসময় ছিনতাইকারীরা ভুট্টোকে ধারাল অস্ত্রের আঘাত করে নগদ ৬৫ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু ওই রাতে কেন তারা বৈকালী থেকে ডাকবাংলার দিকে যাচ্ছিলেন তার সঠিক কোনো কারণও জানা যায়নি। আহত ভুট্টোকেও খুমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এমনকি ছিনতাইকারীরা তাদের মোটরসাইকেলটিও ভাঙচুর করে। এ ছাড়া বিগত কয়েক মাস ধরে নগরী ও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় হত্যাসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। যা নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অনেকটা বিব্রত হলেও সুষ্ঠু কোন প্রতিকারের পথ খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশের অভিযোগ এ সকল সন্ত্রাস বাহিনীরা কে বা কাদের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রকাশ্যে সমাজের অপকর্ম করে যাচ্ছে সেটাই এখন সর্ব মহলের প্রশ্ন।