বিপ্লব সাহা, খুলনা ব্যুরো:
চলতি মাসের মধ্যে বন্ধকৃত ২৬ টি পাটকলের শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা ও আনুষঙ্গিক ৭ দফা দাবি মেনে না নিলে খুলনা অচল করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি শ্রমিক নেতাদের।
এদিকে শ্রমিকদের অভিযোগ খুলনা শিল্প নগরীতে এখন শিল্প নাই নামে মাত্র শিল্পাঞ্চল। ৯০ দশকের পর থেকে টেক্সটাইল মিল হার্ডবোর্ড মিল দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরি সহ অসংখ্য শিল্প কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেলেও উল্লেখযোগ্য ভাবে সর্বশেষ গেল ১৬ বছরে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের নেতাকর্মীদের লালসা আর অত্যাচারে বন্ধ হয়েছে ২৬ টি পাটকল বেকার হয়েছে ৪০ হাজার শ্রমিক ফলে বকেয়া পাওনা বেতন বিহীন অতি কষ্টে মানবেতর জীবনপার করছে তারা, আর তারই প্রতিবাদে খুলনাসহ দক্ষিনাঞ্চলের বন্ধ সকল সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানা পাটকলগুলো চালু ও শিল্পাঞ্চল গুলোকে পুনরুদ্ধার করতে সরকারি ও বেসরকারি পাটকল শ্রমিক-কর্মচারী পরিষদ পৃথক পৃথক ভাবে আন্দোলন শুরু করছে শিঘ্রেই।
সরকারি পাটকল শ্রমিক-কমর্চারি পারিষদ খুলনা বিভাগের ফ্যাসিবাদি সরকারের প্রজ্ঞাপন, লিজ প্রথা বাতিল, রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল চালু, রাষ্ট্রীয় সম্পদ পাচার বন্ধ, ২৬টি পাটকল মিলের শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ, প্রত্যেক শহীদ পরিবারের ক্ষতিপূরণ, সিবিএ নেতাদের নামে মামলা প্রত্যাহার এবং পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন ২০১০ র্কাযকরসহ ৭দফা দাবিতে আন্দোলনে নামছেন। দাবি মেনে নেওয়া না হলে সমগ্র খুলনাকে অচল করার কঠোর আন্দোলনের কর্মসুচি ঘোষনা করা হবে বলে হুশিয়ারি দিয়েছে।
সরকারি পাটকল পষর্দের আহবায়ক শ্রমিকনেতা মোঃ জাকির হোসেন বলেন, খুলনা শিল্পনগরীর পরিবর্তে এখন মৃত নগরীতে পরিণত হয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে খুলনা বিভাগসহ সারাদেশে ২৮৪ জন শ্রমিক আত্মাহুতি দিলেও অন্তবর্তীকালীন সরকার তাদের অবদানকে স্মরণে রাখেননি। সরকারের কয়েক উপদেষ্ঠা চালুর আশ্বাস দিলেও এখনো তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। এই অন্তবর্তীকালীন সরকার সাবেক পলাতক স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার আমলের কমকর্তাদের এখনো বিজেএমসিসহ পাটকলের বিভিন্ন দপ্তর গুলোতে বসিয়ে রেখেছে। ফলে তাদের নানা রকম ষড়যন্ত্রের কারনে সরকারি বন্ধ পাটকল গুলোকে এখনো চালু হচ্ছে না বলে একাধিক শ্রমিকনেতারা জানান।
খুলনার অপর এক শ্রমিকনেতা আবুল কালাম জিয়া বলেন, সাবেক স্বৈরশাসক পলাতক শেখ হাসিনা তার মনগড়া এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে খুলনাসহ দেশের রাষ্ট্রয়াত্ত ২৬টি পাটকলকে বন্ধ করে দেয়। আওয়ামী লীগের সাবেক কয়েকজন মন্ত্রী-সাংসদসহ তাদের কিছু সন্ত্রাসীরা পাটকলগুলোকে বন্ধ করে দিয়ে র্নিদিধায় সরকারি কোটি কোটি টাকা মুল্যের এই সম্পদ লুটপাট করে আত্মসাৎ করেছে। আবার তাদের কিছু লোকেরা এ সকল বন্ধ পাটকল গুলোকে অতি নিম্ন দামে লীজ নিয়ে নেয়। কিন্তু লীজ নেওয়ার পরই তারা মিল চালুর পরিবর্তে শুরু করে সরকারি সম্পদের লুটপাটের মহাউৎসবের খেলা। তারা নামমাত্রে কিছু শ্রমিক-কমর্চারী রেখে বাকিদের ছাটাই করে দেয়। তাও আবার তাদেরকে নিয়মিত বেতন-মজুরী দিতো না বলেও এই শ্রমিক নেতা অভিযোগ করেন। তিনি বলেন,সাবেক স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার শাসনামলের বিজেএমসিসহ পাটকলের কতিপয় কমকর্তার যোগসাজশে অন্তর্র্বতী সরকারের আমলেও আওয়ামী লীগের সাবেক কয়েকজন মন্ত্রী-সাংসদসহ তাদের কিছু দোসররা লীজ নেওয়া সেই পাটকলের মেশিনপত্র পানির দরে বিক্রি করে দিচ্ছে।
খুলনার একাধিক শ্রমিক নেতারা জানান, বন্ধ সরকারি এ সকল মূল্যবান কারখানা গুলো স্বাধীন বাংলাদেশ আমলেও প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি। বৃটিশ সরকারের আমলের পাটকলগুলোর মালামাল লুট বন্ধ না হলে এ শিল্পের সাথে জড়িত মেহনতি মানুষ জীবনকে বাজি রেখে লড়াইয়ে জোরালোভাবে মাঠে নামতে বাধ্য হবে। তবে অপর একটি সুত্রের দাবি, পাটকল গুলোকে বন্ধ করা হলেও শ্রমিক-কমর্চারীদের কাউকে এখনো চাকরিচ্যুতি বা ছাঁটাইয়ের কোন নির্দেশনা সরকারের পক্ষ থেকে এখনো জারি করা হয়নি। অথচ গত ছয় বছর ধরে শ্রমিক কর্মচারীরা কর্মহীন হয়ে রয়েছেন। এ অবস্থায় বন্ধকৃত পাটকলের শ্রমিকদের সকল বকেয়া পাওনা পরিশোধের দাবি জানানো হয় কয়েক দফায়। কিন্তু আজ অবধি তা পরিশোধ করা হয়নি। কয়েক হাজার শ্রমিক-কমর্চারীরা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে এখন চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
খুলনা অঞ্চলের সরকারি পাটকল শ্রমিক-কর্মচারী পরিষদ নেতৃবৃন্দের এখন প্রধান দাবি হচ্ছে সাবেক প্রধানমস্ত্রী ও পলাতক খুনি হাসিনা সরকারের দোসর বিজেএমসি চেয়্যারমান ও পাট সচিবের অপসারণ ও তাদের বিচার করতে হবে। অন্যথায় খুব শিঘ্রই কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে জানান।
শ্রমিকনেতারা বলেন, পাটকলের ছাটাইকৃত সকল শ্রমিক-কমর্চারিদের পুনবর্হাল, শ্রমিক-কমর্চারিদের বকেয়া সকল পাওনাদিসহ ৭ দফা দাবি গুলোকে শিঘ্রেই মেনে নিতে হবে। অন্যথায় তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ে কঠোর আন্দোলন করা ছাড়া আর কোন পথ থাকবেনা। চলতি মাসের মধ্যে তাদের এ সকল ন্যায্য দাবি মেনে না নিলে আগামী মাসেই কঠোর আন্দোলন কর্মসুচি ঘোষনা করে তা পালন করা হবে বলে জানান। প্রয়োজনে খুলনা অচল করতে তারা বাধ্য হবেন বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন।
অপরদিকে বেসরকারি পাটকল শ্রমিক-কমর্চারি পরিষদের খুলনা বিভাগের নেতা গোলাম রসুল বলেন, সাবেক ফ্যাসিস্ট সরকার শেখ হাসিনার দোসর কতিপয় সাংসদ ও তাদের পরিবারের সদস্যরা নাম মাত্র মুল্যে বা কোন কোন বেসরকারি পাটকল মালিকদের ভয়ভীতির মাধ্যমে খুলনার বেশ কয়েকটি সচল পাটকল রাতারাতি দখল করে নেয়। তারা কিছুদিন মিল গুলোকে চালু রাখে কিন্তু তাদের দখলের সময়কালে শ্রমিক-কমর্চারিদের বেতন-মজুরি পরিশোধ করেনি। হঠাৎ করে সচল পাটকল গুলোকে হাসিনার দোসররা (লে-অফ) বন্ধ করে দেয়। কিন্তু র্দীঘ ছয়-সাত বছর যাবত তাদের কোন পাওনাদি পরিশোধ করেনি। বকেয়া সকল পাওনা পরিশোধসহ দ্রুত বন্ধ মিল গুলোকে চালুর দাবিতে তারা অচিরেই কঠোর অন্দোলনে নামবে বলে হুশিয়ারি দিয়েছে।